চলছে মৃত্যুর মিছিল


আমাদের ছেড়ে আজ না ফেরার দেশে চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের রক্তে নাচন ধরানো
‘জন্ম আমার ধন্য হলো মগো’ গানটির সুরকার বরেণ্য সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমান। এই বিশিষ্ট সঙ্গীত পরিচালক, কন্ঠশিল্পী, শিক্ষক, গীতিকারের মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

১৯৪৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন আজাদ রহমান। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খেয়ালে স্নাতক সম্পন্ন করেন। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন তিনি ফোক গান, কীর্তন, ধ্রুপদী সঙ্গীত, খেয়াল, টপ্পা গান, তুমড়ি, রবীন্দ্র সঙ্গীত, অতুল প্রসাদের গান, দিজেন্দ্র গীতি, রজনী কান্তের গান চর্চা করেন। একই সময়ে তিনি একজন খৃষ্টান পুরোহিতের কাছ থেকে পিয়ানো বাজানো শেখেন। পাশ্চাত্য সংগীতের সাথে তার পরিচয় ঘটে।

১৯৬৩ সালে মাত্র বিশ বছর বয়সে কলকাতার জনপ্রিয় বাংলা সিনেমা ‘মিস প্রিয়ংবদা’র সংগীত পরিচালনার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রের গানে তার পথচলা শুরু। সেই ছবিতে তার সুরে কণ্ঠ দেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখার্জি ও প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৬৪ সালে কলকাতা দাংগার পর আজাদ রহমান ঢাকায় চলে আসেন। তখনকার রেডিও পাকিস্তানে গীতিকার এবং সুরকার হিসেবে যোগ দেন। পাশাপাশি ছায়ানটে উচ্চাঙ্গ সংগীত শেখাতে শুরু করেন।

১৯৭০ সালে গীতিকার নয়ীম গহর রচিত ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’-এর মত কালজয়ী দেশাত্মবোধক গানেরও সুর করেছেন আজাদ রহমান। মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণাদায়ী জাগরণী গানগুলির মধ্যে এই সঙ্গীতটি অন্যতম।

‘ভালোবাসার মূল্য কত’, ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনই’, ‘মনেরও রঙে রাঙাব’, ‘ডোরা কাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়’, ‘এক বুক জ্বালা নিয়ে বন্ধু তুমি’সহ বহু গানের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন আজাদ রহমান। কোনোটির সুরকার , কোনোটির সংগীত পরিচালক তিনি। ঢাকায় তার প্রথম সঙ্গীত পরিচালনা ছিল বাবুল চৌধুরীর ‘আগন্তুক’ ছবিতে। তবে পাশাপাশি তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও খেয়াল গানের চর্চা করেন। তাকে বাংলাদেশের খেয়াল গানের জনক বলা হয়। তিনি বাংলা কাওয়ালি গানেরো স্রষ্টা। তিনি শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

আজাদ রহমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাও করেন। তিনি শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকও ছিলেন।

তাঁর সাথে বহুবার দেখা হয়েছে নানা অনুষ্ঠানে। শেষ দেখা হয়েছিল মার্চের মাঝামাঝি ধানমন্ডির অবসর ভবনে। মুগ্ধ করে ফেলতেন মুহূর্তেই। সুন্দর বাচনভঙ্গি , হাসি মাখা মুখ, ভরাট কণ্ঠস্বর, মৃদুভাষী আজাদ রহমানের শূন্যতা পূরণ হবার নয়। ভাল থাকুন আজাদ রহমান। শান্তিতে কাটুক আপনার সময়।

লেখক : আবু আলম মো:  শহিদ খান : সাবেক সচিব


শর্টলিংকঃ