কীভাবে ব্যাবহার করবেন ফেসবুকের ‘ম্যাসেঞ্জার ফর কিডস’


ইউএনভি ডেস্ক:

ফেসবুক! এই অনলাইনের যুগে ফেসবুকের সঙ্গে পরিচিত না এমন মানুষ হয়তো পাওয়া যাবে না। আর না পাওয়া যাওয়াটিই স্বাভাবিক। ফেসবুক এমন একটি প্লাটফর্ম যা কারো কাছেই অপরিচিত না। ১৬ থেকে ৬০ সবাই ফেসবুক শব্দের সঙ্গে পরিচিত। একটা সময় ছিল যখন ফেসবুক এতটা জনপ্রিয় ছিল না, কিন্তু আজকের দিনে এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ফেসবুক আমাদের জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


ফেসবুক শুধু এখন একটি সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক না, এখন ফেসবুকের মাধ্যমে বা ফেসবুককে ঘিরে মানুষ ব্যবসায় পরিচালনা করছে ও আত্ম-কর্মসংস্থান করে তুলছে। যোগাযোগের অন্যতম জনপ্রিয়, সেরা ও সহজ মাধ্যম এখন ফেসবুক। একটি জরিপে দেখা গিয়েছে এশিয়ান মানুষরা তাদের দৈনিক সময়ের ২ ঘণ্টা ১৬ মিনিট ফেসবুক ব্যবহারে ব্যয় করে থাকেন। যার পরিধি দিন দিন বাড়ছে এবং সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আরও অনেক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

করোনা পরিস্থিতিতে ফেসবুকের ব্যবহার দিন দিন আরও বেশি বাড়ছে। এর কিছু কারণ রয়েছে তার মধ্যে প্রধান ও উল্লেখ যোগ্য কারণ হলো “লকডাউন”। করোনাকালীন সময়ে লকডাউন দিয়ে দেয়ার পর থেকে অফিস থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে অনলাইনেই। আর ফেসবুক সহজ ও সুবিধাজনক হওয়ায় মানুষের যোগাযোগও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে ফেসবুকের মাধ্যমেই।

অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের গাইড করছেন, ফেসবুক এসব শিক্ষার্থীদের অনেকেরই বয়স ১৬ এর নিচে। কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে ফেসবুক ১৬ বছরের নিচের বাচ্চাদের জন্য নয়। ১৬ বছরের নিচে বা শিশুদের জন্য ফেসবুকের আসলো একটি নতুন অপশন ও অ্যাপ যার নাম “গবংংবহমবৎ ঋড়ৎ করফং” যা আপনি প্রে-স্টোর ও অ্যাপেল স্টোরে উভয় ডিভাইসের জন্যই পেয়ে যাবেন।

এই বিষয়ে ক্রাইম রিসার্চ এন্ড অ্যানালাইসিস ফাউন্ডেশন (ক্র্যাফ)-এর সভাপতি জেনিফার আলম বলেন, আমরা এমন অনেক কেইস পাই যে ফেইক পরিচয়ধারি মানুষ বাচ্চাদের অ্যাডাল্ট ও ডিস্টার্বইং ছবি পাঠাচ্ছে আর বাচ্চারা এগুলো দেখছে ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছে, নিজেকে দোষী মনে করছে অনেক বেশি। অনেক সময় বাচ্চাদের আরও অনেকভাবে হ্যারেজমেন্টের কেইস আমরা পেয়ে থাকি।

তিনি বলেন, গার্ডিয়ান যদি “ম্যাসেঞ্জার ফর কিডস” অ্যাপটি বাচ্চাদের ব্যবহার করতে দেয় তাহলে এই ধরনের সমস্যা খুব সহজেই অ্যাভইড করা সম্ভব। আমি বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষকদের উদ্দেশে বলবো, যারা ফেসবুকে বাচ্চাদের গাইড করছেন বা অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন তারা দয়া করে রিকমেন্ড করুন এই অ্যাপটি ব্যবহার করার, এতে করে বাচ্চারা অনেকটাই সুরক্ষিত থাকতে পারবে।

যেভাবে সেটআপ করবেন

প্রথমে আপনার সন্তান বা শিশু শিক্ষার্থী যে ডিভাইসটি ব্যবহার করছে সেই ডিভাইসটিতে “গবংংবহমবৎ ঋড়ৎ করফং” ডাউনলোড করে নিবেন, অ্যাপ্লিকেশনটি ওপেন করে নেক্সটে প্রেস করুন, তারপর প্যারেন্টস বা গার্ডিয়ান হিসাবে কনফার্ম করুন ও আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি (ইমেইল বা নম্বর) দিয়ে কন্টিনিউ করুন পরবর্তী পেইজে পাসওয়ার্ড দিয়ে অথরাইজড ডিভাইসে ক্লিক করুন ও সেইভ করে দিন।

এরপর আপনার সন্তান বা চাইল্ড ইউজার তার নাম দিয়ে কন্টিনিউ করুন ও জন্ম তারিখ সিলেক্ট করে কন্টিনিউ দিন। তারপর ক্রিয়েট অ্যাকাউন্টে ক্লিক করুন, তৈরি হয়ে গেলো কিডস অ্যাকাউন্ট। এরপরের প্রসেসে আপনি সিলেক্ট করতে পারবেন আপনার সন্তান কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। এরপরের দুটি প্রসেস আসবে সেগুলো অষষড়ি করে দিবেন ও পরবর্তীতে টার্ন অন কোড অষষড়ি করে দিবেন ও কন্টিনিউ দিবেন।

তারপর সার্চ ফর প্যারেন্ট-এ গিয়ে প্যারেন্ট অ্যাকাউন্ট সিলেক্ট করে দিবেন, পরবর্তী স্টেপ গুলো ডব অমৎবব দিবেন ও অষষড়ি অপপবংং দিবেন। এরপর ডিভাইস অ্যাক্সেস অষষড়ি দিয়ে চাইলে আপনার বাচ্চার ছবি দিতে পারেন, তারপর নেক্সট দিলেই আপনার চিলড্রেন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে যাবে।

এটা নিয়ে ক্রাইম রিসার্চ এন্ড অ্যানালাইসিস ফাউন্ডেশন (ক্র্যাফ)-এর আইটি অ্যানালিস্ট রাইয়ান মালিক বলেন, “ম্যাসেঞ্জার ফর কিডস” সত্যি খুবি অসাধারণ একটি উদ্যোগ। ফেসবুকের যদিও দুই বছর আগে থেকেই ছিল কিন্তু এখন সব দেশের মানুষের জন্যে উন্মুক্ত। এতে যে অ্যালগোরিদম ব্যবহৃত হয়েছে তা দিয়ে ফেসবুক ব্যবহারকারী বাচ্চাদের অ্যাডাল্ট কনটেন্ট, অ্যাড ও ভায়ওলেন্ট কনটেন্ট থেকে দূরে রাখবে ও নিরাপদে ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করার নিশ্চয়তা দিবে গার্ডিয়ানদের।

এটা যাদের ঘরে বাচ্চারা এই করোনার সময় অনলাইনে ক্লাস করছে বা স্কুলের গাইডলাইন নিচ্ছে ফেসবুকের মাধ্যমে, তাদের জন্য নিঃসন্দেহে খুবই উপকারি একটি অ্যাপ। আমি গার্ডিয়ানদের উদ্দেশে বলবো, তারা যাতে তাদের বাচ্চাদের “ম্যাসেঞ্জার ফর কিডস” ব্যবহার করতে দেয়, বড়দের ম্যাসেঞ্জার না দিয়ে।

মেসেঞ্জার ফর কিডস-এর মাধ্যমে আপনি যেসব সুবিধা পাবেন

১। কিডস অ্যাকাউন্টের ওপর প্যারেন্টের ফুল কন্ট্রোল
২। আপনার সন্তান ফেসবুকে কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে বা কথা বলতে পারবে তা নির্ধারণ করে দিতে পারবেন
৩। ম্যাসেঞ্জারে কাউকে অ্যাড করতে হলে প্যারেন্টস অ্যাকাউন্টের পারমিশন লাগবে
৪। আপনার সন্তান কার সঙ্গে চ্যাট করছে, কি ছবি বা ভিডিও আদান-প্রদান করছে সব নোটিফিকেশন পাবেন প্যারেন্টস অ্যাকাউন্টে
৫। কিডস অ্যাকাউন্টে কে কল দিচ্ছে, কাকে কল দেওয়া হচ্ছে প্যারেন্টস অ্যাকাউন্টে নোটিফিকেশন যাবে
৬। এই অ্যাকাউন্টের তৈরির জন্য বাচ্চাদের কোন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও ফোন নম্বরের প্রয়োজন নেই
৭। একটি বিশেষ সুবিধা হলো কোন ম্যাসেজ বা কনভারসেশন হাইড করা যায় না, এতে করে খুব সহজেই প্যারেন্টরা মনিটর করতে পারবে কিডস কনভারসেশন অ্যাক্টিভিটি
৮। এতে কোন ধরনের অ্যাড শো করবে না, এতে করে বাচ্চার ব্যবহৃত অ্যাপে অ্যাডাল্ট কোন অ্যাড আসবে না
৯। ম্যাসেঞ্জার ফর কিডস-এর সকল ফিচার কিডস ফ্রেন্ডলি, সুতরাং এখানে অ্যাডাল্ট কনটেন্ট আসার চিন্তায় থাকবে না
১০। কিডস ইউজাররা যদি কোন কনটেন্ট, ম্যাসেজ বা কোন কিছুতে রিপোর্ট করে তাহলে অভিভাবকদের অ্যাকাউন্টে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।


শর্টলিংকঃ