‘কড়াকড়ি’র পরও কমেনি মনোনয়নপ্রত্যাশী


ইউএনভি ডেস্ক:

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীর ছড়াছড়ি পড়ে গেছে। দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রিতে ‘কড়াকড়ির’ পরও এবার প্রতিটি পৌরসভায় গড়ে চারজনের বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী দলীয় ফরম কিনেছেন। এর বাইরেও বেশ কয়েকটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের এক বা একাধিক নেতা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ ‘বিদ্রোহী’ হলেও শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।


এদিকে আজ বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দলীয় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জনপ্রিয়, গ্রহণযোগ্যদের প্রাধান্য দেয়া হবে। পাশাপাশি মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে কেউ বিদ্রোহী হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, আমরা জনপ্রিয়, গ্রহণযোগ্য এবং দলের জন্য নিবেদিত ও ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেব।

প্রতিটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন করে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন, সেক্ষেত্রে একক প্রার্থী করা কঠিন হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন করে মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন এটা ঠিক। তবে আমরা যোগ্য প্রার্থীকেই দলীয় মনোনয়ন দেব এবং তার পক্ষেই সবাইকে কাজ করতে হবে। তবে হ্যাঁ, ২৫টির মধ্যে হয়তো দু-চারটাতে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া আছে।

একই বিষয়ে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের জন্য একটা বার্তা যাচ্ছে। দলের নিয়ম যারা মানবেন না তারা কেউই পার পাবেন না। প্রত্যেককে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের মধ্যে পড়তে হবে, এ মেসেজটা আমরা দিয়ে যাচ্ছি, জেলা পর্যায়েও পরিবর্তন আনা হয়েছে একই কারণে।

আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান শুক্রবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে জানান, শেষ সময় পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১০৬টি দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার সকাল থেকে দলীয় সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে ফরম বিক্রি শুরু করে আওয়ামী লীগ। প্রথম দিনে কোনো ফরম বিক্রি না হলেও পরের দুই দিন বুধবার ও বৃহস্পতিবার ৩৩টি ফরম বিক্রি করে দলটি। আর শুক্রবার শেষ দিনে বিক্রি করে ৭২টি ফরম। সব মিলিয়ে চার দিনে ২৫ পৌরসভার বিপরীতে ১০৬ জন দলীয় মনোনয়নের আশায় ফরম কিনেছেন। অর্থাৎ প্রতিটি পৌরসভার বিপরীতে গড়ে চারজনের অধিক নেতা দলীয় ফরম কিনেছেন।

সূত্র জানায়, এবার দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রিতে কিছুটা ‘কড়াকড়ি’ ছিল আওয়ামী লীগে। সংশ্লিষ্ট জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত রেজুলেশনে প্রস্তাবিত প্রার্থীর বাইরে অন্য কারও কাছে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেনি দলটি। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি পৌরসভায় তিনজন বা তার অধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর নামের তালিকা তৃণমূল থেকে রেজুলেশন আকারে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। নির্দেশনা মেনে কেন্দ্রে পাঠানো প্রায় প্রতিটি পৌরসভার তালিকায় চার বা তার অধিক প্রার্থীর নাম ছিল। সেই তালিকা দেখেই ফরম বিক্রি করা হয়েছে।

জানা গেছে, রেজুলেশনে প্রস্তাবিত প্রার্থীর বাইরেও অনেক পৌরসভায় আওয়ামী লীগের আরও দু-একজন করে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। রেজুলেশনে নাম না থাকার পরও অনেকে নিজেদের প্রার্থিতার কথা জানিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন না পেলে তাদের অনেকেরই বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে। কেউ কেউ ইতোমধ্যে সেই ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন।

পাবনার চাটমোহর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন সাতজন। তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন সাখো, গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মির্জা রেজাউল করিম দুলাল, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য হেলাল উদ্দিন, প্যালেন মেয়র নাজিম উদ্দিন মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব এলাহী বিষু, অ্যাডভোকেট ইতি হোসেন স্বপ্না এবং অ্যাডভোকেট সাইদুল ইসলাম। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে সাতজনের নামই রেজুলেশনের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে এবং তারা সবাই দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তাদের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকার ঘোষণাও দিয়েছেন কেউ কেউ। আবার কেউ ড্যামি প্রার্থী হিসেবেও মাঠে রয়েছেন।

একই অবস্থা সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরেও। সেখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী আটজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- বর্তমান মেয়র হালিমুল হক নিরু, যুবলীগ নেতা রাজিব শেখ, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুর রহিম, আওয়ামী লীগ নেতা তরুলদি, আবদুল সালাম ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ আবদুল ওয়াহেদ কাজল। তারা সবাই নির্বাচনী মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে বরগুনার বেতাগী পৌরসভায় তৃণমূল থেকে তিনজনের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র এবিএম গোলাম কবির, জেলা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নাহিদ মাহমুদ হোসেন লিটু, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাদিসুর রহমান পান্না। তারা তিনজনই দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

আবার কোনো কোনো পৌরসভায় তৃণমূল থেকে পাঠানো রেজুলেশনে একক প্রার্থীর নামও দেয়া হয়েছে। যেমন- নেত্রকোনোর মদন পৌরসভায় একক প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র আবদুল হান্নান তালুকদারের নাম পাঠানো হয়েছে।

মনোনয়ন বোর্ডের সভা আজ : আজ স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভা ডেকেছে আওয়ামী লীগ। বিকাল সাড়ে ৩টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার বিকালে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন পাবনার চাটমোহর প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর প্রতিনিধি, বরগুনার বেতাগী প্রতিনিধি এবং নেত্রকোনোর মদন প্রতিনিধি।


শর্টলিংকঃ