জনকল্যাণে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী


প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা চাওয়া-পাওয়ার উর্ধে উঠে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগের জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, নীতি ও আদর্শ না থাকলে সাময়িক নেতা হওয়া যায়, কিন্তু সেই নেতৃত্ব দেশকে কিছুই দিতে পারে না।

নীতি-আদর্শ নিয়ে চললে দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা যায়। যা একজন রাজনীতিবিদের কাছে অমূল্য সম্পদ। তাই ত্যাগের মহিমায় বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ নিয়ে এদেশের মানুষের জন্য কিছু করে যেতে পারলেই জাতির পিতার আত্মা শান্তি পাবে।

গণভবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সারাজীবন বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষকে শুধু দিয়েই গেছেন, কোন কিছুই নিয়ে যাননি। শেষে বুকের রক্ত পর্যন্ত দিয়ে গেছেন। তার সন্তান হিসেবে আমার ব্যক্তিগত কোন কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই। সন্তানদের জন্য কি করে গেলাম সেটিও চিন্তা করি না। শুধুমাত্র দেশের মানুষকে কী দিতে পারলাম, তাদের জন্য কতটুকু করতে পেরেছি সেটিই আমার প্রধান লক্ষ্য, বিবেচ্য বিষয়। সেই লক্ষ্য নিয়েই ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে দিনরাত পরিশ্রম করেছি বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাযজ্ঞ, একই দিনে বাবা-মা-ভাইসহ সব আত্মীয়-স্বজন হারানোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বার বার আবেগে জড়িয়ে পড়েন, ভেঙ্গে পড়েন কান্নায়। এ সময় পুরো অনুষ্ঠানস্থলে পিনপতন নীরবতার সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধুর কন্যার সঙ্গে ছাত্রলীগের বহু নেতা-কর্মীর চোখ দিয়েও বইছিল শোকের অশ্রু।

আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধু আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। বুকের রক্তও দিয়ে গেছেন, কিন্তু কিছুই নিয়ে যাননি। আমার মা-ভাইসহ নিহতদের সবাইকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়, কাফনের কাপড়টুকুও দেয়া হয়নি। আর রেডক্রসের রিলিফের কাপড়ের পাড় ছিঁড়ে জাতির পিতাকে টুঙ্গিপাড়ায় দাফন করা হয়।

‘বাকশাল’ নিয়ে সমালোচনার জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বাকশাল বলে অনেকে গালি দেয়! কিন্তু বাকশাল মানে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ। দেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে বাকশাল গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন।

১৯ জেলাকে ভাগ করে ৬০টি জেলায় উন্নীত করে গণতন্ত্র ও ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে তার সুফল তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে দিতেই তিনি এ পদ্ধতি বেছে নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এই যে কর্মসূচী হাতে নিয়েছিলেন, তা যদি বাস্তবায়ন করতে পারতেন তবে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ ওই সময়ই মাথা উঁচু করে দাঁড়াত।

এ কারণে ষড়যন্ত্রকারীরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে নয়, বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারী একজনও বেঁচে না থাকেন, সেজন্য নির্বিচারে সবাইকে হত্যা করে। এজন্য খুনীরা শিশু শেখ রাসেলকে পর্যন্ত ছাড়েনি।

আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাত্র ১৫ দিন আগে আমরা দু’বোন বিদেশে গিয়েছিলাম। কিন্তু এক রাতেই সবাইকে হারিয়ে আমরা নিঃস্ব-রিক্ত, এতিম হয়ে যাই। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ৬টি বছর আমাদের দেশে ফিরতে দেয়া হয়নি। ’৮১ সালে দেশে ফিরলেও ওই সময় অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান আমাকে মিলাদ পড়তে ৩২ নম্বরের বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি।

রাস্তায় বসে বাবা-মা সহ পরিবারের নিহত সদস্যদের জন্য মোনাজাত করেছি, মিলাদ পড়েছি। শোক-ব্যথা বুকে নিয়ে দেশে ফিরে আমাদের একমাত্র লক্ষ্যই ছিল দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা, উন্নত জীবন দেয়া। সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।


শর্টলিংকঃ