কানসাটে ২৫০০ সরকারি আমগাছ বিক্রি হলো ৫৫ হাজার টাকায়


নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
কুজা রাজা নামে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি সরকারি আম বাগানের প্রায় ২ হাজার ৫শ গাছের আম বিক্রি করা হয়েছে মাত্র ৫৫ হাজার টাকায়। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। আজ মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুরে প্রকাশ্য ডাকের মাধ্যমে আম গাছগুলো চলতি মৌসুমের জন্য বিক্রি করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কানসাট ইউনিয়ন পরিষদের তোহসিলদার মো.নুরুল ইসলাম জানান,কানসাট রাজার বাগানের প্রায় ২৫ শ গাছের আম ফল প্রকাশ্য নিলাম ডাকের মাধ্যমে ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। সর্বচ্চ দামে বাগানটি কিনে নেন স্থানীয় আম ব্যববসায়ী আবদুল আলিম নামে এক ব্যক্তি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে,কানসাট মৌজার পার কানসাট ও মোবারকপুর ইউনিয়নের স্কীকারপুর মৌজায় প্রায় ৩২ একর ৯৮ জমি রয়েছে। সেখানে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার আম গাছ রয়েছে। এ ছাড়া পাকিস্থানী আমলেরও বেশ কিছু আম গাছ টিকে আছে এখনও।

বাগানটি পরিচর্যা ও দেখভালের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক গাছ মরে পড়ে রয়েছে। তার পরেও বাগানের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় জেলা প্রশাসক কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন নি।

বাগানটির পাহারাদার ষাটার্ধ সাইদুর রহমান জানান, ১৯৪০ সালের আগ পর্যন্ত বিশাল এই বাগানটির মালিকানা ছিল ব্রিটিশ আমলের ইংরেজ সাহেবের। দেশভাগের পর ব্রিটিশ সাহেব বাগানটি তৎকালিন কানসাট এলাকার জমিদার হিসেবে পরিচিত কুজা রাজার কাছে বিক্রি করে দেন।

বাগানটি কিছুদিন ভোগের পর কুজা রাজা তার সকল সম্পদ ছেড়ে দিয়ে ভারতে চলে যান। তিনি ভারতে চলে যাবার পর কোন মালিক না থাকায় সরকারের নিয়ন্ত্রনে চলে যায় বিশাল এই বাগান। তখন হতেই সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রন করা হয় কুজা রাজা নামে পরিচিত এই বাগান।

তার পরে ১৯৬৬ সালের দিকে বাগানটি পরিচর্যা ও দেখাশোনার দায়িত্ব পান ঢাকার হর্টিকালচার। সে সময় বাগানে অনেক ছোট ছোট আম গাছ লাগানো হয়। তারা প্রায় ৫-৬ বছর থাকার পর বাগান ছেড়ে চলে যান।

তখন হতেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে দেখা শোনা করা হত বাগানটি। তখন কোটি কোটি টাকা আয় গত সে বাগান হতে। কিন্তু জেলা প্রশাসনের সঠিক তদারকি না থাকায় ধ্বংশ হতে থাকে বাগানটি।

এর পরও ২০১৬-১৭ ও ১৮ সালের তিন বছরের জন্য প্রায় ৫৪ লাখ টাকায় বাগানটি টেন্ডার নেন পার কানসাট এলাকার সোহবুল ইসলাম নামে এক আম ব্যবসায়ী। তার পর হতেই নামে মাত্র মূল্যে বাগানটি বিক্রি করে আসছে জেলা প্রশাসন।

বাগানের পাশের বাসিন্দান্দারা অভিযোগ করে বলেন,প্রশাসনের গাফেলতির কারনে বাগানটি আজ ধ্বংশ হতে চলেছে। এক শ্রেনীর অসাধু ব্যক্তি রাতের আধারে বাগানের আম গাছ কেটে নিয়ে যায়। এ ছাড়া সময় মত বাগানটি পরিচর্জা না করায় অনেক গাছ মরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

যদি সময় এখনও বাগানটি পরিচর্জা করা হয়-তবে আগের যৌবনে ফিরে আসবে ঐতিহ্যবাহি এই কুজা রাজার বাগানটি। সরকারের আয় হবে কোটি কোটি টাকা।
তাদের দাবি-প্রশানস যদি বাগানটি আম মৌসুমের আগে নিলামে বিক্রি করে তবে বিপুল পরিমান টাকা আয় করা সম্ভব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক এজেড এম নূরুল হক বলেন,বর্তমান সময়ে আমের মূল্য না পাওয়ায় কেও বাগান লীজ নিতে চাইনি। তবে আগামী মৌসুমের আগেই লীজ দেয়ার আস্বাস দেন তিনি।

তিনি আরও বলেন কুজা রাজার বৃহত্ত বাগানটি শিগগিরই পরিদর্শন করে রক্ষনাবেক্ষনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।


শর্টলিংকঃ