তীব্র গরমে প্রশান্তির খোঁজে মতিহারের চিরসবুজ ক্যাম্পাসে!


সুব্রত গাইন, রাবি:

সদ্য বিদায় নিয়েছে রৌদ্রপ্রখর চৈত্র মাস। এসেছে বৈশাখ..। তবে কমেনি রৌদ্রতাপের তীব্রতা। অসহ্য গরমে জনজীবনে হাঁসফাঁস। প্রশান্তির বাতাস নেই কোথাও! চারদিকে কংক্রিটের স্তুপ (সুউচ্চি ভবন); বৈদ্যুতিক পাখা আর শীততাপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় আবহাওয়া হয়ে উঠছে আরও গরম।

কৃষক, শ্রমিক, চাকুরিজীবী, শিক্ষার্থী সকল শ্রেণির মানুষ অতিষ্ঠ বৈশাখের এই ক্লান্তময় দুপুর বেলা। সবাই চায় একটু প্রশান্তির নির্মল শুদ্ধ বায়ু। যা দেহের সকল ক্লান্তি দূর করে দিবে ফুরফুরে মেজাজ। কিন্তু  কংক্রেটের শহরে প্রকৃতির অফুরন্ত নির্মল হাওয়া পাবে কোথায় আজকের যান্ত্রিক মানব।

রাজশাহী শিক্ষার নগরী। তবে শীতকালে হাড় কাঁপানো শীত আর চৈত্র মাসে তীব্র গরম। সারা দিনের অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে একটু বিশ্রাম নিতে সবাই ঝিমিয়ে পড়ে। কেউ বা কাজের ফাঁকে শরীরের ঘাম নিয়ে শুয়ে পড়ে খোলা আকাশের নিচে।

শরীরের অবসন্নতা কাটিয়ে প্রফুল্লতায় কাজ করতে কেউ বা ঘুমিয়ে পড়ে রাস্তার পাশে, গাছের নিচে, পুকুর পাড়ে। যেখানে বয়ে যায় বৈশাখ মাসের অফুরন্ত বাতাস। যা কংক্রিটের শহরে খুঁজে পাওয়া ভার।

তেমনি সেদিন দিনের ক্লান্তি শেষে রিক্সার পাশে প্রশান্তির ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন এক রিকশাচালক। দেখেই মনে হয়- গ্রীষ্মের গরম তার শরীর মাটিতে লুটিয়ে ফেলতে বাধ্য করেছে। হাত পা ছুড়ে দিয়ে গভীর ঘুমে আবিষ্ট। পথচারীরাও তার দিকে তাকিয়ে আছে।

তারপর নিজেকে এলিয়ে দিয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে। শরীরে থাকা ঘাম আর ক্লান্তির ছাপ সব কিছু সেই ঘুমের কাছে পরাজিত। মনে পড়ে যায়- সৌম্যকান্তি চক্রবর্তীর ‘ক্লান্ত জীবন’ কবিতাটি।

কবি লিখেছেন, ‘ব্যস্ত সময় ক্লান্ত নিঃশেষিত শক্তি, পথশ্রমেই অবিরত উৎপাদিত বিরক্তি, যন্ত্র বলে ভ্রম অবিরাম শরীরটাও যে শ্রান্ত!’

রোববার দুপুরে হল থেকে হবিবুর মাঠের দিকে আসার সময় চোখে পড়ে এমন দৃশ্য। মাদার বখশ্ হলের পাশের পুকুর পাড়ে সবুজ খাসের ওপর নিজেকে মিলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। দমকা হাওয়া প্রশান্তির ঘুমে মগ্ন তখন। গায়ে একটা মলিন শার্ট, প্যান্ট, মাথায় একটা টুপি।

ক্লান্তির অবসাদে কোনো কিছুই শরীর থেকে খুলে রাখার উপায় ছিলো না বোধকরি! রিকশা পাশে রেখেই শুয়ে পড়েছেন তিনি। রিকশার ওপর শরীরের ঘাম মুছা জরাজীর্ণ গামছাটাও রয়ে গেছে।

কেননা সূর্যের আলো দেখার আগেই যে তাদের বেড়িয়ে পড়তে হয় নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। সারা দিন রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাদের। তারপরও নিজের আর পরিবারের খাবারের যোগান দিতে হিমশিম খেতে হয় এই সকল শ্রমজীবী মানুষদের।

শুধু রিকশা চালক নয়, এমন অসংখ্য কৃষক, কামার, কুমার, তাতী, জেলে, সকল শ্রমজীবী মানুষ নিজের সকল সুখ, দুঃখকে বিসর্জন দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে জীবন সংগ্রামে।

দিন শেষে কংক্রিটের ঘরের প্রশান্তি খোঁজা তাদের আর হয় না! তারা ক্লান্তি শেষে শান্তি খুঁজে নেয় তপ্ত দুপুরে কোনো এক গাছের নিচের সবুজ ঘাসের বিছানায়।


শর্টলিংকঃ