Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

কাশ্মীর হামলার ফল ঘরে তুলছেন মোদি


সারাদুনিয়া ডেস্ক :

ভারতে গত কয়েক মাসে কয়েক দফা রাজনৈতিক বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার কাশ্মীরে আত্মঘাতী হামলায় একটি আধাসামরিক বাহিনীর ৪৪ জওয়ান নিহত হওয়ার ঘটনা পুরো পরিস্থিতি তার অনুকূলে নিয়ে এসেছে। এ হামলা তার জন্য সাপে বর হিসেবে দেখা দিয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

পুলওয়ামায় এ হামলার পর ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির প্রতি মানুষের সমর্থন বেড়েছে। চলতি বছরের মে মাসে ভারতের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। কাশ্মীরে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী এ হামলার পর মানুষের আবেগকে ভালোভাবেই কাজে লাগাচ্ছেন মোদি। হামলার প্রতিশোধ নিতে নিরাপত্তা বাহিনীর লাগাম ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

ইতিমধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বেড়ে চলছে। পাকিস্তানকে ধ্বংস করে দিতে এবং রক্তের বদলে রক্ত চেয়ে স্লোগান দিচ্ছেন ভারতীয়রা। পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকার করলেও সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে ইসলামাবাদ।

রাজস্থানের কসমা বনালি শহরে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন ৩২ বছর বয়সী রাকেশ কুমার। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনি নরেন্দ্র মোদির বিজেপিকে ভোট দেবেন। গত বছরের রাজ্যসভার নির্বাচনে তিনি বিরোধী দল কংগ্রেসকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। রাকেশ কুমার বলেন, মোদি যদি পাকিস্তানকে একটা শিক্ষা দিতে পারেন, তবে তার প্রতি জনসমর্থন বাড়বে। কারণ এটি দেশের নিরাপত্তার ব্যাপার। এখন তিনি আমাদের জন্য কী করেন, তা দেখার অপেক্ষায় আছি।

গত বছরের ডিসেম্বরে রাজস্থানসহ তিনটি বড় রাজ্যে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি হেরে যায়। গ্রামীণ লোকজনের উপার্জন কমে যাওয়া ও কয়েক লাখ ভারতীয় তরুণকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থায় মোদি অপারগ বলে তখন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোনো জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানবিরোধী স্রোত বিজেপির অবস্থানকে শক্তি করছে।

রাজনৈতিক কর্মী যোগেন্দ্র যাদভ বলেন, সরকার অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার মোকাবেলা করলেও কাশ্মীর হামলার কারণে মানুষের মনোযোগ আর সেদিকে নেই। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সংকট সামনে চলে আসার পর থেকে মানুষের মনোযোগ অন্যত্র নেয়ার পরিকল্পিত চেষ্টা চলছে। কখনও আগে থেকেই সাজানো ঘটনা দিয়ে মানুষকে এ সংকটের কথা ভোলানোর চেষ্টা করা হয়েছে, কখনও দুর্ঘটনাবশত মানুষ তা ভুলে গেছেন। ‘কিন্তু হামলার কারণে মানুষের দৃষ্টি এখন অর্থনীতি রেখে নিরাপত্তার দিকে গেছে। ক্ষমতাসীন বিজেপিও আসলে এমন কিছু চেয়েছিল।’

জাতীয়তাবাদী অবস্থানের প্রতি জোর দিতে বিজেপি এক মুহূর্ত সময়ও নষ্ট করেনি। রোববার এক রাজনৈতিক সভায় বিজেপিপ্রধান অমিত শাহ দ্বিদলীয় রাজনীতিকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, আগের কংগ্রেস সরকারের চেয়ে সন্ত্রাসী হামলার জবাব দিতে মোদিই উপযুক্ত ব্যক্তি। তিনি বলেন, এটি কংগ্রেস সরকার না। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে মোদি কোনো আপস করতে জানেন না। বিজেপি সরকার সন্ত্রাসবাদকে শেকড়সহ উৎখাত করবে। ‘সন্ত্রাসবাদকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে মোদির সংকল্প বিশ্বনেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।’

তবে অমিত শাহের এ মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন, হামলার বিষয়ে আমরা কোনো প্রশ্ন তুলিনি। আমি মনে করি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ‘কিন্তু আমরা এখন দেখছি- আমরা সবাই নীরবতা পালন করছি। আর তাদের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে, কেবল তারাই দেশপ্রেমিক। বাকিরা অন্যদেশ থেকে এসেছেন।’

২০১৫ সালে পাকিস্তানে এক আকস্মিক সফরের পরেও সম্পর্কোন্নয়নে ব্যর্থ হন নরেন্দ্র মোদি। এর পর প্রতিবেশী দেশটির বিরুদ্ধে পেশিশক্তি ব্যবহারের মনোভাব দেখিয়েছিলেন তিনি। এ হামলা বিজেপি রাজনৈতিক ইস্যু বানাবে কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে বিজেপির মুখপাত্র নালিন কোহলি বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেছেন। তবে অমিত শাহের মন্তব্যকে ক্ষোভ ও শোকের প্রতিফলন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি।

-খবর রয়টার্সের


Exit mobile version