চাকরিচ্যুতদের দলে ভেড়াচ্ছে জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’


পিলখানার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাকরিচ্যুতদের সংগঠনে ভেড়াতে কাজ করছে জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’ বা ‘আল্লাহর সরকার’। এছাড়া, বিভিন্ন বাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত, চাকরিচ্যুত ব্যক্তিদেরও নিজেদের সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছে এই জঙ্গি সংগঠনটি। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন।

সোমবার (১৯ আগস্ট) রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে রবিবার (১৮ আগস্ট) রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দলের’ চার জঙ্গিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩। গ্রেফতার জঙ্গিরা হলো—আব্রাহিম আহমেদ হিরো (৪৬), আবদুল আজিজ (৫০), মো. শফিকুল ইসলাম সুরুজ (৩৮) ও মো. রশিদুল ইসলাম (২৮)।

গ্রেফতার ব্যক্তিদের কাছ থেকে মোবাইল, পেনড্রাইভ এবং হার্ডড্রাইভ, ক্রেডিট কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক এবং পুস্তিকা উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাব কর্মকর্তা এমরানুল হাসান বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা নিজেদের জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’ বা ‘আল্লাহর সরকার’ এর সদস্য বলে স্বীকার করেছে। তাদের কাছ থেকে নানা ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।’

তিনি বলেন, ‘সংগঠনটিতে সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ঝামেলা এড়াতে বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের টার্গেট করা হয়। এক্ষেত্রে তারা পিলখানার ঘটনায় চাকরিচ্যুতদেরকে নিজেদের দলে ভেড়াতে কাজ করছিল। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় তারা সফল হয়নি।’

লে. কর্নেল এমরানুল হাসান আরও বলেন, ‘আল্লহর দল’ জঙ্গি সংগঠনটি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। জঙ্গি মতিন মেহেদী ওরফে মুমিনুল ইসলাম ওরফে মহিত মাহবুব ওরফে মেহেদী হাসান ওরফে মতিনুল হকের নেতৃত্বে এই জঙ্গি সংগঠন গঠিত হয়। ২০০৪ সালের শেষে দিকে জেএমবির সঙ্গে একত্রে সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলায় অংশ নেয় আল্লাহর দল।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় জেএমবি দুর্বল হয়ে পড়লে ‘আল্লাহর দল’ নিয়ে ফের আলাদা হয়ে যায় মতিন মেহেদী। ২০০৭ সালে মতিন মেহেদী গ্রেফতার হয়। এরপর তার অনুসারী জঙ্গিরা পুনরায় সংগঠিত হয়ে কাজ শুরু করে।’

 

আল্লাহর দলের সাংগঠনিক কাঠামো

বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতর/বাহিনীর অবকাঠামোর আদলে জঙ্গি সংগঠন আল্লাহর দল সাংগঠনিকভাবে নিজেদের বিন্যস্ত করার চেষ্টা করছে। সে অনুযায়ী গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নেতৃত্বকে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে। নেতৃত্বের বিন্যাস অনুযায়ী, বিভাগ পর্যন্ত ‘নায়ক’ উপাধির মাধ্যমে প্রধানদের চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদকে অধিনায়ক, উপ-অধিনায়ক, অতিরিক্ত অধিনায়ক, যুগ্ম অধিনায়ক এবং সর্বোচ্চ পদকে তারকা হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে বলে জানান র‌্যাবের কর্মকর্তা এমরানুল হাসান।

‘তারকা’ ও ‘নায়কে’ ভরা ‘আল্লাহর দল’

‘আল্লাহর দল’ এর সাংগঠনিক কাঠামো অন্যান্য দলের মতো নয়। তারা দলের সর্বোচ্চ পদধারীকে বলে তারকা, যিনি মূলত আমির। এরপর অধিনায়ক, উপ-অধিনায়ক এমন পদ রয়েছে। মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ফাঁকি দিতেই সংগঠনটির বিভিন্ন পদের এমন নাম দেওয়া হয়েছে।

ইন্টারনেটে সদস্য সংগ্রহ, গ্রামেও রয়েছে তৎপরতা

র‌্যাব জানায়, সদস্য সংগ্রহের জন্য ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের পাশাপাশি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও রিক্রুটের মাধ্যমে সংগঠনের কাঠামো মজবুত করার পরিকল্পনা করেছে আল্লাহর দল। পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই জঙ্গি সংগঠনটি চিরকুট ও লোক মারফত দূত ব্যবহার করে থাকে। নতুন সদস্যরা জঙ্গি মতিন মেহেদীকে আমির মেনে বায়াত বা শপথ বাক্য পাঠ করে দলে অন্তর্ভুক্ত হয়।

অর্থ সংগ্রহে প্রতিমাসে জাকাত

‘আল্লাহর দল’ জঙ্গি সংগঠনটি অর্থ সংগ্রহের জন্য প্রতিমাসে জাকাত দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করেছে। সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে যারা চাকরি বা ব্যবসা করে, তারা তাদের উপার্জিত অর্থ থেকে প্রতিমাসে ২ থেকে ৫ শতাংশ হারে সংগঠনকে জাকাত দিয়ে থাকে। এভাবেই আল্লাহর দলের ফান্ড তৈরি করা হয়েছে বলে জাজানান লে. কর্নেল এমরানুল হাসান। তিনি আরও বলেন, ‘তারা (আল্লাহর দলের জঙ্গি সদস্যরা) বিভিন্ন ব্যবসা কার্যক্রমও পরিচালনা করে। সে বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। জঙ্গি সংগঠনটি নারীদের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে থাকে।’

দলের আমির মেহেদী মতিনকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা

এই জঙ্গি দলটির পরিকল্পনা ছিল—তাদের নেতা মেহেদী মতিনকে যখন কারাগার থেকে আদালতে নেওয়া হবে এবং ফের কারাগারে ফিরিয়ে আনা হবে, তখন প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে। এমরানুল হাসান বলেন, ‘প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে মেহেদী মতিনকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য কয়েকটি পরিকল্পনা ও রেকি সম্পর্কে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা তথ্য দিয়েছে।’

গ্রেফতার আব্রাহিম আহমেদ হিরো জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবকে জানিয়েছে, সে জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’ বা ‘আল্লাহর সরকার’ এর অধিনায়ক হিসেবে কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পালন করছে। তারকার (আমির) অনুপস্থিতিতে সে দলের নেতৃত্বে রয়েছে। তার পদবি ভারপ্রাপ্ত তারকা বা ভারপ্রাপ্ত আমির।


শর্টলিংকঃ