গুজব সৃষ্টিকারীদের শাস্তি পেতেই হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী


সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব সৃষ্টিকারীদের হুশিয়ারি দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। যারাই এ ঘটনা ঘটাচ্ছেন, তাদের শাস্তি পেতেই হবে। সচিবালয়ে মঙ্গলবার সমসাময়িক ইস্যুতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব সৃষ্টির মাধ্যমে কতগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। ঘটনাগুলো কারও কাছে কাম্য নয়। সবই নিছক গুজব, এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই।

আমি এর সঙ্গে জানাতে চাচ্ছি, যারা এই ধরনের গণপিটুনিতে অংশ নেন, একজন যদি এই ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটান কিংবা ১০০ জনে ঘটান- শাস্তি কিন্তু একই রকম হবে। এই ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটালে অবশ্যই আমরা আইনের মুখোমুখি করব। আইন অনুযায়ী তাকে শাস্তি পেতেই হবে।

পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগার গুজব। এর মধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা সন্দেহে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে- এর পেছনে কী উদ্দেশ্য আছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, একটা কনফিউশন, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্যই এগুলো।

একজন সাধারণ মানুষ, যারা শ্রমিক, অশিক্ষিত লোক- তারাও বোঝে ব্রিজ তৈরি করতে মানুষের মাথা লাগে না। তাহলে কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটাবে। এগুলোর নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য আছে। আমরা সব দেখছি। এর সঙ্গে যদি কোনো রাজনৈতিক কিংবা কোনো অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে কিংবা কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য- যেটার জন্যই করে থাকুক, যে ঘটিয়েছে আমরা তাকে ধরছি, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ছেলেধরা সন্দেহে কয়েকদিনে সারা দেশে ৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এতে আহত হয়েছেন ১৫ জন। মামলা হয়েছে ৯টি, জিডি হয়েছে ১৫টি।

সারা দেশে ৮১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে আমরা গণগ্রেফতারে বিশ্বাস করি না। যিনি অপরাধ করেছেন, তাকে শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখি করব। তা একজন করুক কিংবা ১০ জন করুক কিংবা আরও বেশি মানুষ সম্পৃক্ত থাকুক।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, যারা ঘটনার সত্যতা বিচার না করে নিজেরা আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন, তাদের কাছে সবিনয় অনুরোধ করব, আপনারা কোনোক্রমেই আইন হাতে তুলে নেবেন না।

যদি কারও প্রতি কোনো সন্দেহ হয়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে সোপর্দ করে দিন। কিংবা ৯৯৯ নম্বরে জানান। কিংবা ওই এলাকার সবাইকে জানান। এরই মধ্যে কয়েকজন এই ধরনের দুঃখজনক ঘটনার শিকার হয়েছেন। আমরা বসে নেই, সব ঘটনাকে সামনে এনে, ভিডিও ফুটেজ দেখে কারা কারা সম্পৃক্ত হয়েছিলেন, এগুলোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।

দেশবাসীর প্রতি আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ যেন এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা তৈরি না করেন, এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না হন। ২০ জুলাই বাড্ডায় মা তার সন্তানকে স্কুলে ভর্তির তথ্য নিতে গিয়ে যে ঘটনার শিকার হল, এটা দেশবাসীকে ব্যথিত করেছে। আমরাও এ ঘটনা খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি, কেন এই ঘটনা ঘটল। এরই মধ্যে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা ৭ জনকে গ্রেফতার করেছি।

যারা যারা সেখানে ছিল, এই ঘটনার জন্য দায়ী যারা, সবাইকে শনাক্ত করে ব্যবস্থা আমরা নেব ইনশাআল্লাহ। কেউ অহেতুক সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে উত্তেজিত না হয়ে যেন ঘটনা জানার চেষ্টা করে, বুঝতে চেষ্টা করে। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে, সবাইকে সজাগ হতে হবে।

পুলিশ বসে নেই উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা মসজিদের ইমামসহ সব জায়গায় বলছি- এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে। যারা ফেসবুকে এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে, পুলিশ বসে থাকবে না।

তাদের আমরা আইনের মুখোমুখি অবশ্যই করব। পুলিশকে এত অদক্ষ ভাববেন না। যারা সাইবার ক্রাইম করেছেন, ফেসবুকে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে যে ক্রাইম করেছেন, অলরেডি তাদের কয়েকজনকে শনাক্ত করে অ্যারেস্ট করেছি। সবাই (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) সক্রিয় রয়েছে।

ডিসি ও এসপিদের বলে দেয়া হয়েছে তারা যেন খেয়াল রাখেন কোনো জায়গায় যেন এই ধরনের গুজব বিস্তার লাভ করতে না পারে। যেখানে গুজব, সেখানেই যেন তারা অ্যাকশনে যেতে পারে, সেই ধরনের ইন্সট্রাকশন দিয়ে দেয়া হয়েছে। ছেলেধরা গুজব বন্ধে দেশের স্কুলগুলোয় টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা কি না- এক সাংবাদিক জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আপনার কাছে কি মনে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ব্যর্থতা আছে? থাকলে আপনি আমাকে খবর দিতেন, আমি তখনই ব্যবস্থা নিতাম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঙ্গে সঙ্গে কাজ করত।

এ ধরনের মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হবে কি না- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা যথাসম্ভব দ্রুত মামলাগুলোর চার্জশিট দিয়ে দেব। তাড়াতাড়ি যাতে বিচার হয়, আমরা সেটারও ব্যবস্থা নেব। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দিলেই যে দ্রুত বিচার হবে, তেমন তো কোনো কথা নেই। আমরা কত তাড়াতাড়ি দিতে পারি, সেটা হল বড় কথা।


শর্টলিংকঃ