তৃণমূলেও উদযাপিত হবে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী: প্রধানমন্ত্রী


ইউএনভি ডেস্ক:

স্মরণকালের সর্ববৃহৎ পদক্ষেপ হিসাবে সরকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আর এই উদযাপনের মাধ্যমেই দেশের মানুষ সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে।

বুধবার (২০ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি এবং বাস্তবায়ন কমিটির যৌথসভায় প্রারম্ভিক ভাষণে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী যথাযথভাবে উদযাপন করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য বলে এ সময় উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘শুধু ঢাকা শহর বা দেশের বড় বড় শহরে যেন এটা সীমাবদ্ধ না থাকে, আমরা সারাদেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানমালা ছড়িয়ে দিতে চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এদেশের মানুষ যাতে উদ্বুদ্ধ হয় এবং বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের কাছে একটা মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে যেন আমরা গড়ে তুলতে পারি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মার্চ মাসটা আমাদের জন্য খুবই অর্থবহ। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন। আবার ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। কাজেই ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত বছরটাই আমরা মুজিব বর্ষ হিসেবে উদযাপন করবো।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/20/1553085552693.jpg

তিনি বলেন, ‘জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে এ দেশের মানুষের জন্যই কষ্ট স্বীকার করে গেছেন জাতির পিতা। আর সেই কষ্টের ফসল হিসেবই আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা, স্বাধীন জাতির মর্যাদা। কাজেই এটা আজকে আমাদের একটা জাতীয় কর্তব্য। আমি মনে করি, তাঁর জন্ম শতবার্ষিকী আমরা ভালোভাবে উদযাপন করবো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা তাঁর জীবনের সব থেকে মূল্যবান সময় এদেশের মানুষের কথা চিন্তা করে ব্যয় করেছেন। মানুষের ওপর অত্যাচার, শোষণ, বঞ্চনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে দিনের পর দিন কারাবরণ করেছেন। তাঁরা সন্তান হিসেবে পিতৃস্নেহ বঞ্চিত হয়েছেন। কেননা জীবনের মূল্যবান সময়গুলো কারাগারের ঐ অন্ধকার প্রকোষ্ঠেই তিনি কাটিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জে জাতির পিতা দেখেছেন দারিদ্র্যের হাহাকার। বুভুক্ষু নর-নারীর কষ্ট। মানুষ ওষুধ পায়নি, চিকিৎসা পায়নি, খাবার পায়নি, থাকার জায়গা নাই। মানুষের এই দুঃখ কষ্ট তিনি সহ্য করতে পারেননি।’

২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাঁর সরকার জাতির পিতার আদর্শে দেশটা গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক বাধা বিঘ্ন পেরিয়েই এ বছর আমরা জাতির প্রবৃদ্ধি আট ভাগ অর্জনের দোড়গোড়ায় উপনীত হয়েছি। মাথা পিছু আয় বেড়েছে ১৯০৯ ডলার হয়েছে এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যে মর্যাদা পেয়েছি তা ধরে রাখার জন্য ইতোমধ্যেই কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/20/1553085528551.jpg

তিনি বলেন, গত ১০ বছরে আমরা চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের, যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল। তিনি বাংলাদেশকে দারিদ্র মুক্ত করে দুখি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। তিনি সব সময় চাইতেন তার মানুষ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি অর্জন করবে এবং বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে একটি মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ যেন একটা সুন্দর জীবন পায় সেটাই নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্য অর্জনেই তাঁর সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে এদেশের কৃষক, শ্রমিক এবং মেহনতি মানুষের কল্যাণে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি এবং তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। যার সুফলও মানুষ পেতে শুরু করেছে।

সরকারপ্রধান বলেন, দুঃখের বিষয় একটা সময় ছিল, ভাষা আন্দোলনে তাঁর (জাতির পিতার) অবদান একদমই মুছে ফেলা হচ্ছিল। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর যে অবদান সেটাও মুছে ফেলার একটা চেষ্টা করা হয়েছিল। ২১ বছর এদেশের মানুষ সত্য জানতেই পারেনি।

তিনি বলেন, আসলে সত্যকে কেউ কখনো মুছে ফেলতে পারে না। সত্য কখনও না কখনো উদ্ভাসিত হবেই আর তার স্থানটা সে করে নেবে। আজকে আমরা সেটার প্রমাণ পাচ্ছি। বাংলাদেশের চলমান অগ্রযাত্রা আমরা অব্যাহত রেখেই জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো। আর তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে সেটাই হবে আমাদের প্রতিজ্ঞা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/20/1553085508046.jpg

অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বক্তব্য দেন। উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান এতে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ এবং আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং মতিয়া চৌধুরী, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বৈঠকে নিজ নিজ অভিমত ব্যক্ত করেন।

প্রসঙ্গত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে ইতোমধ্যেই ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। তা যথাযথভাবে উদযাপনে বিশিষ্ট জনদের নিয়ে ১০২ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তা বাস্তায়নের জন্য ৬১ সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি কমিটি গঠিত হয়েছে। বুধবার ছিল এই দুই কমিটির প্রথম যৌথ বৈঠক। মুজিব বর্ষের প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সারাদেশের সকল জেলা, উপজেলা থানা এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানমালা চলবে বলে বৈঠকে জানানো হয়।


শর্টলিংকঃ