ঝরেপড়া আমের আচার তৈরিতে ব্যস্ত মান্দার নারীরা


কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ : 

নওগাঁ’র মান্দা উপজেলার কালিগ্রাম শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও জাদুঘরের উদ্যোগে বিভিন্নভাবে গাছ থেকে ঝরে পড়া আম থেকে নানা রকমের সুস্বাদু আচার তৈরী করতে গ্রামীণ নারীদের উদ্বুদ্ধ করে সংগঠিত করা হয়েছে। এই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে ঐ গ্রামের বেশীরভাগ নারী এখন তৈরী করছেন আমের নানা রকম আচার এবং আমের রকমারী খাবার।

নিজেদের তৈরি আচার প্রদর্শনীতে নারীরা

জেলার মান্দা উপজেলার কালিগ্রামের শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও জাদুঘর কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বিভিন্ন সময় যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সারাদেশে ইতোমধ্যেই সুখ্যাতি অর্জন করেছে। এই পাঠাগারের উদ্যোক্তা রাষ্ট্রপতি পদকপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলম শাহ চৌধুরী।

ঝড়ে কিংবা অন্য কোন কারণে গাছ থেকে ঝরেপড়া আম কুড়িয়ে নানারকমের আচার তৈরীতে তিনি উদ্বুদ্ধ করেছেন গ্রামীণ নারীদের। কালিগ্রামের প্রতিটি বাড়ির নারীরা এখন তৈরী করেছেন হরেক রকমের আচার। এসব আচার প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও করেন জাহাঙ্গীর আলম।

ঐ গ্রামের গৃহিনী মৌসুমী চক্রবর্তী, ছাত্রী তানিয়া খাতুন ও গৃহিনী হালিমা খাতুন জানিয়েছেন, তাঁরা এই কৃষি তথ্য পাঠাগার ও যাদুঘর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চিনিতে আমের সন্দেশ, আমের জুস, আমের রস মালাই, আমের চমচম, আমস্বত্ব, আমচুর, আমের নবাবী, আমে বরই, আমের চচ্চড়ি, ডুবো আম ইত্যাদিসহ প্রায় শতাধিক রকমের আমের আচার ও আমের বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার তৈরী করতে শিখেছেন। এখন এই মওসুমে তাঁরা প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এসব আচাড় তৈরী করেছেন।

এই কৃষি তথ্য পাঠাগারের উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর আলম শাহ এবং জোৎস্না বেগম নামের এক সদস্য রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রে অমের আচার ও বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু খাবার তৈরী সম্পর্কে প্রশিক্ষন গ্রহন করেন।

পরবর্তীতে তাঁরা কালিগ্রামের সকল গৃহিনীদের এই প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। সেই প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে তাঁরা এসব আম কাজে লাগিয়ে আচার  তৈরী করছেন।

ঐ গ্রামের প্রায় ৮০ বছর বয়সী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, গ্রামীণ নারীদের এমন উৎসবমুখরভাবে আচার তৈরী করতে এবং তা প্রদর্শনীর মাধ্যমে সকলকে উদ্বুদ্ধ করা এলাকায় তাঁর রবয়সে এই প্রথম। এর আগে এমন কোন উদ্যোগ তিনি দেখেন নি।

উদ্যোক্তা শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর আলম শাহ জানান, এই উদ্যোগ নেয়ার ফলে এলাকার কোথাও আমগাছের নিচে আর পরিত্যক্ত আম পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছেনা। সব আম কাজে লাগিয়ে আচাড় তৈরী করেছেন নারীরা। এই উদ্যোগ বাণিজ্যিকভাবেও গড়ে তোলা সম্ভব।

মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এফ এম গোলাম ফারুক বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এই উদ্যোগের ফলেরএকদিকে যেমন ঝরেপড়া আমগুলো নষ্ট হচ্ছে না অন্যদিকে বিভিন্ন ধরন আচার ও আমের সুস্বাদু খাবার মানুষের পুষ্টির বিশেষ চাহিদা পুরণ হচ্ছে।

বর্তমানে তাদের তৈরী আচাড় ও খাবার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এক সময় এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। এ থেকে অর্থনৈতিক আয়ের একটি বড় দিক হতে পারে যা এসব গ্রামীণ নীরাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি করে তোলা সম্ভব হবে।

 


শর্টলিংকঃ