গোদাগাড়ীতে জলবদ্ধতায় পাকা ধান নিয়ে বিপাকে কৃষক


শামসুজ্জজোহা বাবু,গোদাগাড়ী:

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে টানা বৃষ্টির কারণে কিছু কিছু এলাকায় ধান ক্ষেতে পানি জমে থাকার কারণে ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। বৃষ্টির পানিতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে সিএন্ডবি আঁচুয়া নিচু জমিতে তলিয়ে গেছে ধান ক্ষেত।

এছাড়া বাসুদেবপুর,সারাংপুর, রামনগর,শাহাব্দিপুর,কাদিপুর বিল এলাকায় কয়েকশত বিঘা জমিতেও রয়েছে জলবদ্ধতা। ফলে পাকা ধান মাঠে পড়েই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা। জলবদ্ধতায় ধান কাটার শ্রমিকও পাচ্ছেন না তারা। আবার এসব এলাকায় অনেকে কোনোমতে আধা পাকা ধান কাটলেও অতিবৃষ্টি ও পর্যাপ্ত রোদের অভাবে শুকাতে পারছেন না। এমনকি মাড়াই করা ও খড় শুকাতে পারছেন না।

তাই কৃষকের স্বপ্নের ধান এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ রঙ ও গুণগত মান নষ্ট হওয়ার ভয়ে ধান কাটছেনই না। এতে করে ফলন কম হচ্ছে। বৃষ্টির পানি জমে জলবদ্ধতার কারণে যে সব এলাকায় পাকা ধান নষ্ট হচ্ছে সেসব এলাকায় পানি নিষ্কাশনের দ্রুত ব্যবস্থা করা দরকার। স্থানীয় কৃষকদের দাবী এসব এলাকায় অনেক আগে পানি নিষ্কাশনের জন্য খাঁড়ি ছিল যা অবৈধ স্থাপনার কারণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তা উদ্ধার করা বা নতুন খাঁড়ি তৈরী করলে এটার স্থায়ী সমাধান হতে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এই বছর উপজেলার ছোট-বড় ও মাঝারি শ্রেণির ২৬ হাজার কৃষক ১৩ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। কেবল মাত্র ধান কাটতে শুরু করেছে এই এলাকার কৃষক। এদিকে বোরো ধান কেটে বাড়ি আনতে তিনগুণ পরিশ্রমের পরও সোনালী ফসল ঘরে তুলতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে উপজেলার শত শত কৃষককে।

হঠাৎ করে বৃষ্টির কারণে কেটে রাখা ভিজে ধান ঘরে তোলা, ধান মাড়াই করে শুকাতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। এছাড়া যে সব এলাকায় বৃষ্টির কারণে যে জলবদ্ধতা তৈরী হয়েছে তা নিরাসন না করলে চোখের সামনেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রোদ বৃষ্টি মাথায় করে অনেক কষ্টে উৎপাদিত শত শত বিঘা জমির ধান। ফলে কৃষকের বুকে বিরাজ করছে এক প্রকার চাপা আর্তনাদ। চোখে-মুখে ফসল হারানোর শঙ্কার ছাপ গুলি স্পষ্ট ফুটে উঠেছে ।

বৃষ্টিতে ধান গাছ নুয়ে পড়েছে, আবার কোথাও ভেসে গেছে, মৃদু ঝড়ের আঘাতে নুয়ে পড়া ধান, কোথাও ভারী বৃষ্টিতে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে পাকা ধান। বৃষ্টি শুরুর আগেই যাদের ধান কাটাশেষ হয়েছে তাদের অনেকেই ধান শুকাতে পারেনি। এমতাবস্থায় সঠিক সময়ে ধান শুকিয়ে ঘরে না তুলতে পারলে ওই ধান গবাদি পশুকে খাওয়ানো ছাড়া আরকোনো কাজে আসবেনা বলে জানান অনেক কৃষক।

এদিকে, বৃষ্টির কারণে ধান ভিজে গেলে সেই ধান আর গোলায় রাখা যায় না। সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধ করে চাল করতে হয়। এমন ধানের চালের রংও কিছুটা লালচে হয়। নষ্ট হয়ে যায় স্বাদও। আঁচুয়া এলাকার কৃষকেরা বলেন, এই জলবদ্ধতা তৈরী হয়েছে পানি নিষ্কাশনের রাস্তা বন্ধ করে জমি সমতল করায়। আঁচুয়া তালতলার উঁচু এলাকা থেকে নিচের দিকে পানি প্রবাহিত হওয়ায় এবং কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তাদের জমির আধাপাকা ধান পানিতে ডুবে গেছে। এজন্য ধান কেটে নিচ্ছি। এতে করে ফলন কম হওয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, ‘কয় দিন আগেও জমিতে পানি ছিল না, এখুন হাঁটু পানি, এজন্য কেউ ক্ষেত কাটতে আসে না। নিজের ক্ষেতের ধান নিজেই কাটি। উপজেলা কৃষি অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন,বৃষ্টি এটা প্রাকৃতিক দূর্যোগ এটাতে কারো হাত নাই তবে যে সব এলাকার জমিতে বৃষ্টির পানি জমে জলবদ্ধতা দেখা দিয়েছে সেসব এলাকায় কৃষি জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

আমি সিএন্ডবি আঁচুয়ার নিচু জমি গুলো পরিদর্শন করেছি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে। তবে কৃষকের পাশে এ সময় দাঁড়াতে না পারলে সেই বিপদ শুধু কৃষকের নয়, ভবিষ্যতে দেশের ওপরে চাপ বাড়াবে। করোনার কারণে বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

সঙ্গত কারণে সরকার চাইছে বোরো মৌসুমের উৎপাদন ঠিক রাখার পাশাপাশি আউশ এবং আমন মৌসুমে বেশি বেশি ফসল উৎপাদন করতে। এর কোনও একটি মৌসুমে ধানের উৎপাদন কম হলে খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশে খাদ্য নিরাপত্তা ঠিক থাকবে।


শর্টলিংকঃ