খনন করে মাটি ফেলা হচ্ছে নদীতেই!


মাহবুব হোসেন, নাটোর:
নদী খনন করার কথা ছিল ১২০ফিট, খনন হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ ফিট। আবার খননের মাটি ফেলা হচ্ছে নদীতে। এতে করে টাকা অপচয়ের পাশাপাশি কমে আসছে নদীর আয়তন। এভাবেই খনন হচ্ছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার আত্রাই এবং গুমনী নদী। ফলে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সেই সঙ্গে নদী খননের নামে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

নদী খননের সুফলের পরিবর্তে আগামী বর্ষা মৌসুমে দুভোর্গের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য বিষয়টি জানান পর কাজ বন্ধ করে দিলেও আবারো আগের মতো করেই খনন কাজ করেছে সংশ্লিষ্টরা। এতে করে ক্ষোভ বাড়ছে এলাকাবাসীদের মধ্যে।

তবে প্রকল্প গ্রহণে ভুল থাকার কথা স্বীকার করে নদী খননের মাটি সম্পূর্ণ সরিয়ে ফেলা হবে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক সাইদুর রহমান জানান, নদীর ভিতরের মাটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে প্রকল্প পরিচালকের এই কথা বিশ্বাস করেনি স্থানীয়রা। যদি এ মাটি সরানো না হয়, তখন এর দায়ভার কে নেবে এমন প্রশ্ন রেখেছেন এলাকাবাসীরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় ৩০০ ফিটের নদীর মাঝখানে ৩০-৪০ শতাংশ জায়গা খনন করা হচ্ছে। এতে নদী কেটে নালা তৈরি হচ্ছে। আর দুই পাশ সংকুচিত হয়ে নদীর প্রশস্ততা কমে যাচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস খননস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে সম্প্রতি কাজ বন্ধ করে দেন। পরে বিআইডব্লিউটিএর সচিবসহ অন্যন্যরা সংসদ সদস্যকে ফোন করে সঠিক ভাবে কাজ করার আশ্বাস্ত করলে পরে কাজ শুরু করে। তবে সরেজমিনে আগের মতো করেই নদী খননের কাজ দেখা গেছে।

 

জানা যায়, দেশের অভ্যন্তরীন নৌ-পথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং (প্রথম পর্যায়) ২৪টি নৌ-পথের নাব্যতার ফিরিয়ে আনতে ৪২ কোটি ৪৭লাখ ৫০হাজার টাকার একটি প্রকল্প গ্রহন করে বিআইডাব্লিউটিএ। এই প্রকল্পের আওতায় পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার এরশাদনগর থেকে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার যোগেন্দ্রনগর রাবার ড্যাম পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আত্রাই ও গুমানী নদীর খননকাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর প্রতিষ্ঠান ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড। পরে ওয়েস্টার্ন ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খনন কাজটি সাব কন্টাকে নেয়। বর্তমানের সাবকন্টাকেই নদী খনন কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

উপজেলা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আতাহার হোসেন বলেন, বিআইডাব্লিইটিএ বিভাগ যেভাবে নদী ড্রেজিং করে বালু বা মাটি পাড়ের ওপরে ফেলে দেয়, সেভাবে এখানে নদী খনন হচ্ছে না। মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নদীতেই ফেলা হয়। এতে কিছুদিন পরই নদী ভরাট হয়ে যায়। কাজেই এভাবে সরকারি টাকা নষ্ট করে নদী খনন করার চেয়ে না করাই ভালো।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি মনির হোসেন বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমার দপ্তরের প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী সহ সরেজমিনে নদী খনন দেখে এসেছি। তাঁরা যে ভাবে নদী খনন করছে, অনেকটা নদী কেটে খালে কুমির আনার মতো। খননের মাটি নদীতে না রেখে অন্যত্র সরিয়ে না নেওয়া হলে এই খননের কোন সুফল আসবেনা।

তিনি আরও বলেন, সিডিউলে ১২০ফিট প্রশস্ত এবং ১৪ফিট গভীর করার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তার একটি নিয়মও মানেনি। তাদের ইচ্ছামত তারা নদী খনন করছে। তাছাড়া নদী খননের আগে তারা নদীর সীমানাও নির্ধারন করেনি। যার কারনে সরকারী টাকা অপচয় ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের একাংশের সাইড ম্যানেজার মফিজুল ইসলাম বলেন, দরপত্রে উল্লেখ আছে ৮০-৮২ ফিট প্রস্থে গভীরতা ১০-১২ ফিট এবং খননের জায়গা থেকে ৩৮-৪০ ফিট দূরত্বে মাটি ফেলার নির্দেশ রয়েছে। সেই মোতাবেক কাজ চলছে।

এবিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, নদী খননের কোনো মাটি নদীর মধ্যে থাকবে না। সব সরিয়ে নেয়া হবে। এতে নদী প্রশস্ত হবে এবং গভীরতাও বাড়বে।


শর্টলিংকঃ