তুলে নেয়ার হুমকি, পুলিশ পাহারায় পরীক্ষা দিলেন বিউটি


নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাড়ি থেকে বের হলেই ‘তুলে নেওয়ার’ অব্যাহত হুমকির মুখে সোমবার (০১ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত এইচএসসি’র বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা দেওয়া হয়নি মেধাবী শিক্ষার্থী বিউটি খাতুনের। ফলে বাধ্য হয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে না গিয়ে রাজশাহীর আদালতে যান বিউটি। হুমকিদাতা জাহাঙ্গীর আলমসহ (বিউটির ভগ্নিপতি) পাঁচজনের বিরুদ্ধে দায়ের করেন মামলা।

আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বিউটির সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বাগমারা থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। ফলে সোমবার রাত থেকে বিউটির নিরাপত্তা দেয় পুলিশ। আজ মঙ্গলবার (০২ এপ্রিল) বাড়ি থেকে পুলিশ পাহারায় বের হয়ে কেন্দ্রে গিয়ে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় অংশ নেয় বিউটি।

বিউটি খাতুন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মচমইল ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী। তার পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল উপজেলার ভবানীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে। তিনি উপজেলার মাধাইমুড়ি গ্রামের বাবর আলীর মেয়ে। ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষায় তিনি জিপিএ- ৪.৯১ অর্জন করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উপজেলার তেলিপুর গ্রামের মো. মন্টু প্রামাণিকের ছেলে সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে বিউটির বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি থেকে বিউটি লেখাপড়া করে পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করেন।

তবে বিয়ের পর থেকে সিরাজুলের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করানোর জন্য চাপ দিতে থাকেন তার আপন ভগ্নিপতি ভবানীগঞ্জ পৌরসভা এলাকার একডালা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম।

সিরাজুলের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করিয়ে জাহাঙ্গীর তার আপন ছোট ভাই আলমগীর হোসেনের সঙ্গে বিউটির বিয়ে দিতে চান। এতে রাজি না হওয়ায় নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিতে থাকেন জাহাঙ্গীর।

ভুক্তভোগী বিউটি জানান, প্রায় চার বছর ধরে প্রেমের সম্পর্কের পর তিনি সিরাজুল ইসলামকে বিয়ে করেন। বিষয়টি প্রথম থেকেই মেনে নিতে পারেননি  জাহাঙ্গীর আলম (তার ভগ্নিপতি)। এজন্য বিয়ে ভাঙার চেষ্টা করছিলেন তিনি। বিউটি রাজি না হওয়ায় নানান ভয়-ভীতি ও ‍হুমিক-ধামকি দিতে শুরু করে।

একপর্যায়ে গত ২৮ মার্চ কৌশলে তাদের স্বামী-স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে যায় জাহাঙ্গীর আলম। মাধাইমুড়ি গ্রামের বাবার বাড়িতে ডেকে নিয়ে রাত ৮টার দিকে জোর করে সিরাজুলের কাছে তালাক নামায় সাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেন জাহাঙ্গীর।

তাতে স্বাক্ষর না করায় জাহাঙ্গীর ও তার ভাই আলমগীর মিলে সিরাজুলকে পিটিয়ে জখম করে একটি ঘরে আটকে রাখে। এতে বাধা দেওয়ায় বিউটিকেও মারপিট করা হয়।

খবর পেয়ে বাগমারা থানা পুলিশ ওই বাড়ি থেকে সিরাজুল ও বিউটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ সিরাজুলকে চিকিৎসার জন্য বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

এরপর থেকে জাহাঙ্গীর বিভিন্নভাবে বিউটিকে হুমকি দিয়ে আসছিল। ভবানীগঞ্জ পরীক্ষা দিতে গেলে সেখান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয় জাহাঙ্গীর। এ কারণে ভয়ে পরীক্ষা দিতে যেতে পারেননি বলে জানান বিউটি।

বিউটির স্বামী রাজশাহী সিটি কলেজের শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম জানান, জাহাঙ্গীর আলম ভবনীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল মালেকের স্ত্রীর বোনের ছেলে। মেয়রের ভয় দেখিয়ে আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

গত ২৮ মার্চ পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসলেও পরে মেয়রের কারণে বাগমারা থানায় মামলা নেয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে তারা আদালতে মামলা করেন। এরপর পুলিশ আদালতের নির্দেশে আমাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। মঙ্গলবার আমার স্ত্রী বিউটি পুলিশ পাহারায় বাড়ি থেকে পরীক্ষার কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিউটির ভগ্নিপতি অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে তিনি বলেন, এটা তাদের পারিবারিক বিষয়। বিষয়টি তারা মিটমাট করেন নিবেন।

বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহম্মেদ বলেন, ওই ছাত্রী হুমকির কারণে যে পরীক্ষা দিতে পারছে না, সেটি থানা পুলিশকে অবগত করেনি। যদি বিষয়টি জানাতো তবে আগেই তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হতো। তবে আদালতে মামলা করার পর আমরা বিষয়টি জেনে তার এবং তার পরিবারের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি।

ওসি আরও বলেন, আজ (মঙ্গলবার) সকালে তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেখানে পুলিশ অবস্থান করে পরীক্ষা শেষে তাকে ফের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যতোদিন ওই ছাত্রী বাড়ি থেকে বের হয়ে পরীক্ষা দিতে যাবে, পুলিশ তার নিরাপত্তা দেবে বলেও জানান ওসি।


শর্টলিংকঃ