‘জহিরনদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, …নিজামপুরে যাও’


তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

দেড় শতাংশ খাস জমিতে মাটির আঁচড়ার ছোটঘর। কঞ্চির বেড়ায় ঘরজুড়ে মাটির প্রলেপ। বর্ষাকালে পুকুরের পানি উপচে উঠান ডুবে যায়। গেল বর্ষায় তো ভেঙেই গেছে ‘হেসেল ঘরটি’। তার মধ্যেই ঠাসাঠাসি করে বসবাস করেন বৃদ্ধা জহিরন নেছা (৭৮) ও তার বিধবা মেয়ে, স্বামী পরিত্যক্তা এক নাতনী ও ৪র্থ শ্রেণি পড়ুয়া আরেক নাতনী। তবে আসছে বর্ষা মৌসুম। জহিরনের শঙ্কা, ছোট ঘরখানা এই বুঝি ভেঙে গেলো!

খাস জমিতে বসতগড়া জহিরন ও তার বিধবা মেয়ে এবং দুই নাতনী। ছবি: তারেক রহমান

এমন দৃশ্য চোখের আয়নায় ধরলেই যে কারও মনে পড়বে পল্লীকবি জসিম উদ্দীনের সেই বিখ্যাত ‘আসমানী’ কবিতা। যেখানে আসমানীদের দেখতে রসুলপুরে রহিম উদ্দীনের বাড়িতে যেতে বলেছিলেন কবি।

তবে রসুলপুর নয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নের বাইপুরে গ্রামে গেলেই ঠিক তেমনই বাস্তব দৃশ্য চোখে পড়বে। মনের অজান্তেই হয়তো বা আপনি আওড়াবেন- ‘জহিরনদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, জহিরনের ভাঙা বাড়ি নিজামপুরে যাও…।’

যে বাড়িতে জহিরন, তার বিধবা মেয়ে পারভীন (৩৯), নাতনী স্বামী পরিত্যক্তা রিক্তা খাতুন (১৭) ও ৪র্থ শ্রেণি পড়ুয়া আরেক নাতনী জান্নাতুন খাতুন (৯) ঠাসাঠাসি করে কষ্টে দিনাতিপাত করেন। জহিরন ভিক্ষা করে এখণও চারজনের সংসার চালান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিজামপুর ইউপির বাইপুর দক্ষিণ পাড়ার জাহাঙ্গীর আলী খাঁ’র দ্বিতীয় স্ত্রী জহিরন নেছা (৭৮)। প্রায় ১৪ বছর পূর্বে বিধবা জহিরনের মেয়ে পাভিনের বিয়ে হয় নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেরার রুদ্রপুর সালকোনা গ্রামের রফিকুল ইসলামের সাথে।

পারভিনের ছোট মেয়ে রিক্তার দুই বছর বয়সে মারা যায় রফিকুল ইসলাম। স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা পারভিন দুই মেয়েকে নিয়ে ফিরে আসে মায়ের বাড়িতে।

এদিকে, পারভীনের বড় মেয়ে রিক্তার পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় বাল্যবিয়ে হয় একই এলাকার জনৈক ব্যক্তির দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে। কিন্তু রিক্তার স্বামীর মৃত্যু হলে বিধবা হয়ে সেও ফিরে আসে নানী জহিরনের কাছে।

জহিরনের স্বামী জাহাঙ্গীর আলী খাঁ’র প্রথম পক্ষের ছেলে মেয়েরা পিতার মৃত্যুর আগেই সমস্ত বিষয়-সম্পত্তি লিখে নেন। ফলে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয় দ্বিতীয় স্ত্রী জহিরন।

এরপর থেকে সীমাহীন কষ্টে দিনাতিপাত করছেন জহিরন। সঙ্গে যোগ হয়েছে বিধবা মেয়ে ও নাতনী। ভিক্ষায় উপার্জিত টাকা দিয়ে কোনো মতে একটি ঘর তুলে বসবাস করছেন তারা।

বৃদ্ধ জহিরন ও তার মেয়ে পারভিন জানান, এ বছর তাদের ওয়ার্ড মেম্বার পারভিনকে ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ দিয়েছেন। কিন্তু বৃদ্ধা মা জহিরন এর ভিক্ষা থেকে ও পারভিনের আয় দিয়ে  ৪ সদস্যের সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। ভবিষ্যতের জন্য কোন সঞ্চয় করতে পারছি না।

দুঃস্থ জহিরনের পুর্নবাসনের বিষয়ে নিজামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল হকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দেন। আর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, আবেদন করলে ওই পরিবারকে সহযোগিতার চেষ্টা করবেন।


শর্টলিংকঃ