Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

গোমস্তাপুরে উপজেলা ভোটে সাবেক দুই এমপির পরোক্ষ ‘লড়াই’


তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

তৃতীয় ধাপে আগামী রোববার (২৪ মার্চ) চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গত ৮ মার্চ প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে টানা ১৫ দিনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে শুক্রবার (২২ মার্চ)। নির্বাচনের মাঠে নেই বিএনপি। অন্য কোনো দলের শক্ত প্রার্থীও নেই। ফলে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে মাঠ সরগরম করেছেন আওয়ামী লীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থী। তবে সবকিছু ছাপিয়ে স্থানীয়দের নজর এখন সাবেক দুই সংসদ সদস্যের মান রক্ষার ‘লড়াইয়ে’।

গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আফসার আলী খান (আনারস) ও হুমায়ন রেজা (নৌকা)

জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হুয়ামন রেজার পক্ষে মাঠ চষে বেড়িয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আফসার আলী খানের পক্ষে আটঘাঁট বেঁধে মাঠে নেমেছেন আরেক সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা বিশ্বাস।

স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির কোনো প্রার্থী না থাকলেও উত্তেজনার কমতি নেই গোমস্তাপুরের ভোটের মাঠে। দুই সাবেক এমপি আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় নেতাকর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন দুই ভাগে।

ফলে ভোটের মাঠে পরোক্ষভাবে এই দুই সাবেক এমপির ‘লড়াই’ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। সবার নজর এখন রোববারের ভোটের দিকে। সাবেক কোন এমপি তার সমর্থিত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে পারেন, সেদিকে দৃষ্টি উপজেলার সাধারণ ভোটারদের। শুধু ভোটাররা নয়, খোদ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও নির্বাচনকে দেখছেন দুই এমপির মান রক্ষার লড়াই হিসেবে।

জানা গেছে, নির্বাচনে উপজেলার মোট ভোটার এক লাখ ৯৬ হাজার ২ শো ৯৮ জন। উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন আওয়ামী লীগের দুই জন প্রার্থী। তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হুমায়ন রেজা (নৌকা) ও বিদ্রোহী প্রার্থী পার্বতীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার আলী খান (আনারস)।

এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বুলুবুল (তালা), আওয়ামী লীগ নেতা হাসানুজ্জামান নুহু (টিউবওয়েল), বিএনপি নেতা আশরাফুল হক (টিয়া পাখি), যুবলীগ নেতা সেরাজুল ইসলাম টাইগার (মাইক), শ্রমিকলীগ নেতা ময়েনউদ্দিন (চশমা)।

নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে মহিলা লীগ নেত্রী মর্জিনা বেগম (কলস), কুইন আরা খাতুন (হাঁস), শিরিন আক্তার (পদ্ম ফুল), জোহনা খাতুন (ফুটবল) ও মাহফুজা খাতুন (সেলাই মেশিন) অংশ নিচ্ছেন।

সরেজমিনে গোমস্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাজার ও মোড়ে পাশাপাশি নৌকা ও আনারসের পোস্টার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে সমানতালে প্রচারণা চালিয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আফসার আলী খান।

রহনপুরের কলোনী মোড়ে অবস্থিত গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের বারান্দায় ঝুলছে বিদ্রোহী প্রার্থী আফসার আলী খানের আনারস প্রতীকের একটি বড় ব্যানার। ভেতরে কিছু কর্মী আনারস প্রতীকের পোস্টার ও লিফলেট প্যাকেটবন্দি করছেন। বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর জন্য।

আওয়ামী লীগের এই কার্যালয়েই পাওয়া গেল সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা বিশ্বাসকে। তবে তিনি আনারসের পক্ষে সরাসরি ভোট করার কথা অস্বীকার করেন।

গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস বলেন, দলের হাইকমান্ড থেকেই নির্বাচনে অংশ নিতে সবাইকে উৎসাহিত করা হয়েছে। গোমস্তাপুরে যেহেতু দলের দু’জন প্রার্থী রয়েছেন, তাই তিনি কোন প্রার্থীর প্রচারণায় নামেননি। তবে তৃণমুলের ৯০ ভাগ কর্মী বিদ্রোহী প্রার্থী আফসার আলীর পক্ষে কাজ করছেন বলে দাবি করেন তিনি। আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীর পোস্টার ও লিফলেট বিতরণের বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

তবে এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নৌকার প্রার্থী হুমায়ন রেজা। তিনি বলেন, সাবেক এমপি মোস্তফা নৌকার বিজয় ঠেকাতে মাঠে নেমেছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসকে বিদ্রোহী প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় বানানো হয়েছে। যা ন্যাক্কারজনক। তারপরেও ২৪ মার্চ নৌকার বিজয় হবে বলে দাবি করেন তিনি।

উপজেলার আরেক সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান জানান, এটা কারো সঙ্গে মান রক্ষার লড়াই নয়। বরং দলের প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করছেন তিনি। নৌকার বিজয়ের জন্য শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন বলে জানান।

এরআগে গোমস্তাপুর উপজেলার ঢুকেই চকপুস্তম এলাকার প্রবীন মাহতাব উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয়। পেশায় কৃষক মাহতাব বলেন, আগেরবার এখানে বিএনপির চেয়ারম্যান জিতলেও এবার তাদের প্রার্থী নেই। তবুও ভোট জমে উঠেছে। ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করেন তিনি।

গোমস্তাপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে কথা হয় ভ্যানচালক আশরাফুল হকের সঙ্গে। তিনি জানান, বিএনপি ভোটে না থাকায় ভাবছিলাম ভোট জমবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর পক্ষে সাবেক দুই এমপি কাজ করায় নির্বাচনে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

উপজেলার প্রাণকেন্দ্র রহনপুরের ব্যবসায়ী বাসার আলী বলেন, সব দল নির্বাচনে না আসায় ভোট নিয়ে তার তেমন আগ্রহ নেই। তবে চেয়ারম্যান পদে কে বিজয়ী হন, তা নিয়ে সবার ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।


Exit mobile version