Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

‘জামাই বাবু’র নাগাল পায় নি পুলিশ


বিশেষ প্রতিবেদক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. একেএম শফিউল ইসলাম লিলন হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে থাকা ‘জামাই বাবু’ নামে এক ব্যক্তির পরিচয় খুঁজে বের করতে পারেন নি তদন্ত কর্মকর্তারা। তবে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ‘ভবিষ্যতে তার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে’। ফলে জামাই বাবু ছাড়াই মামলার বিচার কাজ শেষ হয়েছে।

অধ্যাপক শফিউল ইসলাম লিলন   -ফাইল ছবি

অধ্যাপক শফিউল ইসলাম হত্যা মামলার রায়ে তিন আসামির ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার বেলা ১২টার দিকে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার জনাকীর্ণ আদালতে চাঞ্চল্যকর মামলাটির রায় ঘোষণা করেন। রায়ে খালাস পেয়েছেন আটজন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও ঠিকাদার আবদুস সামাদ পিন্টু (৩৪), কাটাখালি পৌর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম মানিক (৩৩) ও সবুজ (১৮)।

এদের মধ্যে পিন্টু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার নাসরিন আক্তার রেশমার স্বামী ও নগরীর খোজাপুর এলাকার মোজাহার এলাকার ছেলে। মানিক কাটাখালি এলাকার আশরাফ আলীর ছেলে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি সবুজ বাখরাবাজ দক্ষিণপাড়া এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে। এই তিনজনের মধ্যে সবুজ পলাতক আছেন। রায়ে বিচারক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করেছেন।

অধ্যাপক শফিউল ইসলাম ও ছেলে সৌমিন শাহরিদ জেভিন   -ফাইল ছবি

মামলার অভিযোগপত্রে দণ্ডপ্রাপ্ত পিন্টুর স্ত্রী নাসরিন আখতার রেশমাসহ মোট ১১ জন আসামি ছিলেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি সবুজ ছাড়া সবাই আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। বিচার চলাকালে মামলায় মোট ৩৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।

রাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. শফিউল ইসলাম লিলন লালনভক্ত মুক্তমনা ও প্রগতিশীল আদর্শের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর রাজশাহী মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) তৎকালীন পরিদর্শক রেজাউস সাদিক আদালতে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

বাবার শোকসভায় ছেলে জেভিন  -ফাইল ছবি

অভিযোগপত্রের বর্ণনা অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সবুজই প্রথমে  ড. শফিউলের মাথায় কোপ মারেন। মামলার এজাহারে কারও নাম উল্লেখ  ছিল না। তবে তদন্তে  বেরিয়ে আসে অভিযুক্তদের নাম। এরপর তাদের অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, এমন আটজনকে মামলার অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

‘জামাই বাবু’নামে  এক ব্যক্তির এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা উঠে আসে। তবে তদন্তকালে পুলিশ তার আসল পরিচয় উদঘাটন করতে পারে নি। ফলে মামলার রায়েও তার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসে নি। মামলার অভিযোগপত্রের ছয় নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে-‘মামলাটি তদন্তে আসামীদের জবানবন্দি মোতাবেক জামাই বাবু নামে একজন আসামীর নাম জানা গেলেও তাহার পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা পরিচিতি পাওয়া যায় নাই’।

অভিযোগপত্রে জামাই বাবু সম্পর্কে আরো বলা হয়, ‘ঘটনাটির সহিত জড়িত আসামিদের সহযোগী তদন্তে প্রাপ্ত জামাই বাবু এর সঠিক নাম-ঠিকানা পাওয়া যায় নাই। ভবিষ্যতে তার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

মামলার তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহতের ছেলে সৌমিন শাহরিদ জেভিন। তিনি বলেন, যারা সাজা পেলেন, তারা খুনি কি খুনি নয়, সে বিষয়ে আমার কোনো মতামত নেই। তবে মামলার তদন্ত নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তদন্ত ঠিকমতো হয়নি। হত্যার কী উদ্দেশ্য ছিল তাও উঠে আসে নি।

জানতে চাইলে মামলার অভিযোগপত্র দাখিলকারী পুলিশের পরিদর্শক রেজাউস সাদিক বলেন, তিনি সঠিকভাবেই মামলার তদন্ত করেছিলেন। তদন্তে যা পেয়েছিলেন সেগুলোই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। ‘জামাই বাবু’ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার আগেও কয়েকজন মামলাটির তদন্ত করেন। তারা জামাই বাবুর প্রসঙ্গটা এনেছিলেন। তিনি পরবর্তীতে তার পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেন নি। তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ ছিল না।

‘জামাই বাবু’ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু বলেন, আসামীদের জবানবন্দিতে এই নামটা এসেছে। কিন্তু তার পরিচয় সম্পর্কে কোনো তথ্যই জোগাড় করতে পারে নি পুলিশ। ফলে স্বাভাবিকভাবে রায়েও জামাই বাবুর কোনো প্রসঙ্গ নেই।

 


Exit mobile version