খবর পেয়ে ঈদ সামগ্রী নিয়ে বাড়িতে হাজির ভাইস চেয়ারম্যান


বাগমারা প্রতিনিধি:

ঈদের সেমাই-লাচ্ছা কিনতে পারেনি তারা। তাই ডাল-ভাতই তাদের ঈদের দিনের খাবার। ঈদের আগের দিন রোববার এমন কথাই জানিয়েছে অনাথ দুই-ভাইবোন। এই দুজন হলো রাজশাহীর বাগমারার গণিপুর ইউনিয়নের বুজরুককোলা গ্রামের রায়হান হোসেন (১৫) এবং আরিফা খাতুন (১৩)। ঈদের আনন্দ বঞ্চিত মা-বাবাহীন এই দুই শিশু-কিশোর।

পত্রিকায় এমন খবর দেখার পর ঈদের দিন (২৫মে সোমবার) সন্ধ্যায় লাচ্ছা, সেমাই, চিনি, চাল, তেল সহ নগদ টাকা নিয়ে তাদের বাড়িতে ছুটে গেলেন বাগমারা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ। এ সময় তাঁর সাথে আ’লীগ ও অংগ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অর্থ কিংবা খাবার সংকটে অসহায় ভাই-বোনের ঈদ আনন্দ মাটি  হয়ে যেতে পারে না।

তাদের পিতা-মাতা নেই তাই বলে তারাকি আর দশটা সচ্ছল মানুষের মতো ঈদের আনন্দ করতে পারবেনা। তাদেরও অধিকার আছে। আমরাই পারি সমাজটাকে বদলে দিতে। কেন তারা ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে। আমাদের সন্তান মনে করে একটু তাদের পাশে দাঁড়ায়। তাহলে তারাও আনন্দের সাথে দুঃখ ভুলে ঈদ করতে পারবে। ঈদ সামগ্রী প্রদান শেষে এমন কথা বলেন, আসাদুজ্জামান আসাদ।

উপজেলার বুজরুককোলা গ্রামের মরহুম আবদুল আলীর সন্তান তারা। সাত বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা রেহেনা বেগমের আশ্রয়ে ছিল তারা। স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারতেন না রেহেনা বেগম। এরপর এখান-ওখান থেকে কিছু সংগ্রহ করে সন্তানদের দেখাশোনা করে আসছিলেন। বাবার অভাব খুব একটা বুঝতে দেননি তাদের। দেড় বছর আগে তিনিও মারা যান। সেই থেকে একাবারে এতিম হয়ে পড়ে রায়হান হোসেন ও আরিফা খাতুন।

শুরু হয় ভাই-বোনের জীবন সংগ্রাম। বাবার রেখে যাওয়া আধভাঙা ভ্যানের প্যাডেল কিছুদিন ঘুরালেও তা বেশি দিন পারেনি রায়হান। পরে পেশা পরিবর্তন করে শিশু বয়সে অন্যের পানবরজে কাজ করে নিজেরা চলত। এত কষ্টের মধ্যে চোখ ভরা স্বপ্ন তাদের। লেখাপড়া শিখে প্রতিষ্ঠিত হবে। এ জন্য শত কষ্ট করেও চালিয়ে যাচ্ছে লেখাপড়া। আরিফা খাতুন মচমইল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম এবং রায়হান হোসেন হাটগাঙ্গোপাড়া টেকনিক্যাল স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) শরিফ আহম্মেদের কাছে এসেছিল কিছু চাল-ডাল নেওয়ার জন্য। করোনাভাইরাস থেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ছাড়াও চাল, ডাল ও কিছু নগদ টাকা দিয়েছেন ইউএনও। তা দিয়েই এবারের ঈদ করবে রায়হান ও আরিফা।

তাদের ভাষ্য, নতুন পোশাক বা ভালো খাবার কিনতে পারেনি। এটা সম্ভবও নয়। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা তাদের ছাতা হিসেবে ছিলেন। মা মারা যাওয়ার পর থেকে অনাথ হয়ে গেছে তারা। রায়হান হোসেন বলে, অনাথ হওয়ার পর থেকে অনেক কষ্ট করে খেয়ে-না খেয়ে বেঁচে আছে দুই ভাইবোন। এলাকার লোকজনের পানবরজে কাজ করে সে সামান্য মজুরি পায়। আর তার বোন প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে যে ভাতা পায় তা দিয়ে চলে যায় কোনোমতে।

আরিফা খাতুন বলে, ‘ভাইয়ের আয় ছাড়াও স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন ম্যাডাম মাঝে মধ্যে সহায়তা করেন। পোশাক ও খাতা কলম কেনার জন্য টাকা দেন। এ ছাড়া মায়ের রেখা যাওয়া ছাগল বাড়িতে পালন করি। প্রতিদিন রান্না শেষ করে বিদ্যালয়ে যাই। ফিরে এসে রান্নাসহ সংসারের কাজ করতে হয়। এভাবে দেড় বছর ধরে চলছে আমাদের জীবন।

‘ কান্নাজড়িত কণ্ঠে সে বলে, মাঝে মধ্যেই অনাহারে থাকতে হয় তাদের। আরিফা জানায়, চোখে সমস্যার কারণে ঠিকমতো সে দেখতে পারে না। তবে সেটা মানিয়ে নিয়েই কষ্টে দিন কেটে যাচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ বলেন, প্রায় দুই মাস আগে ওই দুই ভাইবোনের জীবন সংগ্রাম ও দুর্ভোগের চিত্র দেখেছেন। মাঝে মধ্যে ডেকে তাদের সহায়তা করেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর দুর্যোগ সহনীয় প্রকল্প থেকে তাদের বাড়ি করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।


শর্টলিংকঃ