চলার শক্তিই নেই অথচ রামদা নিয়ে হামলা করেছেন!


ইউএনভি ডেস্ক:

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আউয়াল। পক্ষাঘাতগ্রস্ত এই মুক্তিযোদ্ধা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরাই করতে পারেন না। অথচ সেই মানুষটি নাকি রামদা, কিরিচ ও লোহার রড নিয়ে হামলা চালিয়েছেন আরেকজনের ওপর! এমন অভিযোগে সম্প্রতি এই মুক্তিযোদ্ধার নামে আদালতে মামলা করেছেন তারই প্রতিবেশী মুদি দোকানি আবুল হাসেম।


স্ট্রোকের কারণে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আউয়ালের ডান হাত ও ডান পা প্যারালাইজড হয়ে গেছে, নাড়াতেই কষ্ট হয়। কিছু ধরতে বা কাজ করতে পারেন না ডান হাত দিয়ে। এমনকি ডান হাতে খেতেও পারেন না। তার এই সমস্যা ২০১৩ সাল থেকে। খুব কষ্ট করে বাম হাত দিয়ে খেতে হয়।

তবে আব্দুল আউয়ালের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন তার প্রতিবেশী আবুল হাসেম। তার অভিযোগ, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে গত ৩ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার পর উপজেলার রহিমপুর এলাকায় তার ওপর হামলা হয়। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আউয়াল ও তার লোকজন রামদা, কিরিচ ও লোহার রড নিয়ে তার ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীরা হাসেমের পুকুর থেকে অনুমান তিন লাখ টাকার মাছ তুলে নেয়  এবং গাছের চারা ও লাউগাছের বাগান নষ্ট করে প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষতিসাধন করে। এ ছাড়াও ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। হামলার ঘটনায় ১৮ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন আবুল হাসেম। সেই মামলার এক নম্বর আসামি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আউয়াল।

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘ডান হাত ব্যবহার করতে পারি না, বাম হাতটাও তেমন কাজ করে না। এ অবস্থায় আমি কীভাবে আরেকজনকে আক্রমণ করতে পারি।’ ৭৫ বছর বয়সী এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘আমি কষ্ট করে জীবন চালাই। পরিবারের অবস্থা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। জমি সংক্রান্ত বিরোধে হাসেম আমার নামে চাঁদাবাজি মামলা দিয়েছে, যা একেবারেই মিথ্যা। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

মামলার বাদী আবুল হাসেম বলেন, ‘মামলা করার পর তারা ওই জায়গায় রাতের বেলায় ঘর উঠায়া ফেলে। আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে, না দিলে তারা ঘর তুলে ফেলবে এ কথাগুলো বলেছে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আউয়ালের ছেলেপেলে। বাদে আমি চাঁদাবাজি মামলা করেছি।’

বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা। কলমাকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আউয়ালের নামে আদালতে এক ব্যক্তি চাঁদাবাজি মামলা করেছে বলে শুনেছি। বিষয়টি দুঃখজনক। মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে মামলাকারী হাসেমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন কলমাকান্দার সভাপতি আব্দুর রশিদ আকন্দ বলেন, পক্ষাঘাতগ্রস্ত মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে হামলা ও চাঁদবাজির অভিযোগে মামলার বিষয়টি দুঃখজনক। তদন্ত করে মামলার বাদীকে আইনের আওতায় আনতে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। – সমকাল

 


শর্টলিংকঃ