তানোর পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে ৪ বছরে ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ


সাইদ সাজু, তানোর:

রাজশাহীর তানোর পৌরসভার মেয়র এবং উপজেলা বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের  অভিযোগ উঠেছে । মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরে থেকে ৪ বছরের দূর্নীতি তুলে ধরে দূর্নীতিদমন কমিশনে অভিযোগ পাঠিয়েছেন ৬ কাউন্সিলর।

অভিযোগ তুলে তারা বলেন, এসব অর্থ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী দায়িত্ব প্রাপ্ত পৌরসচিব জাহাঙ্গীর আলম, হিসাব রক্ষক ও কার্যসহকারী পরস্পর যোগসাজসে গত ৪ বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকা আত্নসাৎ করেছেন।

অভিযোগের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে স্থানীয় সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ছাড়াও সরকারী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দফতরে। এছাড়াও অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে, পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, হিসাব-রক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুস সবুর ও কার্যসহকারী মাহাবুব আলমকে।

এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, পৌর এলাকার কালিগঞ্জ হাট থেকে তালন্দহাট পর্যন্ত রাস্তার পাশে গাছে চুন ও রং করার নামে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা। বিভিন্ন ওয়ার্ডে রিং পাইপ সরবরাহের নামে ১১ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা। এছাড়াও ২০১৬- ২০১৮ অর্থবছরে রাজস্ব ও সরকারি বরাদ্দ এডিপি ফান্ডের ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার কোনো কাজ ছাড়াই  তসরুফ করেন মেয়র।

চার বছর ধরে পৌরসভার নিজস্ব রোলার গোপনে ঠিকাদারদের কাছে ভাড়া দিয়ে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে, গোল্লাপাড়া হাটের মাছ পট্টির টিনসেটের কয়েকটি টিন পরিবর্তন করে ১১ লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। উপজেলার মাসিন্দা এলাকায় তানোর-রাজশাহী সড়কের কালিগঞ্জ মোড়ে ভাঙ্গা রাস্তায় অপরের দেয়া ৪ ট্রলি ইটের খোয়া  রাস্তা সংস্কার দেখিয়ে তানোর পৌর মেয়র এডিপি ও টিআর প্রকল্পের ১০ লক্ষ টাকা আত্নসাৎ করেন পৌর মেয়র।

সেই সঙ্গে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানির পাম্প স্থাপনে প্রকৃত খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু প্রত্যেক পানির পাম্প স্থাপনে ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা খচর দেখিয়ে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা তসরুফ করেন মেয়র। অপর দিকে জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্পের নামে ১২ কোটি টাকার মধ্যে গোপনে ৭ কোটি টাকার কাজ টেন্ডার দিয়ে অর্থ রোপাটের মহাউৎসব চলছে। এসব কাজ কর্মে মেয়র কোন কাউন্সিলরদের সঙ্গে কোন পরামর্শ ও সমন্বয় মিটিং করেন না। মেয়র তার ইচ্ছেমত পৌরসভার কাজকর্মের নামে পৌরসভার অর্থ তসরুফ করছেন বলে জানিয়েছেন কাউন্সিলররা।

এনিয়ে তানোর পৌরসভার সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর মোমেনা আহম্মেদ বলেন, প্রায় প্রতিটি প্রকল্পেই মেয়র নামমাত্র প্রকল্প দেখিয়ে পৌরসভার অর্থ আত্নসাৎ করেছেন। সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্পে সরকারি ভাবে তানোর পৌরসভায় ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ আসে, এরমধ্যে ৭ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প দেখিয়ে একটি পত্রিকায় ও ইন্টারনেটে টেন্ডার দিয়ে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে তার নিজস্ব এক ঠিকাদারকে নামমাত্র কাজ করে জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্পের অর্থ তসরুফ করছেন।

কাউন্সিলরদের সাক্ষর ছাড়া কিভাবে টাকা তোলা হয় জানতে চাইলে তারা বলেন, অলিখিত রেজুলেশন খাতায় প্রতিমাসে কাউন্সিলরদের স্বাক্ষর নেয়া হয়। পরে ওই স্বাক্ষর দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদন করে প্রকল্পের টাকা ও রাজস্ব তহবিলের অর্থ তসরুফ করেন মেয়র। এছাড়াও সরকারি বরাদ্দের অর্থ ইচ্ছেমত বিভিন্ন প্রকল্পের নামে উত্তোলন করে আত্বসাত করছেন।

এনিয়ে যোগাযোগ করা হলে তানোর পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এসব বিষয়ে কোন তথ্য দেয়া যাবে না। মেয়রের সাথে যোগাযোগ করতে করেন আপনারা।

এব্যাপারে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তানোর পৌর মেয়র মিজানুর রহমান মিজান বলেন, তদন্ত করতে হবে জানিয়ে তিনি মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

উল্লেখ্য, অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন, পৌরসভার সংরক্ষতি আসনের নারী কাউন্সিলর মোমেনা আহমেদ, পলি বেগম ও জুলেখা বেগম। এছাড়াও ১ নন্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাছির উদ্দিন, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মশিউর রহমান ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর উজ্জল হোসেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী বর্তমান মেয়র মিজানুর রহমান মিজান তানোর পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহন করার পর পৌর কার্যালয়ে শুরু হয় লাগামহীন অনিয়ম-দূর্নীতি।


শর্টলিংকঃ