নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দুই ইউনিয়নের চরাঞ্চলে বসবাসকারী লক্ষাধিক মানুষ সারা বছরই কার্যত মুল ভুখন্ডের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন জীবন কাটায়। তার ওপর বর্ষা মৌসুমের চার মাস থাকেন জলবন্দী। অসুখ বিসুখ হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দীর্ঘ নদীপথ পাড়ি দিয়ে উপজেলা বা জেলা সদরের হাসপাতালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে পথেই নিভে যায় জীবন প্রদীপ। চরাবাসীর বহু বছরের যন্ত্রণা লাঘবে এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল মঙ্গলবার নিজ উদ্যোগে চালু করলেন নৌ-এ্যাম্বুলেন্স।
এদিন সকালে শিবগঞ্জের পাঁকা ইউনিয়নের পদ্মা নদীর বোগলাউড়ি ঘাটে নৌ-এ্যাম্বুলেন্সের চাবি হস্তান্তর করেন তিনি। এসময় চরের বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত থেকে নৌ এ্যাম্বুলেন্স চালু প্রত্যক্ষ করেন। চরবাসীর দীর্ঘদিনের একটি দাবি পুরণ হওয়ায় তারা ভীষণভাবে উচ্ছসিত।
ডা. শিমুল এমপি নৌ এ্যাম্বুলেন্স উদ্ধোধন অনুষ্ঠানে বলেন, চরবাসীর দীর্ঘদিনের যন্ত্রণা ও বঞ্চনার অবসান ঘটাতে এই নৌ এ্যাম্বুলেন্স ভুমিকা রাখবে। সারাবছরই শিবগঞ্জের এই অংশে পদ্মায় নাব্যতা থাকায় চরের যে কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দ্রুত সময়ে উপজেলা সদর বা জেলা সদরের হাসপাতাল বা চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে। এতে অনেক মুমুর্ষ মানুষের জীবন রক্ষা পাবে।
চরাঞ্চলের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম কালু বলেন, এটি চরবাসীর বহুদিনের দাবি ছিল। আগে কোন এমপি মন্ত্রী তা পুরণ করেননি। চর থেকে এ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে যাওয়ার কথা আমরা স্বপ্নেও কোনদিন ভাবিনি। কত মানুষ যে হাসপাতালে ঠিক সময়ে পৌছানোর আগেই মারা গেছেন তার হিসাব নেই। বঞ্চিত ও ভুক্তভোগী চরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে নৌ এ্যাম্বুলেন্স চালু হওয়ায় মনিরুল ইসলাম ডা. শিমুল এমপিকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
ডা. শিমুল এমপির ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো: সোহেল জানান, গত নির্বাচনের আগে পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চল পাঁকা ও দুর্লভপুরের মানুষের দাবি ছিল তাদের জন্য নৌ এ্যাম্বুলেন্স চালু করার। শিমুল এমপি সাহেব চরের লক্ষাধিক মানুষের কাছে অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি নির্বাচিত হলে চরবাসীর জন্য নৌ-এ্যাম্বুলেন্স চালু করবেন। আজ সেই অঙ্গীকার তিনি পুরণ করলেন। এতে চরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও ভোগান্তির অবসান ঘটল। এখন মুমুর্ষ রোগীদের দুর্গম এসব চর থেকে দ্রুত সময়ে জেলা সদরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছাবে যাবে। আজ একটির উদ্বোধন হলেও শিঘ্রই আরও একটি নৌ এ্যাম্বুলেন্স দেওয়ার জন্য এমপি মহোদয় ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করছেন।
জানা গেছে, প্রায় ১২ লক্ষাধিক টাকা মুল্যের নৌ এম্বুলেন্সটি আপাতত পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। চরবাসীর চাহিদা অনুযায়ী এটি বিনামুল্যে রোগী বহন করবে। জরুরি কল পেয়ে ইউনিয়নের যে কোন চরে গিয়ে এ্যাম্বুলেন্সটি মুমুর্ষ রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছাতে সাহায্য করবেন। শিবগঞ্জে পদ্মার এই অংশে বারো মাস নাব্যতা থাকায় চরাঞ্চলের এ্যাম্বুলেন্সটি বছরের ১২ মাসই সেবা দিতে পারবে।
পদ্মার চরবাসীর জন্য নৌ এ্যাম্বুলেন্স চালু প্রসঙ্গে ডা, শিমুল এমপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ও সার্বিক সহায়তায় তিনি বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের মানুষের জন্য নৌ এ্যাম্বুলেন্স চালু করতে পেরে খুবই আনন্দিত। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও বলেন, দুর্গম পাঁকা ইউনিয়নটি মুল ভুখণ্ডের সঙ্গে বার মাসই বিচ্ছিন্ন থাকে। কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে খাটে তুলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই অনেকে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যান। নৌ এ্যাম্বুলেন্স চালুর ফলে চরবাসীর বহু বছরের বঞ্চনা ও ভোগান্তির অবসান ঘটল। তিনি শিবগঞ্জের মানুষের কল্যাণে আরও কিছু মানবিক কাজ করতে চান বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নৌ এ্যাম্বুলেন্স উদ্ধোধন অনুষ্ঠানে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: সাকিব আল রাব্বী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম, চরাঞ্চলের বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিপুল সংখ্যক এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
