জেএমবির আমিরের নির্দেশে রাবি অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যা


ইউএনভি নিউজ:

জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) আমির ও সংগঠনের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধ্যাপক রেজাউল করিমকে হত্যা করা হয়। হত্যাকান্ডে পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব দেন অধ্যাপকের নিজ বিভাগের ছাত্র শরিফুল ইসলাম খালেদ ওরফে রাহাত ওরফে সাইফুল্লাহ ওরফে নাহিদ ওরফে আবু সোলায়মান।

হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একমাস আগে থেকে রেজাউল করিমের ওপর নজর রেখেছিলেন জঙ্গি শরিফুল ও তার দলের সদস্যরা। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্থানীয় জঙ্গি সদস্যদের মাধ্যমে স্পট রেকি ও তথ্য উপাত্ত, যেমন- ঠিকানা, ফোন নম্বর সংগ্রহ, অবস্থান গতিবিধি ইত্যাদি নজরদারি করা হয়েছিল।

গ্রেফতার জঙ্গি শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ।

শনিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র‌্যাব) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।

হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলার চার্জশিটভুক্ত ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জেএমবির শীর্ষনেতা শরীফুল ইসলাম খালিদ ওরফে রাহাত ওরফে সাইফুল্লাহ ওরফে নাহিদ ওরফে আবু সোলাইমান (২৭) গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল সকালে রাজশাহী নগরের শালবাগান এলাকায় নিজের বাড়ির পাশে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয় অধ্যাপক রেজাউল করিমকে। তার ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ পরে অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। সেখানে আসামি হিসেবে জেএমবির ৮ জঙ্গির নাম উল্লেখ করা হয়। আটজনের মধ্যে খায়রুল ইসলাম বাঁধন, নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান ও তারেক হাসান ওরফে নিলু ওরফে ওসমান অভিযোগপত্র দেওয়ার আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।

ঘটনার দুই বছর পর গত বছরের ৮ মে হত্যা মামলায় নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জেএমবির দুই সদস্যের মৃত্যুদণ্ড এবং তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। তবে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত শরিফুল ইসলাম খালেদ এতোদিন পলাতক ছিলেন।

অধ্যাপক রেজাউল করিম                               অধ্যাপক রেজাউল করিম

সংবাদ সম্মেলনে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, অধ্যাপক রেজাউল হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শরীফুল ইসলাম। তিনি রেজাউল করিমকে হত্যার এক মাস আগ থেকে তার ওপর নজর রেখেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘শরীফুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়,স্থানীয় জঙ্গি রিপন আলী ওরফে রকি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকদের ক্লাসের রুটিন মোবাইলে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে শরীফুলকে দিয়েছিল। রেজাউল হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল সংগ্রহ করে জঙ্গি ওসমান মিলু ও মাসকাওয়াত ওরফে আব্দুল্লাহ।’

হত্যাকাণ্ড শেষে হাসান ওরফে বাইক হাসান মোটরসাইকেলে করে শরীফুল ও খাইরুল ইসলাম ওরফে পায়েলকে নিয়ে রওনা দেয়। পায়েলের কাছে চাপাতি ও রক্তমাখা জামাকাপড় ছিল, তাকে খরখড়ি বাইপাসে নামানোর পর হাসান তার নাটোরের ভাড়া করা বাসায় শরীফুলকে নিয়ে ওঠে। পরদিন সকালে শরীফুল ঢাকায় চলে আসে এবং আমিরের নির্দেশে পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যায়।

জানা যায়, শরীফুল ইসলাম রাজশাহীর বাগমারায় ১৯৯১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৮ সালে এসএসসি এবং রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে ২০১০ সালে এইচএসসি পাশ করে। ২০১০-২০১১ সেশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি ২০১৩ সালে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় আহসান হাবিব ওরফে শোভনের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন। প্রথমত সে শোভনের মাধ্যমে রাজশাহী কেন্দ্রিক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত উগ্রবাদী গ্রুপে যোগ দেয়। এই গ্রুপের সদস্যরা অনলাইন ভিত্তিক উগ্রবাদী মতবাদ প্রচার করতো। পরবর্তীতে শোভনের মাধ্যমে রাজশাহীতে শোভনের মেসে গ্রেফতার শরীফুলের সঙ্গে শীর্ষ জঙ্গিনেতা তামিম চৌধুরীর পরিচয় হয়।

শরীফুল ছিল গুলশান হলি আর্টিজান হামলার পরিকল্পনাকারীদের একজন। তিনি পরিকল্পনা ছাড়াও প্রত্যক্ষভাবে অর্থায়ন সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ কাজে জড়িত ছিল। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাইবান্ধার সাঘাটায় একটি আস্তানায় সারোয়ার জাহান, তামীম এবং শরীফুলসহ শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিনেতারা বৈঠক করে।

হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলার আগে অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণের পর আত্মগোপনে যায়। এসময় তার সঙ্গে অপর জঙ্গি নেতা মামুনুর রশিদ রিপন তার সঙ্গে ছিল। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তারা ৩৯ লাখ টাকা হলি আর্টিজান হামলায় জন্য পাঠায়।

এক প্রশ্নের জবাবে মুফতি মাহমুদ বলেন, শরীফুল অধ্যাপক রেজাউলের সঙ্গে তার কোনও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল না। শুধু আমির ও সাংগঠনিকভাবে টার্গেট কিলিংয়ের অংশ হিসেবে তাকে হত্যা করা হয়।

শরীফুল দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিল। ২০১৭ সালের অক্টোবরের দিকে আবার সে আত্মগোপনে থেকে জঙ্গিদের সংগঠিত করতে থাকে। সম্প্রতি  র‍্যাব হলি আর্টিজান মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি মামুনুর রশীদকে গ্রেফতার করে। মামুনুর রশীদ গ্রেফতার হওয়ার পরে শরীফুল চাঁপাইনবাবগঞ্জে আত্মোপনে অবস্থান করছিল। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানায় এই র‍্যাব কর্মকর্তা।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।


শর্টলিংকঃ