ক্যাম্পাসের বৃষ্টি মানেই রোমান্টিকতা


সুব্রত গাইন, রাবি:
চারদিকে ঝুমঝুম বৃষ্টির শব্দ। কংক্রিটের শহরের রাস্তাঘাট পর্যন্ত নিশ্চুপ। সাড়া নেই কোনো জায়গায়। পাখিদের কলকাকলি হারিয়ে গেছে দূর সীমান্তে। সবুজ গাছের পাতা চুয়ে চুয়ে পড়ছে বৃষ্টির ফোটা। পুকুরের ঠিকরে পড়ছে জলের স্রোত। মনের ভিতর সুপ্ত বাসনা নিয়ে জানালা দিয়ে দেখছে বৃষ্টির অবিরাম জলপ্রপাত। কেউ কেউ বে-সুরে গলায় গানও ধরছে। কেউবা খোশ গল্প করছে বন্ধ-বান্ধব কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকার সাথে। এ যেনো এক ফালি শরৎতের বৃষ্টি। মনে পড়ে যায় মহাদেব সাহার ‘কোথা সে প্রেম, কোথা সে বিদ্রোহ’ কবিতার চরণ-

‘কলহের কোনো কাজ নেই, কিছু করুণার গান করি।
বিদ্যার কথা থাক, প্রেমের কবিতা পড়ি।
চারদিকে এই জলধারা তবু সৃষ্টির দ্বীপ গড়ি।’

ক্যাম্পাসে বৃষ্টির দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন আরও বেশি আপন মনে হয়। একঘেয়েমি ক্লাসের ফাকে বৃষ্টি আসে এক ধরণের আর্শীবাদ হয়ে। বৃষ্টি তখন হয়ে উঠে মনের খোড়াক মেটানোর উপলক্ষ্য। তেমনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বর, প্যারিস রোড, টুকিটাকি, পরিবহন মার্কেট, আমতলা, ইবলিশ চত্বর, বধ্যভূমি, স্টেশন বাজার বৃষ্টি তৈরি করে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলা ভূমি।

হলগুলোর পুকুরের বৃষ্টি ক্ষণিক সময়ে মনে হয় যেনো নদীর কূলধ্বনি। আবার ক্ষণিক সময়ে মনে হয় মরা পাতার মরমর শব্দ। ক্যাম্পাসে জীবনে বৃষ্টি আসে সবচেয়ে বেশি রোমান্টিকতা নিয়ে। প্রেমিক-প্রেমিকা ভেজা হাত ধরে একে অপরের গল্প হয়ে যেতে চায়। বৃষ্টির শব্দ আর বাতাসের বয়ে চলা তৈরি করে মায়ার মোহ। এমন দিনে সত্যিই কারো নিবিড় সানিধ্য চায়। হারিয়ে যেতে মন চায় আপনজনের বাহুডরে। বর্ষণমুখর এমন দিনে কেউ গিটারের সুর তুলে আবার কেউ শরীরকে ভিজিয়ে করতে চায় বৃষ্টি বিলাশ।

ক্যাম্পাসে বৃষ্টির আগমন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোল্ল্যা মোহম্মদ সাঈদ বলেন, বৃষ্টি কার না ভাল লাগে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই বৃষ্টি ভালবাসে। ভালবাসে একটু ঝুম বৃষ্টিতে নিজের দেহকে ভিজিয়ে নিতে। আর ক্যাম্পাস জীবনে বৃষ্টি মানে একধরণের রোমান্টিকতা। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, গান আর হলে নিজেদের রান্না করা ভুনা খিচুরি খাওয়া। আবার বৃষ্টি ভেজা মাঠে ফুটবল খেলে কাদার ভিতরে গড়াগড়ি খেয়ে শৈশবে ফিরে যাওয়া। বৃষ্টি মানেই এক অনাবিল আনন্দ।

বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। বর্ষাকাল পার হয়ে শরৎ চলে এসেছে অনেক আগেই। তারপরও চলছে অবিরাম বৃষ্টিধারা। যার জন্য অসময়ের বৃষ্টি সবার কাছে হয়ে উঠেছে উপভোগ্য। তাই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা চায়- বৃষ্টি আসুক, বৃষ্টি নামুক। বৃষ্টিতে ধুয়ে যাক পৃথিবীর সকল জরাজীর্নতা।

 


শর্টলিংকঃ