Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

ছক্কায় ট্রিপল সেঞ্চুরি ও শেবাগের ‘স্পেশাল’ ২৯ মার্চ


ইউএনভি ডেস্ক:

ইতিহাস গড়ার দুয়ারে দাঁড়িয়ে এমন ঝুঁকি! কিন্তু বিরেন্দর শেবাগ তো ব্যাটিংয়ের সব স্বাভাবিকতাকে চ্যালেঞ্জ জানাতেন নিয়মিতই। ২৯৫ রানে দাঁড়িয়ে যেমন ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে ছক্কায় ছুঁয়েছিলেন ট্রিপল সেঞ্চুরি। দিনটি ছিল ২০০৪ সালের ২৯ মার্চ। চার বছর পর সেই একই তারিখে নিজের ওই ইনিংস ছাড়িয়ে গড়েছিলেন নতুন রেকর্ড। ২৯ মার্চ দিনটি তাই কখনোই ভুলবেন না শেবাগ!

প্রথমটি ছিল মুলতানে। পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণ বেশ ক্ষুরধার ছিল। দুই ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতার ও মোহাম্মদ সামির সঙ্গে ছিলেন সুইং বোলার শাব্বির আহমেদ। অলরাউন্ডার আব্দুল রাজ্জাক ছিলেন তাদের সহায়তার জন্য। স্পিনে সাকলায়েন মুশতাক। কিন্তু তাদের সবাইকে তুলোধুনো করে ছেড়েছিলেন শেবাগ।

ম্যাচের শুরু থেকেই প্রতিপক্ষ বোলারদের গুঁড়িয়ে এগিয়ে যান শেবাগ। ৯৫ থেকে শোয়েবকে টানা দুই বলে চার ও ছক্কায় স্পর্শ করেন সেঞ্চুরি। তিন অঙ্ক ছুঁতে লেগেছিল ১০৭ বল। সেদিনই ডাবল সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ২২২ বলে।

প্রথম দিন শেষে অপরাজিত ছিলেন ২২৮ রানে। পাকিস্তানের মাটিতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন ততক্ষণে। পরদিন, ২৯ মার্চ, ভারতীয় ক্রিকেটকে তিনি উপহার দেন প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি।

সুবিধাবঞ্চিতদের সাহায্যে এগিয়ে এলো সাকিব ফাউন্ডেশন

২৯৫ রানে দাঁড়িয়ে সাকলায়েনের ঝুলিয়ে দেওয়া বল বেরিয়ে এসে লং অনের ওপর দিয়ে উড়িয়ে পা রাখেন ইতিহাসের মঞ্চে। ভারতের ৭২ বছরের টেস্ট ইতিহাসে সেটিই ছিল প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি।

ছক্কায় তিনশ ছোঁয়া টেস্ট ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনিই। ৩০০ করতে লেগেছিল ৩৬৪ বল, তখন সেটি দ্বিতীয় দ্রুততম ট্রিপল সেঞ্চুরি। ৩৬২ বলে ট্রিপলের রেকর্ড ছিল ম্যাথু হেইডেনের।

৩০৯ রানে সামির বলে স্লিপে তৌফিক উমরের হাতে ধরা পড়ে শেষ হয় শেবাগের ৩৭৫ বলের ইনিংস।

দিনটি ভারতীয় ক্রিকেটে আলাদা জায়গা নিয়ে আছে আরেকটি কারণেও। শেবাগের ইতিহাস গড়া ইনিংসেই শচিন টেন্ডুলকারকে ১৯৪ রানে রেখে দলের ইনিংস ঘোষণা করেন অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়। সেটি নিয়ে পরে দুজনের সম্পর্কের টানাপোড়েনের খবর শোনা গিয়েছিল সংবাদমাধ্যমে। টেন্ডুলকার প্রকাশ্যেই অসন্তুষ্টি জানিয়েছিলেন কয়েকবার। তবে যে জন্য ইনিংস ঘোষণা করেছিলেন দ্রাবিড়, সেই জয় ধরা দিয়েছিল অনায়াসেই। ভারত জিতেছিল ইনিংস ব্যবধানে।

বরিশালে করোনা ইউনিটে একজনের মৃত্যু, বাড়ি লকডাউন

শেবাগের সেই ৩০৯ ভারতের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড হয়ে ছিল ঠিক চার বছর। ২০০৮ সালের ২৯ মার্চেই নিজের রেকর্ড তিনি তুলে নেন নতুন উচ্চতায়। প্রতিপক্ষ এবার দক্ষিণ আফ্রিকা, ভেন্যু চেন্নাই।

ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৫৪০ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় দিন ব্যাটিংয়ে নেমে শেবাগ অপরাজিত ছিলেন ৫২ রানে। তৃতীয় দিনেই তার ব্যাটে রচিত হয় আরেকটি ইতিহাস। টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে করেন দুইটি ট্রিপল সেঞ্চুরি।

এবার অবশ্য ছক্কায় নয়, মাখায়া এনটিনির বলে সিঙ্গেল নিয়ে তিনশ হয়েছিল শেবাগের। তবে ২৯০ পেরিয়ে ছক্কা একটি ঠিকই মেরেছিলেন। ২৯১ থেকে বাঁহাতি স্পিনার পল হ্যারিসকে মাথার ওপর দিয়ে উড়িয়ে দেন বাউন্ডারির বাইরে। পরের ওভারেই তিনশতে পা রাখেন, ২৭৮ বলে ছোঁয়া সেই মাইলফলক এখনও দ্রুততম ট্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ড। তিনশর কম বলে তিনশ স্পর্শ করার একমাত্র কীর্তিও সেটিই।

ঠিক ৩০৯ রানে অপরাজিত থেকে তৃতীয় দিন শেষ করেন শেবাগ। পরদিন, ২৯ মার্চ, প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে ছাড়িয়ে যান নিজের রেকর্ড। ব্রায়ান লারার ৪০০ ছুঁতে পারবেন কিনা, সেটি নিয়ে তখন ছিল কৌতূহল। কিন্তু এ দিন আর বেশি দূর এগোতে পারেননি তিনি। ৩০৪ বলে ৩১৯ রান করে থামেন এনটিনির বলে স্লিপে নিল ম্যাকেঞ্জিকে ক্যাচ দিয়ে।

সেই রেকর্ডের পূর্ণ হলো এক যুগ। এখনও শেবাগের ইনিংসই টেস্টে ভারতের সর্বোচ্চ। রেকর্ডটি ভাঙার হাতছানি ছিল করুন নায়ারের সামনে। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চেন্নাইতেই নায়ার করেছিলেন তিনশ। তবে তাকে ৩০৩ রানে অপরাজিত রেখে ইনিংস ঘোষণা করে দেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি।

চুক্তির বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের পাশে বিসিবি

ভারতের হয়ে ট্রিপল সেঞ্চুরি এই তিনটিই। ২০০৯ সালে আরেকটি ট্রিপল সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়েছিলেন শেবাগ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেবার ২৫৪ বলে ২৯৩ রানের খুনে ইনিংস খেলে আউট হয়ে যান মুত্তিয়া মুরালিধরনকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে।

২৯ মার্চ তারিখটি যে শেবাগের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা নিয়ে আছে, সেটি ফুটে ওঠে গতবছর এই দিনে তার টুইটেই, “২৯ মার্চ-তারিখটি আমার কাছে হয়ে গেছে স্পেশাল। ২০০৪ সালের এই দিনে পেয়েছিলাম প্রথম ভারতীয় হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরির করার সম্মান। চার বছর পর, একই দিনে ওই ৩০৯ ছাড়িয়ে খেলেছিলাম ৩১৯ রানের রেকর্ড ইনিংস।”


Exit mobile version