‘চাঁদা’ না পেয়ে শেখ রাসেল স্কুলের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিলো ছাত্রলীগ


সুব্রত গাইন, রাবি:
চাঁদার দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেলের নামে নির্মাণাধীন স্কুলের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। ৩০ লাখ টাকা না দেয়ায় রোববার দুপুরে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে উপাচার্য হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ছেলের নামের স্কুলে কেউ চাঁদাবাজির চেষ্টা করলে তাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় বসে আছে নির্মাণশ্রমিকরা

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী মাঠের দক্ষিণ পাশে শেখ রাসেল স্কুলটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। নির্মাণ কাজের জন্য বরাদ্দ হয় ১০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। রাজশাহীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শিকদার কনস্ট্রাকশন স্কুলটির নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায়। আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকেই কাজ শুরু হয়। তবে কাজ শুরু পর আগস্টের প্রথম সপ্তাহে রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুসহ বেশকয়েকজন নেতাকর্মী স্কুলটির নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধানকারী মমতাজ উদ্দীনের সঙ্গে দেখা করেন।

এ বিষয়ে মমতাজ উদ্দিন জানান, ‘ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীরা এসে জিজ্ঞেস করে কার অনুমতি নিয়ে কাজ শুরু করেছি। একপর্যায়ে তারা আমার কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। অন্যথায় স্কুলের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়।’

মমতাজ উদ্দীন আরও জানান, প্রায়ই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী সাইটে গিয়ে তার কাছে চাঁদা দাবি করতেন। রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্তসহ দু’জন গিয়ে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেয় এবং ম্যানেজার আশরাফুল ইসলামকে তুলে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই কাজ বন্ধ রয়েছে।

জানতে চাইতে আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীরা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস্ কমপ্লেক্সের পেছনে ধরে নিয়ে যায়। পরে বিষয়টি শীঘ্রই মীমাংসা করে নেওয়ার কথা বললে তারা আমাকে ছেড়ে দেয়।’ তবে ছাত্রলীগ নেতা বৃত্ত ছাড়া বাকিদের পরিচয় জানাতে পারেন নি তিনি।

রোববার বিকেলে সরেজমিনে নির্মাণাধীন স্কুল প্রাঙ্গনে দেখা যায়, শ্রমিকরা কাজের পরিবর্তে একসঙ্গে মাঠে বসে আছেন। এক শ্রমিক সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ‘সকাল থেকে কাজ করছিলাম। দুপুরে দু’জন এসে ম্যানেজারকে কাজ বন্ধ করে দিতে বলে। পরে তাকে তুলেও নিয়ে যায়। কাজ করতে গেলে কখন কী ঝামেলা হয়? তাই নিরাপত্তাহীনতায় আমরা কাজ করছি না।’

তবে অভিযুক্ত সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত এই ঘটনাটি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি আজকে স্কুলের ওদিকে যাইনি। এগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি কাউকেই তুলে আনিনি কিংবা স্কুলের কাজ বন্ধ করেও দেই নি’।

এ বিষয়ে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু একই দাবি করেন। তারা বলেন, ‘আমরা কখনোই কারো কাছে চাঁদা দাবি করি নি। এমন কি আজকের ঘটনাটি এখনও জানি না। তবে কেউ যদি ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে এমন কাজ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা শুনেছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বলেন, ‘আমি এখনো অভিযোগ পাইনি।  এখনই চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা লোকদের সঙ্গে কথা বলবো। বঙ্গবন্ধুর পুত্রের নামে বিদ্যালয় হবে আর কেউ চাঁদা না পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেবে এটা মেনে নেওয়া হবে না।’


শর্টলিংকঃ