ডাক্তার কেন নিজের টাকায় পিপিই কিনছেন না!


অনেকেরই জানা নেই- যে বা যারাই ব্যবহৃত পিপিই পরিষ্কার করতে যাবে তাদেরই উল্টো আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। আর মাস্ক লাগবে (এন-৯৫) যেটা বর্তমানে মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে না। পেলেও ৬০০ থেকে ৮০০টাকা। এটাও কিন্তু একবারই ব্যবহার করা যাবে।এরপর ফেলে দিতে হবে।তার মানে এটারো খরচ অনেক।বাজারের অন্য কোন মাস্ক দিয়ে করোনা আটকানো যাবে না।

পার্সোনাল প্রক্টেটিভ ইকুইমেন্ট-পিপিই কিন্তু একটাতেই মাস চলে না।প্রত্যেকটা সেট ওয়ান টাইম ইউজেবল। এখন এই সময়ে ১ সেট সত্যিকারের চচঊ ন্যূনতম দুই থেকে তিনহাজার টাকা দাম।দিনে ১ টা লাগলেও মাসে ৭০ -৮০ হাজার টাকার চচঊ কিনতে হবে। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য কোন পিপিই দিয়ে করোনা সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব না।

আর কোন সর্দি কাশির রোগীর করোনা আছে আর রোগী র কোন সুস্থ এটেন্ডেন্ট করোনার বাহক এটা তো টেস্ট ছাড়া বোঝার উপায় নাই। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা যেসকল ডাক্তার দিবেন তাদের অবশ্যই পিপিই পরতে হবে। এতো টাকা আমাদের দেশে জুনিয়র চিকিৎসকদের জন্য বহন করা কি সম্ভব?  আর বেসরকারি সংস্থা কয়দিন দিতে পারবে! সরকারি উদ্যোগ ছাড়া এটা সম্ভব না।

অনেকেই ডাক্তারদের সমালোচনা করেন যে, ১২০০ টাকা ভিজিট নেন যে ডাক্তাররা তারা কেন পিপিই কিনছে না।আসলে  এক হাজার টাকা বা তার বেশি টাকা দিয়ে যাদেরকে আপনারা (রোগী) দেখান,তারা নিজেদের জন্যে পিপিই চাচ্ছেন না।উনাদের অপেক্ষাকৃত কমই হ্যান্ডল করতে হয় এসব পেশেন্টদের।প্রাইভেট প্র্যাকটিস যারা করেন, তারা এসব কিনেই নিয়েছেন বা তার প্র্যকটিসের জন্য চাচ্ছেন না।উনারা যারাই  বলছেন এইসব জুনিয়র ডাক্তার দের কথা।যারা বেশিবভাগই চেম্বার করেন না। আর করলেও তাদের ভিজিট ২০০-৫০০ টাকা। অন্যান্য অনেক যুদ্ধের মতো করোনা যুদ্ধের সম্মুখ যোদ্ধাও কিন্তু এমন ডাক্তাররা।এখন জেনে বুঝে আপনার দায়িত্ব তাদের পিপিইর জন্য আপনার দাবী তোলা।

না হলে তাদের থেকেই কিন্ত আপনি বা সাধারণ মানুষ বা সাধারণ রোগীরা আক্রান্ত হবেন।আরও একটা ব্যাপার আছে।আই.সি.ইউ র খরচ সর্ম্পকে সবারই  ধারণা আছে। এইসব জুনিয়র ডাক্তার নিজেরা বা তাদের মাধ্যমে তার বৃদ্ধ বাবা মা/শিশু যদি আক্রান্ত হয় তাদের চিকিৎসার ব্যয় তারা কিভাবে বহন করবে যার সংসারই চালানো কঠিন।

দেখুন অন্যান্য দেশে :

চীনে করোনার চিকিৎসায় যুক্ত ডাক্তারদের বেতন ৩/৪ গুণ বাড়ানো হয়েছে। ইরান চিকিৎসা করতে গিয়ে মৃত ডাক্তারদের শহীদ আখ্যা দিয়েছে।ইংল্যান্ড-এ ডাক্তারদের জন্য অনেকগুলো ব্র্যান্ড তাদের পণ্যে ৫০-৬০% ছাড় দিয়েছে।ম্যকডোনাল্ড/স্টারবাকস সহ অনেক ব্র্যান্ড এন,এইচ,। ডাক্তারদের জন্য ফ্রি করে দিয়েছে।অনেক দেশেই দেখা যাচ্ছে, ডাক্তাররা লম্বা ডিউটি করে আসলে বাজার /রান্না না করতে পারে এই রকম অনুভূতি থেকে প্রতিবেশীরা খাবার দিয়ে যায়। ভারত ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য বীমা করার ঘোষণা দিছে।

আর আমাদের দেশে? সত্যিকারের যাদের দরকার তাদের পর্যাপ্ত পিপিই না দিয়ে কিনে নিতে বলা হচ্ছে। বেশ কজন ডাক্তারকে বাসা ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। তারা বলে,”আপনি এ বাসায় থাকলে পুরা কমপ্লেক্স এ রোগ ছড়াবে”। ডেল্টায় রোগী মারা যাবার পর ঐ হাসপাতালের ডাক্তারদেরকে বাসা ছেড়ে দিতে বলেছে বাড়িওয়ালারা। কক্সবাজারে করোনা পজিটিভ রোগীর চিকিৎসা করার পর ডাক্তারকে জেলা পরিষদের ডাক বাংলো থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে উনি হাসপাতালের একটি কেবিনে আশ্রয় নিয়েছেন।

সেদিন রাজবাড়িতে ইমার্জেন্সি ডিউটি শেষে ভ্যানে করে বাসায় ফেরার সময় বিসিএস ক্যাডার ডাক্তারকে তার থেকে নিন্ম পদমর্যাদাএ পুলিশের হাতে মার খেতে হয়েছে। ঢাকায় বাই সাইকেল দিয়ে ডিউটিতে যাওয়ার সময় পুলিশ ডাক্তারকে গালি দেয়। বিএস‌এম‌এম‌ইউ থেকে ডিউটি ফেরত ডাক্তারকে ক্যান্টনমেন্ট এ ঢুকতে কতে দেওয়া হয় না।পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট না দিয়েই চিকিৎসা দিতেই হবে বলে আদেশ জারি করা হয়েছিল।

চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সেনাবাহিনী পুলিশকে ক্ষমতা দিয়ে আদেশ দিচ্ছেন !(পরে অবশ্য তা তুলে নেয়া হয়েছে,কিন্তু ক্ষত তো থেকেই যায়) যাদের প্রয়োজন নেই তার পিপিই কিনে বাজার ফাঁকা করে ফেলেছেন।টক শো, ফেসবুকে স্ট্যটাস দিয়ে ডাক্তারদের অপমান করছেন,কেন নিজের পিপিই কিনছেন না বলে ক্ষোভের বাষ্প সমাজে ছড়াচ্ছেন।এভাবে ডাক্তারদের গায়ে নিজেদের অক্ষমতা চাপিয়ে দেয়া আর জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো ঠিক হচ্ছে? বরং আসুন আমরা সবাই ডাক্তার দের পিপিই দাবি করি অর্থাৎ নিজেদের বাঁচাই।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, সার্জারি বিভাগ,
শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন এন্ড সার্জারি, ঢাকা।


শর্টলিংকঃ