‘ছেলে তো ফিরবে না, খুনিদের সাজা চাই’


ইউএনভি ডেস্ক:

‘আমাদের ছেলে তো আর ফিরে আসবে না। আমাদের চাওয়ার আর তেমন কিছু নেই। তবে, ওকে যারা খুন করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। ওদের শাস্তি হলে দীপনের আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে।’ এসব কথা বলেছেন দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সল আরেফিন দীপনের মা ফরিদা প্রধান।


আগামীকাল বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দীপন হত্যা মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য আছে। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান রায় ঘোষণা করবেন। রায়ে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রত্যাশা করছে দীপনের পরিবার।

দীপনের মা ফরিদা প্রধান বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই। যদি ওরা (আসামি) দোষী হয়, অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। নির্দোষ একজন মানুষকে খুন করা মানে পুরো মানবতাকে খুন করা। তারা দোষী না হলে তো আমাদের কিছু করার নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি তো জানতে পারলাম, ব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলার রায়ও হবে ১৬ তারিখে। অভিজিৎ ও দীপন একই স্কুলে পড়ত, একসঙ্গে থাকত, ঘুরে বেড়াত। অভিজিৎ আমাদের বাসায় আসত। দুজনকে এমনভাবে অকালে চলে যেতে হলো, এটা ভাবতে খুব কষ্ট হয়। মুহূর্তের মধ্যে আমাদের জীবন শেষ হয়ে গেল, ছাড়খার হয়ে গেল। আমরা তো নিঃস্ব হয়ে গেলাম। শুনেছি, একেকজন আসামির একাধিক আইনজীবী নিয়োগ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কী হবে, সেটা জানি না। যা হবার তাই হবে।’

দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর হলেও মামলাটির বিচার শেষ হচ্ছে। যারা প্রকৃত অপরাধী, তাদের বিচার হোক। যারা দীপনকে হত্যা করেছে, আইন অনুযায়ী তাদের সাজা হোক। বিচারক সবকিছু বিবেচনা করেই রায় দেবেন, এ আশায় আছি।’

দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান বলেন, ‘রায়টা বেশ দ্রুতই পাচ্ছি। অন্যান্য অনেক মামলার মতো রায়টা বিলম্বিত হচ্ছে না, সেটা ভালো দিক। আমরা অপেক্ষা করছি, দেখি রায়টা কী হয়।’ পলাতক দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেন, ‘আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হবে।’

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। আশা করছি, তারা খালাস পাবেন।’

২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। একই দিনে লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে ঢুকে এর স্বত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ টুটুল, লেখক রণদীপম বসু ও প্রকৌশলী আবদুর রহমানকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।

ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যার পর ওই দিনই তার স্ত্রী রাজিয়া রহমান শাহবাগ থানায় মামলা করেন। ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার ফজলুর রহমান চার্জশিট দাখিল করেন। গত বছর ১৩ অক্টোবর আট আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

গত ২৩ ডিসেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। চার্জশিটভুক্ত ২৬ সাক্ষীর মধ্যে ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। ৫ জানুয়ারি আত্মপক্ষ শুনানিতে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন।

গত ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ধার্য করেন আদালত।

মামলার আসামিরা হলেন—বহিষ্কৃত মেজর জিয়া, আকরাম হোসেন, মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আবদুস সবুর সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সাদ, খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার এবং শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের ওরফে জায়েদ ওরফে জাবেদ ওরফে আবু ওমায়ের। আসামিদের মধ্যে জিয়া ও আকরাম পলাতক।


শর্টলিংকঃ