গানে গানে নর্থ-সাউথ মাতাচ্ছে দিনার একতারা


ইউএনভি ডেস্ক:

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মানেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে কেতাদুরস্থ পোশাক আর হিপহপ গানের ছেলেমেয়েদের চলাফেরা। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ-সাউথে পড়েও জীবনের গান, ফোকগান আর লোকগীতি নিয়ে পড়ে আছেন শেখ দিনা আর তার দল একতারা।


বলতে গেলে গানে গানে নর্থ-সাউথ মাতাচ্ছেন চট্টগ্রামের এই মেয়ে। শেখ দিনার ছোটবেলা কেটেছে চট্টগ্রামে। ব্যবসায়ী বাবা শেখ আহমেদের একমাত্র মেয়ে দিনা চট্টগ্রাম থেকে এইচএসসি পাশের পর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি বিবিএ (মার্কেটিং) বিভাগে শেষ বর্ষে পড়াশোনা করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি লোকগীতি পরিবেশন করে বসন্ত, বৈশাখের মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আলোড়ন সৃষ্টি করতে থাকেন শেখ দিনা।

দিনার অবসর কাটে গান আর বন্ধুদের সঙ্গে গানের আড্ডায়। এভাবেই একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণী নিয়ে গড়ে তোলেন একতারা ব্যান্ড।একতারার ‘আসাম যাবো’এবং ‘দিলো না দিলো না’গান দুটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। একাতারার ব্যাপক জনপ্রিয়তা বেড়েছে দুই বাংলায়।

একতারা শুরুর গল্প জানতে চাইলে দিনা বলেন, গল্পটা বলতে গেলে একটু পেছনে ফিরে তাকাতে হয়। তখন আমরা কেউই কাউকে চিনতাম না। সবাই গানের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও এক একজন, এক-এক জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আড্ডায় হঠাৎ পরিচয় হয়ে যায় তন্বীর সঙ্গে। দুজনের অনুশীলন চলতে থাকে একসঙ্গে, কণ্ঠে সুরের পাশাপাশি কখনও একতারাও উঠে আসে আমার হাতে। অন্যদিকে তন্বীর আঙ্গুলে ডুবকি বাজে সোঁদা মাটির বোলে।

দিনা বলেন, একদিন আমার কাছের একজন বন্ধু দিপু আবদার করে বসল, বন্ধু, তুই তো খুব ভাল গান গাইতে জানিস, সুন্দর করে একটা গান করে দে না, আমার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য। বন্ধুর আবদার সেদিন ফেলিনি, সায় দিলাম। আমি গাইবো আর তন্বী বাজাবে ডুবকি। এরপর অন্য বাদযন্ত্র বাজানোর জন্য খুঁজে পেলাম বংশী নামের একজনকে। সে একটা সময় বাঁশী বাজাতো। এখন মন মজেছে দোতারায়।

তিনি এলন, দিপুর উদ্যোগেই সেদিন বংশীর সঙ্গে আমার আর তন্বীর পরিচয় হয়। এরপর ক্যাম্পাসের আনাচে কানাচে আমার অনুশীলন চলতেই থাকে। এর কিছু দিন পর আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয় আজমাঈন মাহতাব ও জাঈম আমান। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের পারদর্শিতায় সুরেলা কণ্ঠের পাশাপাশি মাহতাবের বাঁশীও বেজে ওঠে সমান তালে, জাঈমও প্রতিভাবান। এভাবে গানের প্রতি সবার ভালবাসা থেকে জন্ম নেয় একতারা।

দলের নাম একতারা কেন হলো এমন প্রশ্নে দিনা বলেন, নামের পেছনের গল্পটাও খুব সুন্দর। যখন এই দলের জন্ম হয়নি, তখন আমার গানে ডুবকির তাল দিত তন্বী। গান গাইতে গিয়ে অনেক সময় হাতে তুলে নিয়েছি একতারা। মাথায় ঘুড়তে থাকে আনাড়ি কিছু লাইন, আমরা একতারা, একই সুরে বাঁধা সুরের বাঁধনে, কেউ না জানুক কেউ না বুঝুক, আমার দয়াল জানে। আমরা চারজন আলাদা আলাদা মানুষ হলেও গানে যখন ডুবে যাই তখন আমরা একাকার হয়ে যাই, যেন অদৃশ্য কোনো এক বাঁধনে কেউ বেঁধে রাখেন আমাদের। সেই ভালবাসা আর বিশ্বাসের জায়গা থেকেই আমাদের দলের নাম একতারা, আমরা একতারা।

আপনারা ফোক গানকেই কেন বেছে নিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ দিনা বলেন, লোকসংগীতের মধ্যে সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক যে ব্যাপারটি রয়েছে সেটি হচ্ছে তার সুর। লোকসংগীতের সুরগুলো হয় খুব সহজ-সাবলীল, সুন্দর কিন্তু অনেক গভীর। যেই গভীরতায় খুঁজে পাওয়া যায় খাঁটি মানুষ হবার পরশমণি। আর সেই উৎকর্ষতাকে যেন আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায় গানের কথাগুলো, আহা কি মধুমাখা সে কথা, কত ব্যাথায় ভরা সে গাথা।

তিনি বলেন, চটুল প্রেম থেকে শুরু করে গভীর জীবনদর্শন এমনকি আধ্যাত্মিক তত্ত্বেরও সন্ধান পাওয়া যায় এই লোকগানে। এই বিষয়বস্তুগুলোই আমাদের সবচেয়ে বেশি টানে,সে কারনেই হয়ত অন্যান্য গান কম-বেশি শোনা হলেও দিন শেষে এই লোকগানেই সুখ খুঁজে পাই।

আগামীর পরিকল্পনা সম্পর্কে দিনা বলেন,আসল কথা হচ্ছে, লোকগানের যে বিশেষ ভাবধারা থাকে তাকে তুলে ধরা। গান চারপাশে অনেক হচ্ছে কিন্তু কোথাও একটা গিয়ে আটকে যাচ্ছে, ঠিক মন পর্যন্ত পৌঁছতে পারছে না। আমরা বলছি না আমরা সেই গুরুদায়িত্বই পালন করতে এসেছি। না, জ্ঞানে-গুণে-অভিজ্ঞতায় অতি সামান্য আমরা, বরং বলতে পারি ভাল কিছুর জন্য এক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় আছি। আমরা লোকগানের আসল ভাবধারার একটা অংশও যদি আমাদের শ্রোতা বন্ধুদের কাছে পৌঁছে দিতে পারি জেনে নেব সার্থক আমরা, সার্থক আমাদের একতারা।


শর্টলিংকঃ