চাঁদা না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করলো যুবলীগ নেতা


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীতে ১০ লাখ চাঁদা না দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের ওপর স্বশস্ত্র হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার বেলা ১১ টার দিকে নগরীর মেহেরচন্ডি দায়রাপাঁক এলাকার এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা ও তার সন্তান গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত ওই মুক্তিযোদ্ধাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত মুক্তিযোদ্ধার নাম ওয়াহেদ উদ্দিন (৬৩) ও তার সন্তান নাহিন ইসলাম। আর আক্রমণকারীরা হলেন ২৬ নম্বর ওয়ার্ড (পূর্ব ) যুবলীগের সভাপতি আসাদ আলী ও তার ভাতিজা স্থানীয় বখাটে যুবক রাসেল।

ঘটনার পর আক্রমণকারীরা গা ঢাকা দিয়েছে।এদিকে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে চন্দ্রিমা থানায় হত্যা প্রচেষ্টাসহ চাঁদাবাজির একটি মামলা হয়েছে। আর ঘটনা জানান পর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ভুক্তভোগী পরিবারকে পাশে এসে দাড়িয়েছেন এবং রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন তাদের সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আহত মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহেদ উদ্দিনের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বছর খানেক পূর্বে মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহেদ উদ্দিন মেহেরচন্ডী দায়রাপাঁক এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা রাসেলের মায়ের কাছ থেকে তিন কাঠা জমি ক্রয় করেন। এ বছরের মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহেদ উদ্দিন বাড়ি নির্মাণের আলোচনা শুরু করেন। খবর পেয়ে রাসেলের তার চাচা আসাদ আলীকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন সময় ১০ লাখ চাঁদা দাবি করে; নয়তো বাড়ি বানানোর জন্য সমস্ত ইট আসাদের কাছ থেকে ক্রয় করতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।

ঘটনার দিন শনিবার সকালে মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহেদ উদ্দিন বাড়ি তৈরীর জন্য ট্রাকে করে ইট নিয়ে আসলে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা রাসেল এবং তার চাচা আসাদ বাধা দেয়। এ সময় ঘটনাস্থলে অভিযুক্ত দুই জন দলবল নিয়ে এসে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহেদ চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে ও তার স্ত্রীসহ উপস্থিত পুরো পরিবারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে মারধর শুরু করে। এসময় মুক্তিযোদ্ধা গুরুতর আহত হন ও তার নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে অভিযুক্তরা মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চাকু দিয়ে মারতে তেড়ে গেলে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে নাহিন বাবাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসলে তিনি চাকুর আঘাতে আহত হন।

ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার ছেলে নাহিন ইসলাম বলেন, জমি কেনার পর থেকেই স্থানীয় যুবলীগের সভাপতি আসাদ ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। নয়তো তার কাছ থেকে বাড়ি তৈরির ইট নেয়ার জন্য নানা ভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। আমরা কখনোই তাদের এমন অন্যায় দাবিকে প্রশ্রয় দেইনি। শনিবার আমরা নিজেরা ইট কিনে আনলে, সকালে একদল মানুষ নিয়ে এসে তাদের কাছে কেন ইট নেয়া হয়নি এই বলে আমাদের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। আমার বাবা সেই টাকা দিতে না চাইলে, বাবাকে ও মাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে ও আমাদেরকে মারতে শুরু করে। আমি তাতে বাধা দিতে গেলে আমাকেও তারা মারধর করে। এঘটনায় আমার বাবার নাক দিয়ে অনর্গল রক্ত পড়তে থাকে। চাকু দিয়ে বাবাকে মারতে তেড়ে গেলে আমি রক্ষা করি। এসময় আমার হাত জখম হয়। বাবা এখন রামেকের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধিন আছেন। এবিষয়ে অভিযুক্ত আসাদ ও রাসেলের নামে চন্দ্রিমা থানায় এটেম টু মার্ডার ও চাঁদাবাজির মামালা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, মুক্তিযোদ্ধারা ঘটনাটি জানান পর ভুক্তভোগী পরিবারকে সহযোগীতার জন্য এগিয়ে আসেন। পরে এবিয়টি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনকে জানান হলে তিনি এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

চন্দ্রিমা থানার ওসি সিরাজুম মুনির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঘটনার পর অভিযুক্ত দুইজন গা ঢাকা দিয়েছে। তাদের ধরতে কাজ করা হচ্ছে।


শর্টলিংকঃ