ক্ষোভ থেকে হামলা অংশ নেয় একজন


ইউএনভি ডেস্ক:

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলা ক্ষোভ থেকে হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। ওই হামলায় সরাসরি একজন অংশ নেয়।

হামলায় ইউএনও বাসভবন কম্পাউন্ডের এক কর্মচারী সহযোগী ছিল বলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আভাস মিলেছে। অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশের কেউই মুখ খোলেনি। এদিকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে ঘোড়াঘাট থানার ওসি আমিরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

দিনাজপুর জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, হামলায় জড়িত সন্দেহভাজনকে এরই মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারেরও চেষ্টা চলছে। হামলাকারী হিসেবে যাকে সন্দেহ করা হচ্ছে, ইউএনওর বাসায় তার যাতায়াত ছিল বলে তথ্য মিলেছে। ঘটনার সময় হামলাকারীর পরনের প্যান্ট গোটানো ছিল। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সব তথ্যের সমন্বয়ে মোটামুটি তারা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছেন। দ্রুতই হামলার কারণ, হামলাকারী ও তার সহযোগী কারা- সেই বিষয়গুলো খোলাসা করা যাবে।

২ সেপ্টেম্বর রাতে ইউএনওর সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলী শেখের ওপর নৃশংস হামলা চালানো হয়। ইউএনও ঢাকায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন। ওই হামলার ঘটনায় ইউএনওর ভাই শেখ ফরিদ বাদী হয়ে ঘোড়াঘাট থানায় মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে দিনাজপুর জেলা ডিবি তদন্ত করছে। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও র‌্যাব তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দিনাজপুর জেলা ডিবির পরিদর্শক ইমাম জাফর সমকালকে জানান, আসামিদের সবার রিমান্ড এখনও শেষ হয়নি। তাদের রিমান্ডে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এর বাইরে তদন্তেও অনেক তথ্য মিলেছে। এসব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।

ওই ঘটনায় র‌্যাব ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের সদস্য (বহিস্কৃত) আশাদুল ইসলাম, রংমিস্ত্রি নবীরুল ইসলাম ও সান্টু কুমারকে গ্রেপ্তার করে। এরপর আশাদুলকে উদ্ৃব্দত করে র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, চুরি করতে গিয়ে ইউএনওর ওপর হামলা চালানো হয়। যদিও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা আসামির ওই কথা উড়িয়ে দেন। চুরির জন্য হামলার বিষয়টি বিশ্বাস না করে তারা ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি জানিয়ে আসছেন।

গত দু’দিন দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সন্দেহ করছেন ইউএনওর ওপর হামলার নেপথ্যে ভিন্ন কারণ থাকতে পারে। বাসভবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো নথি সরিয়ে নেওয়া বা তাকে ভয় দেখাতে এই হামলা হতে পারে।

তদন্ত সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, হামলার জন্য ইউএনওর বাসভবনে ঢোকার সময় মই ও চেয়ার ব্যবহার করা হয়েছে। হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে হাতুড়ি ও লাঠি। পাশাপাশি হামলাকারীর কাছে ছুরি জাতীয় কিছু ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। উপজেলার একজন কর্মচারীর ভূমিকা নিয়েও কিছু তথ্য মিলেছে। ওই কর্মচারীর কথা অসংলগ্ন মনে হয়েছে। এমনকি ঘটনার দিন তার দায়িত্বে বেশ কিছু ত্রুটি ও ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার মতো কিছু তথ্য মিলেছে।

দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম সমকালকে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার সরকারি বাসায় প্রবেশ করে হামলা করার সাহস দেখিয়েছে- এটা তো ছেড়ে দেওয়ার মতো বিষয় নয়। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিজে তদারকি করছেন, তাই যে কোনো কর্মকর্তা বা আরও কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারীকে খুঁজে বের করতে পুলিশ কাজ করছে। তারাও নানাভাবে তদন্তকারীদের সহায়তা করছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ইউএনওর বাসা থেকে কিছু খোয়া যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।

ঘোড়াঘাট থানার ওসি প্রত্যাহার :ঘোড়াঘাট থানার ওসি আমিরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে দিনাজপুর পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। ওই থানায় রংপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিম উদ্দিনকে ওসি হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, ঘোড়াঘাটের ওসিকে প্রত্যাহার করে ওই থানায় নতুন ওসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনায় নিবিড় তদন্ত চলছে। সবকিছু উদ্‌ঘাটন করে হামলার নেপথ্য কারণের বিষয়ে জানানো হবে।

জানা গেছে, ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ওপর হামলার রাতে ওই এলাকায় পুলিশের টহল ছিল না। ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা এবং ওই রাতে পুলিশের টহল না থাকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শুধু তাই নয়, একই জেলার নবাবগঞ্জ থানায় আমিরুল ইসলাম ওসির দায়িত্ব পালনকালেও সেখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ওপরও হামলা হয়েছিল।

গ্রেপ্তার দুই আসামি কারাগারে :গ্রেপ্তার তিন আসামির মধ্যে নবীরুল ইসলাম ও সান্টু কুমারকে সাত দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

দিনাজপুর আদালত পুলিশ পরিদর্শক ইসরাইল হোসেন বলেন, ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে হত্যাচেষ্টার আসামি সান্টু কুমার ও নবীরুল ইসলামকে রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। নতুন করে রিমান্ডের আবেদন না থাকায় আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠানোর আবেদন করেছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পরিদর্শক ইমাম জাফর জানিয়েছেন, মামলার অন্যতম আসামি আশাদুল ইসলাম এখনও রিমান্ডে রয়েছে। আজ শনিবার তার রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হবে। তাকে নতুন করে রিমান্ডে নেওয়া হবে কিনা, তা নিশ্চিত করতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তা।


শর্টলিংকঃ