চীনের আসল চেহারা দেখতে পাচ্ছে বাংলাদেশ


ইউএনভি ডেস্ক:

চীনকে মনে করা হয় অর্থনৈতিক পার্টনার। বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীন বিপুল পরিমাণ সহায়তা দেয়, সহযোগিতা করে। আর এভাবেই সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে চীন। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্কটাও ঠিক একই রকম। চীন বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো বড় বড় মেগা প্রকল্পে সহযোগিতা করছে, অংশগ্রহণ করছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক মিত্র হিসেবে পরিচিত চীন। যদিও ১৯৭১ এ চীনের ভূমিকা এখনো মানুষের হৃদয়ে দগদগে হয়ে আছে। সে সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল চীন। কিন্তু সেই অতীত পেছনে ফেলে বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক সুসম্পর্ক তৈরি করেছে। কিন্তু চীনের অর্থনৈতিক আগ্রাসন যে রাজনৈতিক অবয়ব দিতে খুব একটা দেরি করবে না সেটা বোঝা যাচ্ছে সাম্প্রতিককালে।

সাম্প্রতিক সময়ে চীন কিছু কিছু ঘটনায় এমন হয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে যাতে তার আসল চেহারা ফুটে উঠছে। কিছুদিন আগের কথা, চীনা রাষ্ট্রদূত কূটনৈতিক রিপোর্টারদের সঙ্গে এক অনলাইন মতবিনিময়ে যোগ দিলেন। সেখানে তিনি বললেন যে, বাংলাদেশ যদি কোয়াডে যোগ দেয় তাহলে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। এটি চীন ভালোভাবে নেবে না।

বাংলাদেশ কোয়াডে যাবে কি যাবে না এটি একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশের কূটনীতির মূল ভিত্তি হলো সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়। আর এই মূল নীতির ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশ সকলের সঙ্গে একটি সুসম্পর্ক এবং মিত্রতার সম্পর্ক বজায়ে রেখে চলে। আর এই কূটনীতির ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই বাংলাদেশ একাধারে চীন এবং ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে।

কিন্তু চীন যদি বাংলাদেশকে নির্দেশ দেওয়ার অবস্থানে চলে যায় এবং বাংলাদেশ কার সঙ্গে কোন জোটে যোগ দেবে না দেবে তার নীতিনির্ধারক হয় তাহলে সেটি অবশ্যই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের সামিল।

এই বিষয়টি দিয়ে চিন্তার প্রথম রুপ প্রকাশ করেছে। যদিও চীনের রাষ্ট্রদূত পরবর্তীতে বলেছেন যে, ভাষাগত ত্রুটির কারণে তিনি এটি বুঝতে পারেননি। কিন্তু এর রেশ কাটতে না কাটতেই গতকাল এক নতুন ঘটনা ঘটলো। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, চীনা টিকার মূল্য প্রকাশিত হওয়ায় চীন অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুঃখ প্রকাশ করেছে। বিশ্বে এখন অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান টিকা উৎপাদন করছে এবং টিকা বিক্রি করছে বিভিন্ন দেশে। প্রত্যেকটি দেশে প্রত্যেকটি উৎপাদিত টিকার মূল্যই একটি প্রকাশ্য পরিসংখ্যান।

কোনো উৎপাদিত টিকার মূল্যই গোপনীয়তার কোনো নীতি বিশ্বে নেই। এমনকি শুধু কােভিডের টিকা নয়, অন্যান্য টিকারও মূল্য প্রকাশ্যেই জানা যায়। আমরা জানি যে, সেরামের টিকার বাজার মূল্য কত, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার অন্যান্য টিকা যারা উৎপাদন করছে তাদের বাজার মূল্য কত, ফাইজারের টিকার বাজার মূল্য কত, মডার্নার টিকার বাজার মূল্য কত। সেখানে চীনের টিকার বাজার মূল্য নিয়ে গোপনীয়তার কি আছে তা বোধগম্য নয়।

এই টিকাগুলো সরকার কিনছে জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। জনগণ আসলে এই টিকার ক্রেতা। কাজেই জনগণের জানার অধিকার আছে যে, বাংলাদেশে কার কাছ থেকে কত দামে টিকা কিনছে। এটিতে কেন গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে তা বোধগম্য নয় এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা এ নিয়ে কেন দুঃখিত হলেন সেটিও অনুমিত নয়।

কারণ বাংলাদেশের জনগণ অবশ্যই জানতে চাইবে যে কত টাকায় এই টিকাগুলো কেনা হলো। যতগুলো টিকা বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত এনেছে তার মধ্যে চীনের টিকার সক্ষমতা হার সবচেয়ে কম। এই টিকার সক্ষমতা হার ৭৯ শতাংশ বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রাক্কলন করেছে। সেখানে সেরামের টিকার সক্ষমতার হার ৯১-৯৩ শতাংশ, ফাইজারের টিকার সক্ষমতার হার ৯০ শতাংশের ওপরে, স্পুটনিকের টিকার সক্ষমতার হারও ৯০ শতাংশের ওপরে।

কাজেই একটি টিকার সক্ষমতা যেমন আমাদের জানার অধিকার আছে, তেমনি জানার অধিকার আছে এই টিকার মূল্য কত। আর এটি গোপন রাখার আকাঙ্ক্ষার মধ্যে দিয়ে চীন বাংলাদেশে আরেকটি কর্তৃত্ববাদী নীতি চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। চীনের মধ্যে এক দলীয় শাসন বাংলাদেশে নেই। কাজেই বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা।

তাই চীন বাংলাদেশকে কখনোই নির্দেশনা দিতে পারে না যে, তার টিকার দাম গোপন রাখা হবে। বরং এর মাধ্যমে চীনের কর্তৃত্ববাদী চেহারা আরেকবার বাংলাদেশের সামনে উন্মোচিত হলো। চীন এতো দিন বলে এসেছে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের টিকা নিয়ে চুক্তি সম্পাদন হয়েছে। প্রতিমাসে বাংলাদেশকে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা দেওয়া হবে। কিন্তু চীন দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জানালেন, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের কোনো চুক্তি হয় নি। চুক্তি যদি হয় সেটি হবে সিনোভ্যাকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের। চীন কি তাহলে টিকা নিয়ে বাংলাদেশকে চাপের মুখে রাখতে চাইছে?


শর্টলিংকঃ