জুমার খুতবা চলাকালীন দানবাক্স চালানো কি জায়েজ?


ইউএনভি ডেস্ক:

মুসলমানদের কাছে শুক্রবার সপ্তাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। এর রয়েছে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দিন হল শুক্রবার। এই দিনে আদমকে সৃষ্টি করে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং তা থেকে বের করে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়েছে। আর এই দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। (সহিহ মুসলিম: ৮৫৪)

শুক্রবারের অন্যতম আমল হল জুমার নামাজ। এর ফজিলত অপরিসীম।এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, যে গোসল করে জুমায় আসে এবং সামর্থ্য মাফিক নামাজ পড়ে চুপচাপ ইমামের খুতবা শুনে ও জুমার নামাজ আদায় করে তার পেছনের দশদিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সহিহ মুসলিম: ৮৫৭-২৬)

জুমার পূর্বের দুই খুতবা জুমার আবশ্যকীয় অংশ। মুসল্লিদের জন্য তা মনযোগ ও গুরুত্বের সঙ্গে শোনা ওয়াজিব। খুতবা চলাকালীন অন্য কোন কাজ করা, কথাবার্তা বলা, নামাজ পড়া জায়েজ নেই। এমনকি পাশে কেউ কথা বললে তাকে ‘চুপ কর’ বলতেও নিষেধাজ্ঞা এসেছে হাদিসে।

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, জুমার দিন খুতবা চলা অবস্থায় যদি তোমার পাশের সাথীকে বল চুপ কর তাহলে তুমি একটি অনর্থক ও মন্দ কাজ করলে। (সহিহ বুখারি: ৯৩৪, সহিহ মুসলিম: ৮৫১)

খুতবা শোনার এত এত ফজিলত ও না শোনার গুনাহের কথা বর্ণিত হলেও দুঃখজনক বিষয় হল আমাদের সমাজে খুতবাতে ব্যত্যয় ঘটে এমন কাজ আয়োজন করে করা হয় প্রতিনিয়ত।

তন্মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য একটি হল কোন কোন মসজিদে খুতবা চলাকালীন দানবাক্স চালানো হয়। এটা ঠিক নয়। যেখানে খুতবার সময় নামাজ পড়া, অন্যকে চুপ করতে বলাও গুনাহের কাজ, ‍যদিও অন্য সময় তা উত্তম। সেখানে দানবাক্স চালানো তো আরও বড় গুনাহের কাজ। সুতরাং তা পরিহার করা জরুরি।

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওজু করে জুমার জন্যে মসজিদে এল। তারপর মনযোগের সঙ্গে খুতবা শুনল এবং নিরবতা পালন করল তার দশ দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর যে নুড়ি স্পর্শ করল সে অনর্থক ও গুনাহের কাজ করল। (মুসলিম, ৮৫৭:২৭)

এ বিষয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ আলেম মুফতি মানসুরুল হক বলেন, ‘খুতবা চলাকালীন দানবাক্স চালানো মারাত্মক ভুল। এতে গুনাহ তো হয়ই উপরন্তু জুমার ফজিলতও বাতিল হয়ে যায়।’

মসজিদের জন্য দান করা ও দান সংগ্রহ করা অনেক সওয়াবের কাজ। এসব কাজে মুসল্লিদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসা উচিৎ। আর এক্ষেত্রে উত্তম পন্থা হল সবাই নিজ উদ্যোগে দায়িত্বশীলদের কাছে অনুদান পৌঁছে দেয়া।হ্যা, একান্ত প্রয়োজন হলে সুন্নত নামাজের আগে বা পরে অথবা একদম ফরজ নামাজ শেষ করে দানবাক্স চালাতে সমস্যা নেই।

উল্লেখ্য, কোন কোন বুযুর্গ দানবাক্স চালিয়ে অনুদান সংগ্রহ করা পছন্দ করেন না। অতএব কর্তৃপক্ষের কাছে মসজিদের চাঁদা ওঠানোর জন্যে উত্তম কোন বিকল্প ভাবার অনুরোধ রইল।আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে মহিমান্বিত ‍জুমার দিনের যথার্থতা বোঝার ও তার মাহাত্ম্য রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

তথ্যসূত্র: সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, মুসান্নাফু ইবনি আবি শাইবা, আদদুররুল মুখতার, রাদ্দুল মুহতার, মাসিক আল কাউসার ও মাসিক রহমানি পয়গাম।


শর্টলিংকঃ