- ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ - https://universal24news.com -

টিকার দ্বিতীয় ডোজ: দেরি হলে কি ক্ষতি হবে


বাংলাদেশ বেশ সুশৃঙ্খলভাবে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও এসএমএসের মাধ্যমে টিকার তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করে টিকা দেওয়ার দায়িত্ব ভালোভাবেই সম্পন্ন করে আসছে। কিন্তু আর কয়েক দিনের মধ্যেই হাসপাতালগুলোয় টিকার সংরক্ষিত ডোজ শেষ হয়ে যাবে। এর পর কী?

এ ধরনের সমস্যা অন্য কিছু দেশেও রয়েছে। আমাদের দেশে প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার প্রায় দুই মাস পর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার কর্মসূচি চলছে। কিন্তু টিকার অভাবে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে কিছু দেরি হলে প্রথম ডোজ টিকার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাবে কি না বা কিছু সময় পর দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিলে একই ধরনের সুফল পাওয়া যাবে কি না, এসব বিষয়ে বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করছেন। তাঁদের অনেকে বলছেন, তিন বা চার মাস পরও দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়া যাবে। সুফল অক্ষুণ্ন থাকবে।

যুক্তরাজ্য ও কানাডায় দ্বিতীয় ডোজ টিকা এমনকি চার মাস পরেও দেওয়া হয়েছে। যদি তা-ই হয়, তাহলে আমাদের এখনই হতাশ হওয়ার দরকার নেই। চুক্তি অনুযায়ী ভারত থেকে টিকা আমদানি অব্যাহত রাখার চেষ্টা তো আছেই। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অন্যান্য দেশ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আমদানির চেষ্টা অব্যাহত থাকুক। দুই মাসের মধ্যে যদি টিকা আনা যায়, তাহলে দুশ্চিন্তার অবসান হবে।

কিন্তু অন্য কোনো উপায় আছে কি না

চীন ও রাশিয়া থেকেও টিকা আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই টিকা দিয়ে নতুন আরও অনেক ব্যক্তিকে টিকা দেওয়া যাবে। এভাবে দুই ধরনের টিকার মিশ্রণ সম্ভব কি না, তা বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে দেখছেন। অর্থাৎ, প্রথম ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অন্য টিকা নিলে কি একই ধরনের সুফল পাওয়া সম্ভব? কোনো ক্ষতি হতে পারে কি? এসব প্রশ্নের নিশ্চিত উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি।

বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, একই ধরনের টিকায় সবচেয়ে বেশি সুফল পাওয়া যায়। কিন্তু সে সুযোগ যদি একেবারেই না থাকে, তাহলে মিশ্র টিকা, অর্থাৎ দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অন্য টিকা নেওয়া যেতে পারে বলে তাঁদের অনেকে বলছেন। এতে ক্ষতি হবে না, কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া একটু ভিন্ন ধরনের হতে পারে।

বিবিসির এক খবরে জানানো হয়েছে, অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের অধ্যাপক ম্যাথিউ স্ন্যাপ বলছেন, এক ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও আরেক ডোজ ফাইজারের টিকা নিলে প্রাপ্তবয়স্কদের শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা ও মাংসপেশিতে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে এগুলো খুব গুরুতর নয়।

 

শুধু তা-ই নয়, এ ধরনের মিশ্র টিকায় দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা পাওয়া যায় বলেও তাঁদের গবেষণায় জানা গেছে। প্রথম আলো অনলাইনে ১৩ মে এ বিষয়ে প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে দ্য কম-কভ নামে একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। তাতে দেখা গেছে, প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পরে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিলে দীর্ঘ মেয়াদে সুরক্ষা পাওয়া যায়। করোনার নতুন ধরন থেকে সুরক্ষা পেতে ও সরবরাহ বিঘ্নিত হলে ক্লিনিকগুলোকে দুই ধরনের দুই ডোজ টিকা দিতে বলা হয়েছে।

দুই ডোজ টিকা কতটা সুরক্ষা দেয়

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাপ্তাহিক দ্য ইকোনমিস্ট ১৩ মে সংখ্যায় বিশ্বে করোনায় মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে করণীয় সম্পর্কে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছে। ‘করোনা অতিমারি: সারা বিশ্বের মানুষকে টিকা দেওয়ার এক কোটি কারণ’ (The pandemic: Ten million reasons to vaccinate the world) শিরোনামে লেখা সম্পাদকীয়তে বিশ্বব্যাপী সব মানুষকে দ্রুত টিকা দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। তাদের লেখায় একটি জরুরি সাবধানবাণী উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, টিকা কার্যক্রম বৈশ্বিক পর্যায়ে নিতে না পারলে ভারতের মতো ট্র্যাজেডি অন্যান্য দেশেও ঘটতে থাকবে।

লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করবে। দুই ডোজ টিকায় যে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ সুরক্ষা পাওয়া যায়, সেটা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। এখন প্রশ্ন হলো কত দ্রুত আমরা অন্তত ১২ থেকে ১৩ কোটি মানুষের জন্য টিকা সংগ্রহ করতে পারব। আমাদের সুবিধা হলো গ্রামপর্যায়ে টিকা দেওয়ার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও অভিজ্ঞতা আছে। টিকা সংগ্রহই এখন প্রধান সমস্যা। আমরা আশা করব, সারা বিশ্ব সচেতন ও সতর্ক হবে। কারণ, কোনো দেশই বিচ্ছিন্নভাবে পরিপূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে না, যদি ধনী-অনুন্নতনির্বিশেষে সব দেশ টিকা দিতে না পরে। তাই দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

লকডাউন আরও কিছু দিন?

লকডাউন বা চলতি বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। কারণ, ঈদের ছুটির পর একসঙ্গে সবাই ফিরে আসার চেষ্টা করলে করোনা ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আরও বাড়বে। এ বিষয়ের প্রতি সবাইকে গুরুত্ব দিতে হবে। ঢিলেঢালা লকডাউনে কাজ হবে না। নিজের এবং আশপাশের অন্য সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এর অন্যতম হলো মুখে মাস্ক, ভিড়ের মধ্যে বেশি সময় না থাকা, দূরত্ব বজায় রাখা, কিছু সময় পরপর সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ইত্যাদি। আমাদের অবহেলায় যেন করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের কবলে দেশকে পড়তে না হয়।

আব্দুল কাইুয়ম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
quayum.abdul@prothomalo.com