টেস্ট অঙ্গনে ১৯ বছর পূর্ণ করল বাংলাদেশ


২০০০ সালের ১০ নভেম্বর প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে মাঠে নামে বাংলাদেশ। এরপর নানা চড়াই-উৎরাই আর বন্ধুর পথ মাড়িয়ে বাংলাদেশ পাড়ি দিয়েছে অনেক পথ। প্রথমে অনভিজ্ঞ, এরপর নবীন, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট এখন প্রাপ্ত বয়স্ক। দেখতে দেখতে টেস্ট অঙ্গনে আজ ১৯ বছর পূর্ণ করল বাংলাদেশ।

২০০০ সালের ১০ নভেম্বর টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের নাম লিখিয়েছিল বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল নিজেদের প্রথম টেস্ট। সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে সেদিন টস করতে নেমেছিলেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়।

আর নিজেদের টেস্ট অভিষেকেই ৪০০ রান করেছিল বাংলাদেশ। অথচ অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দল তাদের টেস্ট অভিষেকে ৩০০ রানই করতে পারেনি। ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড তো ২০০ রানই পেরোতে পারেনি। আর দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ৮৪ রানেই।

টেস্ট অভিষেকে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোরের রেকর্ড জিম্বাবুয়ের, ৪৫৬ রান। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরটাই বাংলাদেশের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোরও বাংলাদেশের দখলে। দেশের এবং নিজের অভিষেক টেস্টেই ১৪৫ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেলেছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৯১ রানে অলআউট হওয়ায় ভারতের কাছে ম্যাচটি হেরে গেলেও সাদা পোশাকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎটা বেশ উজ্জ্বলই দেখাচ্ছিল। কিন্তু শুরুর উজ্জ্বলতাটা পরবর্তী সময়ে ছড়িয়ে দিতে পারেনি বাংলাদেশ।

২০০০ থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ১১৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে জয় এসেছে ১৩ ম্যাচে। হেরেছে ৮৬টিতে। আর ড্র করেছে ১৬ ম্যাচ।

প্রথম টেস্ট খেলার পাঁচ বছর পর ২০০৫ সালে চট্টগ্রামের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। পরের ম্যাচ ড্র করে সেবারই প্রথম সিরিজও জিতে টাইগাররা। টেস্টে বাংলাদেশের সবশেষ জয়টি এসেছে গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ঘরের মাঠে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ৬৪ রানে জেতার পর দ্বিতীয় টেস্ট জিতে নেয় ইনিংস ব্যবধানে। বাংলাদেশের ১৩টি জয়ের ৬টি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, ৪টি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এবং ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি করে।

টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ৬৩৮, ২০১৩ সালে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ওই ইনিংসেই দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিকুর রহিম। এরপর ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস ও সাকিব আল হাসান। সাদা পোশাকে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ৪৩ রানে।

দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট রান তামিম ইকবালের (৫৮ ম্যাচে ৪৩২৭ রান)। সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরিও তামিমের (৯টি)। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস সাকিব আল হাসানের (২১৭, ২০১৭ সালে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে)।

সবচেয়ে বেশি উইকেট সাকিবের (৫৬ ম্যাচে ২১০ উইকেট)। দেশের হয়ে ১০০ বা এর বেশি উইকেট আছে আর মাত্র একজনের, মোহাম্মদ রফিক। ৩৩ টেস্টে রফিকের উইকেট ঠিক ১০০টি।

দেশকে সবচেয়ে বেশি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম (৩৪ ম্যাচে)। সবচেয়ে বেশি টেস্টও খেলেছেন তিনি (৬৭টি)। টেস্টে তার মোট রান ৪০২৯টি। সেঞ্চুরি ৬টি।

বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন ও প্রথম টেস্ট : ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়ের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটের গতিপথ হঠাৎ করেই বদলে যায়। এই ট্রফি জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে স্কটল্যান্ড ও শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে তাদের আগমনী বার্তা জানিয়ে দেয়।

এরপর বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০০ সালের ২৬ জুন আইসিসি বাংলাদেশকে টেস্ট মর্যাদা প্রদান করে। টেস্ট ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের তালিকায় প্রবেশ করার প্রায় পাঁচ মাসের মাথায় ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ।

গেল ১৯ বছরের বাংলাদেশের টেস্ট পরিসংখ্যানে চোখ বুলালে হয়তো সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতাই চোখে পড়বে বেশি। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে; বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছে। মুশফিক, রিয়াদ, সাকিব, তামিম ও মুমিনুল বাংলাদেশকে নতুন সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।


শর্টলিংকঃ