চাঁপাইনবাবগঞ্জে তীর ধনুকে কমছে উপকারী প্রাণী বেজি


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:

বেজির বৈজ্ঞানিক নাম Herpestes Auropunctatus|। ইংরেজি নাম Small Indian Mongoose|। এরা ছোট, মাংসাশী স্থন্যপায়ী এবং শিকারি প্রাণী। লোমশ শরীর, দ্রুত নিঃশব্দে চলাফেরা করতে পারে। বেজি খুব ভালো শিকারি প্রাণী। এরা দিনের বেলায় খাবার খায়। রাতে নিজেদের তৈরি করা মাটির গর্তে বসবাস করে। শহরে বা গ্রামে ঝোপঝাড়ে এদের বসবাস। তবে বেশি চোখে পড়ে বরেন্দ্র অঞ্চলে। বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর,নাচোল,গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলায় এদের বিচরণ বেশি। ওইসব এলাকায় কমছে ঝোপঝাড়,নদী-নালা, খাল-বিল ও উন্মুক্ত জমির পরিমাণ। সেইসঙ্গে এসব জায়গায় বসবাস করা বিভিন্ন বন্যপ্রাণীও বিলুপ্ত হচ্ছে ক্রমে। এমনকি বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ এবং আবাসন সংকটের কারণে কমে যাচ্ছে মানুষ এবং প্রকৃতির বহুবিধ উপকারী প্রাণী বেজি।

তবে বর্তমান সময়ে বেজি কমে যাওয়ার মূল কারন হচ্ছে আদিবাসীদের শিকার। তারা গোটা বছর দল বেধে বরেন্দ্র এলাকায় বেজি শিকার করে থাকেন। সম্প্রতি বরেন্দ্র এলাকা ঘরে এমনই চিত্র দেখা গেছে। আদিবাসীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওইসব এলাকায় তীর ধূনক দিয়ে বেজি স্বীকার করে থাকেন। গতকাল দুপুরে নাচোল উপজেলার মির্জাপুরে চোখে পড়ে একদল আদিবাসীর বেজি স্বীকারের দৃশ্য। সাতজনের দলে মোট বেজি শিকার করেছেন চারটি। তারা মূলত গম ও পেয়ারা ক্ষেতে বেজি স্বীকার করছেন।

শিকারী সুজন জানান,বেজির মাংস খেতে অনেক মজা। সে জন্যই তারা দল বেধে বেজি শিকার করে থাকেন। তিনি জানান,দেশের বিভিন্নস্থান হতে আগত মেহমানদের তারা আপ্যায়িত করে থাকেন। মির্জাপুর গ্রামের অমেলা বেগম জানান,বেজি অনেক উপকারে আসে। তার পরেও আদিবাসীদের ধরে নেয়ার কারনে আগের মত আর চোখে পড়েনা। সারা বছর তারা বেজি শিকার করে থাকেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের সহকারি উপ পরিচালক মঞ্জুরুল হোদা জানান, বেজি ফসলের খেতের ছোট-বড় ইঁদুর,বিষাক্ত সাপ, মাছ, ব্যাঙ, পোকামাকড়, পাখি এমনকি পাখির ডিম খায়। মাঝে মধ্যে এরা হাঁস-মুরগি, কবুতরের ছানা এবং অন্যান্য ছোট প্রাণীও খায়। তাই গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বেজিকে শত্রু মনে করে। তবে দুয়েকটা হাঁস মুরগির ছানা খেয়ে বেজি কৃষকের যে ক্ষতি করে, তার চেয়ে অনেক বেশি উপকার করে ফসলের খেতের ইঁদুর ও পোকামাকড় খেয়ে। এছাড়াও বেজি যে অঞ্চলে থাকে, সে অঞ্চলে সাপ থাকে না। বিষধর সাপ, ব্যাঙ, পোকামাকড় এবং বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ খেয়ে বেজি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অসামান্য অবদান রাখে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পরিবাদি সংগঠন সেভ দ্য নেচারের শমন্বায়ক রবিউল হাসান ডলার বলেন,বেজিসহ অন্য উপকারি জীব রক্ষনা বেক্ষনের জন্য আমরা বরেন্দ্র এলাকার আদিবাসি স্কলসহ পাড়া মহল্লায় জনসচেতনামূলক প্রচারনা অব্যহত রেখেছি। তার পরেও আদিবাসিরা বেজিসহ বেশ কিছু প্রাণী ধরে খেয়ে ফেলছে। বেজি রক্ষার্থে জনসচেতনতায় প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ ছাত্রীর শ্লীলতাহানী: রাবি স্কুলের শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা.মোহাম্মদ গোলাম মোর্ত্তুজা বলেন, বেজি সাধারনত কোন কিছুর ক্ষতি করেনা। যারা বেজি শিকার করে মাংষ করছে তাদের বোঝানো উচিৎ। এ ছাড়া সকল প্রাণী রক্ষায় জনগনের সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন,পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বেজির অবদান অনস্বীকার্য। প্রকৃতিতে এদের টিকে থাকা অত্যান্ত জরুরি এবং মানুষের প্রয়োজনেই বেজিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের সংরক্ষণ করা দরকার।


শর্টলিংকঃ