Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

ডা. সারওয়ার আলীকে বাসায় ঢুকে হত্যার চেষ্টা


ইউএনভি ডেস্ক:

ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলীকে বাসায় ঢুকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত রোববার রাতে তার উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের বাসায় ওই ঘটনা ঘটে। পরিবারের লোকজন চিৎকার দিলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

এর আগে একই ভবনে তার মেয়ের ফ্ল্যাটে ঢুকে দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাকে খুঁজতে থাকে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জড়িত দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। গত রাতে তিনি ওই ঘটনায় উত্তরা-পশ্চিম থানায় মামলা করেছেন। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, ডা. সারওয়ার আলী এখন সুস্থ রয়েছেন।

ওই রাতেই জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ‘৯৯৯’-এ ফোন পেয়ে পুলিশ তার বাসায় যায়। তল্লাশি চালিয়ে বাড়ির নিচতলায় গাড়ির গ্যারেজে দুর্বৃত্তদের ফেলে যাওয়া একটি ব্যাগ থেকে সাতটি নতুন চাপাতি, বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার একটি যন্ত্র, রশি, একটি আইপ্যাড ও ভিডিও ক্যামেরার স্ট্যান্ড উদ্ধার করে।

বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সারওয়ার আলী দেশের একজন বুদ্ধিজীবী, মুক্তবুদ্ধি চর্চার মানুষ। বাসায় ঢুকে তাকে হত্যাচেষ্টার পর পুরো পরিবারটিই আতঙ্কে রয়েছে। তার ও মেয়ের বাসায় দুর্বৃত্তরা ঢুকে তাকে খুঁজলেও তারা স্বর্ণালঙ্কার বা অন্য কিছু দাবি করেনি। সুযোগ থাকলেও বাসায় লুটপাট চালায়নি। সারওয়ার আলী মনে করছেন, কোনো উগ্রবাদী গ্রুপ বা জঙ্গিগোষ্ঠী তাকে হত্যার জন্যই বাসায় ঢুকেছিল।

পুলিশ জানিয়েছে, সারওয়ার আলী উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে নিজের চারতলা বাড়ির চতুর্থ তলায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকেন। রোববার রাত সোয়া ১০টার দিকে দুই ব্যক্তি তার বাসার সামনে যায়। তাদের একজনের কাঁধে ব্যাগ ছিল। ওই দু’জনের একজন বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীর কাছে নিজেকে সারওয়ার আলীর পুরোনো গাড়িচালক বলে পরিচয় দেন। তখন নিরাপত্তাকর্মী গেট খুলে দিলে তারা দ্রুত বাসায় ঢুকে পড়ে।

ডা. সারওয়ার আলী ঘটনার বিবরণ দিয়ে সমকালকে জানিয়েছেন, রোববার রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে তৃতীয় তলায় দুই ব্যক্তি তার মেয়ের ফ্ল্যাটের কলিংবেল চাপে। দরজা খুলে দিলে তারা সঙ্গে সঙ্গেই ধারালো অস্ত্রের মুখে মেয়েকে জিম্মি করে ফেলে। এক পর্যায়ে জামাতা ও ১২ বছর বয়সী নাতিকেও জিম্মি করা হয়। তখন অস্ত্রধারী ওই দুই ব্যক্তি তার নাম ধরে তাকে খুঁজতে থাকে। প্রাণভয়ে মেয়ে তাদের জানায় বাবা চতুর্থ তলায় থাকেন। তখন অস্ত্রধারী একজন মেয়ে, জামাতা ও নাতিকে জিম্মি করে রাখে। অন্যজন চতুর্থ তলায় তার ফ্ল্যাটে গিয়ে কলিংবেল চাপে। তিনি নিজেই দরজা খুলে দিলে সঙ্গে সঙ্গেই আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী এক তরুণ তাকে ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে মারতে উদ্যত হয়। তিনি পরিচয় জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি ‘তোকে মেরে ফেলব’ বলে হুমকি দেয়। এমন পরিস্থিতি দেখে বাসার অন্য সদস্যরা চিৎকার দিলে দোতলার একজন ভাড়াটে ও তার ছেলে দৌড়ে আসেন। তখন দুর্বৃত্তরা চলে যায়। এরপর তিনি ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশ ডাকেন।

তিনি জানান, ঘটনার পর তিনি জানতে পারেন, তার ফ্ল্যাটে হানা দেওয়ার আগেই মেয়ের ফ্ল্যাটে গিয়ে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা তাকে খুঁজছিল। তখন একজন নিচে তিনজনকে জিম্মি করে রাখলেও অন্যজন তার ফ্ল্যাটে চলে আসে। তবে তৃতীয় তলায় অবস্থান নেওয়া দুর্বৃত্ত মোবাইল ফোনে অন্য কাউকে ওপরে আসতে বলছিল। এ থেকে তিনি ধারণা করছেন, বাসার ভেতরে দু’জন ঢুকলেও বাইরে দুর্বৃত্তদের আরও সদস্য অপেক্ষা করছিল।

ডা. সারওয়ার আলী বলেন, অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা বাসায় তছনছ করেনি। কোনো স্বর্ণালঙ্কারও নেয়নি বা চায়নি। তৃতীয় তলায় তাকে খুঁজছিল। না পেয়ে চতুর্থ তলায় আসে। তিনি ধারণা করছেন, কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী তাকে হত্যার জন্য এসেছিল। কিন্তু বাসার সদস্য এবং ভাড়াটেদের তৎপরতার কারণে তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন। বিষয়টি তিনি কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকেও জানিয়েছেন।

পুলিশের উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. কামরুজ্জামান সমকালকে বলেন, দুর্বৃত্তদের একজন সারওয়ার আলীর পুরোনো গাড়িচালক পরিচয় দিয়ে ভেতরে ঢুকেছিল। ওই ঘটনায় বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। দুর্বৃত্তদের শনাক্তে তদন্তও শুরু হয়েছে।

এদিকে উত্তরা-পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ সমকালকে বলেন, ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে ওই রাতেই তারা ঘটনাস্থলে যান। বাসার নিচ থেকে একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। তাতে সাতটি চাপাতি ছাড়াও অন্যান্য আলামত পাওয়া যায়।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, বাড়িটিতে সিসি ক্যামেরা থাকলেও তা অকেজো ছিল। বাড়িটিতে কেউ ঢুকলে পরিচয় নথিভুক্ত করা হতো না। সম্ভবত নিরাপত্তাকর্মী ওই দুর্বৃত্তদের চিনতে পারে। সে তাদের বাড়িতে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে। এজন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পুরো বিষয়টিই তদন্ত চলছে। সূত্র: সমকাল


Exit mobile version