জন্মদিনে হাসান আজিজুল হককে রাজশাহীতে ‘নাগরিক সংবর্ধনা’


নিজস্ব প্রতিবেদক :

বাংলা সাহিত্যে ছোটগল্পের বরপুত্র হিসেবে পরিচিত উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের ৮০তম জন্মদিন শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি)। এদিন ৮০ পেরিয়ে ৮১ বছরে পদার্পণ করবেন যশস্বী এই কথাসাহিত্যিক। ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত বাংলার বর্ধমানের যবগ্রামে জন্ম নেন হাসান আজিজুল হক। জন্মদিনে প্রখ্যাত কথাশিল্পীকে ‘ইউনিভার্সাল২৪নিউজ.কম’ পরিবারের পক্ষ থেকে অগ্রিম শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।

বাংলা ছোটগল্পের বরপুত্র প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।

এদিকে, হাসান আজিজুল হকের ৮০তম জন্মদিনে তাঁর জীবনের মাহেন্দ্রক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে রাজশাহীর সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে শনিবার বিকেল ৪টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ‘নাগরিক সংবর্ধনা’ দেওয়া হবে। রাজশাহীর গুণীজন ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। কথাসাহিত্যকের জন্ম-উৎসব উদযাপনে গঠিত কমিটি এরই মধ্যে সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাবির কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে গিয়ে দেখা যায়, বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে পুরো মিলনায়তনের চারদিক। সামনের রাস্তাজুড়ে রঙিন ঝাড়বাতি লাগানো হয়েছে। মিলনায়তনের সামনে হাসান আজিজুল হকের লেখা সমস্ত গ্রন্থের প্রদর্শনীর জন্য বসানো হয়েছে স্টল।

হাসান আজিজুল হক ৮০তম জন্মদিনে আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনার নিমন্ত্রণ পত্র।

হাসান আজিজুল হকের জন্ম-উৎসব আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব রাবির সহযোগী অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ বকুল জানান, রাবিতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী নিউ গভ. ডিগি কলেজ, বরেন্দ্র কলেজ, শাহ্ মখদুম কলেজসহ শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ নাগরিক সংবর্ধনায় অংশ নেবেন। সিটি মেয়র, সংসদ সদসসহ রাজশাহীর গুণী সকল ব্যক্তিবর্গকে এ অনুষ্ঠানে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আশা করি- গুণী এ মানুষটির জীবনের মাহেন্দ্রক্ষণে সকলে উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানটি ভাব-গাম্ভীর্যপূর্ণ করে তুলবেন।

এদিকে, জন্ম-উৎসব উদযাপন কমিটির আরেক সদস্য সচিব কবি আরিফুল হক কুমার স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, অনুষ্ঠানটি কয়েক ধাপে সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান, শুভেচ্ছা বক্তৃতা, সংবর্ধনা স্মারক প্রদান, সঙ্গীত পরিবেশন ইত্যাদি। অনুষ্ঠানে হাসান আজিজুল হকের কন্যা সুলতানা শরমিন জাহান তোতনের রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন ও দৌহিত্র অনির্বাণ হাসান অনিন্দ্য পিয়ানো বাজাবেন।

হাসান আজিজুল হক।

পরে গুণী কথাসাহিত্যেকর বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্মকে উপজীব্য করে আহসান কবির লিটন নির্মিত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘গল্পলোকের চিত্রকর’ প্রদর্শিত হবে। এছাড়া শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হাসান আজিজুল হকের সকল গ্রন্থের প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বইও বিক্রয় করা হবে।

এক নজরে হাসান আজিজুল হক:

১৯৩৯ সালে জন্ম নেওয়া হাসান আজিজুল হক জীবনের ৮ বছর ভারতবর্ষে, ২৩ বছর পূর্ব পাকিস্তানে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে ৪৮ বছর ধরে খুব কাছ থেকে সাধারণ মানুষের প্রবাহমান জীবন দেখেছেন। সেটিই ছিলো তাঁর লেখার মূল সুর। যেকারণে তাঁর লেখায় বারবার উঠে এসেছে, ক্ষুধা-মৃত্যু, মানুষের বেঁচে থাকার অবিরত সংগ্রাম।

২০১৮ সালে রাবি থেকে ডি-লিট ডিগ্রি দেয়া হয় হাসান আজিজুল হককে।

জানা যায়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশুনা নিজের গ্রামেই করেছেন হাসান আজিজুল হক। ১৯৫৪ সালে যবগ্রাম মহারাণী কাশীশ্বরী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৫৬ সালে খুলনার দৌলতপুরের ব্রজলাল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। যৌবনের শুরুতেই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন হাসান আজিজুল হক।

রাজনীতি করার কারণে পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পড়তে হয় তাঁকে। কলেজের অধ্যক্ষ তার মেধাবৃত্তি ফাইলচাপা করে রাখেন এবং শেষ পর্যন্ত তাকে কলেজ ছাড়তে বাধ্য করেন। পওে তিনি ভর্তি হন রাজশাহী সরকারি কলেজে। ১৯৫৮ সালে এই কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে অধ্যাপনা করেন।

মূলত ষাটের দশক থেকেই ছোটগল্পকার হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন হাসান আজিজুল হক। তবে ১৯৫৪ সালে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার পরই লিখে ফেলেন প্রথম উপন্যাস। ১৯৫৭ তে লেখেন উপন্যাস শামুক। যা ২০১৫ সালের বই মেলায় প্রকাশিত হয়। এরপর অসংখ্য ছোটগল্প, গ্রন্থ, প্রবন্ধ, নাটক, উপন্যাস, শিশুতোষ সাহিত্য।

ভারতে চন্দ্রবতী একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে হাসান আজিজুল হক।

কথাসাহিত্যে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা। এর মধ্যে রয়েছে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৭), বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭০), অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), কাজী মাহবুব উল্লাহ ও বেগম জেবুন্নিসা পুরস্কার। এছাড়া ১৯৯৯ সালে ‘একুশে পদকে’ ভূষিত হন হাসান আজিজুল হক। ‘আগুনপাখি’ উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার।

বিহাসে নিজ বাড়িতে প্রিয় চেয়ারে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাসান আজিজুল হক।

২০১৮ সালে হাসান আজিজুল হকের নিজের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করেন। এরআগে ২০১২ সালে তিনি ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি পান। দীর্ঘ ৩১ বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটিতে নিজ বাড়ি ‘উজান’-এ লেখালেখি নিয়ে মগ্ন আছেন হাসান আজিজুল হক।#


শর্টলিংকঃ