ছাত্রসংগঠন থাকতে পারবে না মাদ্রাসায়


ইউএনভি ডেস্ক:

কওমি মাদ্রাসায় কোনো রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠন থাকতে পারবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় মঙ্গলবার রাতের বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের এ কথা জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে উপস্থিত হেফাজত নেতারাও একমত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকে হেফাজতের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন হেফাজতে ইসলামের সদস্যসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী। এ সময় চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকার সাংসদ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও পুলিশের ঢাকার তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে সরকারের দিক থেকে পরামর্শের বিষয়ে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের সদস্যসচিব নুরুল ইসলাম জেহাদী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো কওমি মাদ্রাসায় কোনো রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠন থাকবে না। এটা আল-হাইআতুল উলয়া ও বেফাকসহ ছয়টি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডেরও সিদ্ধান্ত। এ ছাড়া বিষয়টি মাদ্রাসাগুলোর ভর্তির ফরমের অঙ্গীকারপত্রেই থকে। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছি। মন্ত্রী বলেছেন, সরকার কওমি মাদ্রাসা এবং হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণ করবে না। এটা সরকারের অবস্থান। এখন আপনারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটার বাস্তবায়ন করেন।’

হেফাজতের প্রতিনিধিদলের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈঠকে সরকারের দিক থেকে বলা হয়, হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্রদের একটা অংশ কাগজে–কলমে ভর্তি হয়। ক্লাসে থাকে না। এ ধরনের ছাত্ররা হামলা, ভাঙচুরে যুক্ত হয়। এখন থেকে ছাত্র ভর্তিতে কোটা রাখতে হবে। নির্ধারিত কোটার বাইরে ভর্তি করা যাবে না।

বৈঠকে হেফাজতের পক্ষ থেকে বলা হয়, পবিত্র রমজান মাসে অজানা আতঙ্কে দিন পার করছেন আলেম–ওলামারা। তাঁদের গ্রেপ্তার আতঙ্ক ও হয়রানি থেকে রেহাই দিতে এবং গ্রেপ্তার থাকা আলেম-ওলামাদের দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়। ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনার পর হেফাজতের নেতা–কর্মীদের নামে যেসব মামলা হয়েছিল, সেগুলো প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নিতেও অনুরোধ করা হয়।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ইয়াহিয়াও ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন দাবি দিয়েছি। ওনারা আশ্বস্ত করেছেন।’

বৈঠকে হেফাজতের পক্ষে আরও অংশ নেন হেফাজত নেতা ও বেফাকের মহাসচিব মাহফুজুল হক, অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী, আতাউল্লাহ হাফিজ্জি, হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতি জসিম উদ্দিন ও মঈন উদ্দিন।

হেফাজত নেতাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সাংসদ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেখা যাক’। মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ছাত্ররাজনীতি না থাকার বিষয়ে বৈঠকে সরকারের পরামর্শের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আস্তে আস্তে সব হবে’।

এর আগে গত ২৫ এপ্রিল কওমি মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকেরা প্রচলিত সব ধরনের রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকবেন বলে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ। আল-হাইআতুলের অধীনে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা হয়ে থাকে। ওই সিদ্ধান্তের কথা তখনই তাঁরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে জানিয়ে গেছেন।

তারপর গত রোববার রাতেও হেফাজতের সাবেক দুই যুগ্ম মহাসচিব মাঈনুদ্দীন রুহী ও মুফতি ফয়জুল্লাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসায় সাক্ষাৎ করেছিলেন। এ অংশ হেফাজতের প্রধান জুনায়েদ বাবুনগরীর বিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাঁরা হেফাজতের কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে সম্প্রতি সক্রিয় হন।

২০১০ সালের সরকার প্রণীত নারী নীতিমালার বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয় হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আহমদ শফীর নেতৃত্বে। তখন ১৩ দফা দাবি সামনে রেখে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। এর উত্থান ঘটে ২০১৩ সালে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করে মাঠে নামার পর।

ব্যাপক আলোচনায় আসে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে অবস্থানের পর। আট বছর পর আরেক সহিংসতার জন্য আবার আলোচনায় এসেছে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এ সংগঠন। এক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনায় হেফাজতের কয়েক শ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


শর্টলিংকঃ