কিস্তির দুশ্চিন্তায় সাধারণ মানুষ


উএনভি ডেস্ক:

করোনা পরিস্থিতির ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই অনেক স্থানে এনজিওগুলোর ঋণের কিস্তি আদায় শুরু হয়ে গেছে। তার ওপর কিস্তি আদায়ের সরকারি বিধিনিষেধ শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ জুন। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ও আয় রোজগার না হওয়ায় কিস্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে ক্ষুদ্র ঋণগ্রস্ত সাধারণ মানুষ।

সরকারি বিধিনিষেধের মধ্যেই কুড়িগ্রামের বিভিন্ন গ্রামসহ অনেক স্থান থেকে কিস্তি তোলার অভিযোগ উঠেছে। কোথাও কোথাও আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে কিস্তির টাকা পরিশোধের কথা বলে গেছেন কিস্তির মাস্টাররা (যিনি টাকা আদায় করেন)।

ফলে আয় রোজগার স্বাভাবিক না হওয়ায় কিস্তি পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় অনেকেরই ঘুম হারাম হওয়ার উপক্রম হয়েছে।কথা হয় কুড়িগ্রাম জেলা সদরের করিমের খামার ভরসা মোড়ের বাসিন্দা রহমত আলীর (ছদ্ম নাম) সঙ্গে।

তিনি বলেন, আমরাতো শুনেছি জুন মাস পর্যন্ত কিস্তি আদায় বন্ধ থাকবে। কিন্তু এ সপ্তাহেই টাকা আদায় করতে এসেছিলেন একটি এনজিও প্রতিনিধি। এ সময় অপারগতা প্রকাশ করলে আগামী সপ্তাহ থেকে নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়ে গেছেন তিনি। দেশের অন্য অনেক জেলা থেকেই এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

রহমত আলী  বলেন, স্থানীয় এনজিও এসএসএস এবং আরডিআরএসের কাছ থেকে ঋণ নেয়া ছাড়াও ইসলামী ব্যাংক থেকেও ঋণ নিয়েছি। করোনার কারণে আয় রোজগার কমে গেছে। এ অবস্থায় কিস্তি শুরু হলেও বিপাকে পড়তে হবে। কেননা এখন পেটের ভাত জোগার করাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা সদরের বেলগছা ইউনিয়নের নাছিরন বেওয়া (ছদ্ম নাম) জানান, রোববার থেকে কিস্তি নিতে এসেছেন আশা এনজিওর কর্মী, মঙ্গলবার এসেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মী, বুধবার এসেছেন ব্র্যাকের কর্মী।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান অমলেন্দু মুখার্জি  বলেন, আমাদের সর্বশেষ সার্কুলার অনুযায়ী জুন মাস পর্যন্ত ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত করা হয়েছে। তবে যদি কেউ ইচ্ছে করে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে চান সে ক্ষেত্রে কিস্তি নেয়া যাবে। কিন্তু চাপ দিয়ে কিস্তি নেয়া যাবে না। কবে নাগাদ কিস্তি নেয়া শুরু হবে সে বিষয়ে জুনের শেষ দিকে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদেশ অমান্য করলে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করা যাবে। আমরা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, ইউএনওসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সার্কুলার পাঠিয়ে দিয়েছি। তারপরও যদি আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসে আমরাও ব্যবস্থা নেব।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে- গ্রামে শাখা থাকলেও ব্যাংকগুলো এখনও মানুষের কাছাকাছি যেতে পারেনি। ফলে পল্লী অঞ্চলের মানুষের ঋণের অন্যতম উৎস হচ্ছে এনজিও। পল্লী এলাকার ঋণ গ্রহীতা পরিবারগুলোর (খানা) মধ্যে ৬৩ দশমিক ২৮ শতাংশই এনজিও থেকে ঋণ নিচ্ছে।

ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে মাত্র ২৬ শতাংশ। মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ লোক। স্বজনদের কাছ থেকে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং অন্যান্য উৎস থেকে তিন দশমিক ২৭ শতাংশ পরিবার ঋণ নিচ্ছে। মূলত ফসল আবাদ করতেই ঋণ নেয়া হয়। কৃষি ও পল্লী পরিসংখ্যান রিপোর্ট-২০১৮ বলছে, পল্লী অঞ্চলে যারা ঋণ নেন তাদের ৬২ দশমিক ১৫ শতাংশই নেন ফসল আবাদের জন্য। এছাড়া পশু পালন, বাড়ি নির্মাণ, চিকিৎসা, শিক্ষা, বিয়ে করতেও ঋণ নেয়া হয়।

কৃতজ্ঞতা- যুগান্তর


শর্টলিংকঃ