দরিদ্রদের মুজুরির আড়াই কোটি টাকা আটকে রেখেছেন শিবগঞ্জের পিআইও


নিজস্ব প্রতিবেদক :

মহামারী করোনার প্রকোপে অতি হতদরিদ্র বেকার দিনমজুররা কঠিন জীবনযুদ্ধে অবতীর্ণ। কাজ নেই। জীবিকাও নেই। একবেলা খেয়ে কোনরকমে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকা। করোনার এই কঠিন কোপে পড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের ৩ হাজার ২৮৭ অতি হতদরিদ্র দিনমজুরের ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচির ২ কোটি ৬৩ লাখ ৬ হাজার টাকা চার মাস ধরে আটকে রেখেছেন শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন।

দরিদ্রদের আড়াই কোটি টাকা আটকে রেখেছেন শিবগঞ্জের পিআইও

অতি হতদরিদ্র এসব দিনমজুর ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৪০ দিন দৈনিক ২০০ টাকা মজুরিতে ‘ অতি হতদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি’ নামের একটি সরকারি প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ করেছেন। মোট ৪০ দিনের মজুরি হিসাবে তাদের প্রত্যেকের ৮ হাজার টাকা করে পাওয়ার কথা। করোনার কঠিনকালেও কোন কারণ ছাড়াই দিনমজুরদের এই টাকা আটকে রাখায় অতি দরিদ্র্য মানুষগুলি আছেন চরম সঙ্কটে।

টাকার জন্য ঘুরতে ঘুরতে তারা এখন ক্লান্ত। প্রকল্পের মুল তদারকি কর্মকর্তা শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দিনমজুরদের পাওনা থেকে অর্ধেক টাকা কেটে রাখার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এই টাকা আটকে রয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার অতি হতদরিদ্র্য কর্মহীন মানুষের সাময়িক কর্মসংস্থানের জন্য ২০১৭ সাল থেকে ১৫ টি ইউনিয়নে সরকারি এই প্রকল্পটি চালু রয়েছে।

বছরে দুইবার ৪০ দিন করে মোট ৮০ দিন অতি হতদরিদ্র্যরা গ্রামীণ সড়কসহ সরকারের বিভিন্ন অবকাঠামোখাতে শ্রমিকের কাজ করার সুযোগ পান। বছরের মার্চ থেকে মে প্রথম পর্যায়ে ও নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজ করেন তারা। শিবগঞ্জের ১৫ ইউনিয়নে মোট ৩ হাজার ২৮৭ জন অতিদরিদ্র্য কর্মহীন দিনমজুর এই কাজের জন্য তালিকাভুক্ত।

দরিদ্রদের আড়াই কোটি টাকা আটকে রেখেছেন শিবগঞ্জের পিআইও

কাজ শেষে মজুরি পরিশোধ করার নিয়ম শ্রমিকদের ব্যাংক হিসাবে। কাজ শেষের দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের মজুরি ব্যাংকের হিসাবে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা। সেই হিসাবে গত ফেব্রুয়ারির মধ্যেই প্রত্যেক হতদরিদ্র্যের ব্যাংক হিসাবে টাকা পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জানুয়ারি মাসে কাজ শেষ করলেও গত বুধবার (২০ মে) ঈদের আগের শেষ কর্মদিবসেও তাদের ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা হয়নি।

উপজেলার একাধিক চেয়ারম্যান অভিযোগে বলেছেন, দিনমজুরদের মজুরির অর্ধেক টাকা কেটে রাখার প্রস্তাবে তারা ও শ্রমিকরা রাজি না হওয়ায় তিন মাস ধরে তাদের মজুরি আটকে রাখা হয়েছে। কারোনাকালেও এই টাকা ছাড় করেনি উপজেলা প্রশাসন।

জনসংখ্যা ও আয়তনে শিবগঞ্জের বৃহৎ ইউনিয়ন দুর্লভপুরের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজিব রাজু বলেন, কাজ শেষ হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তরে শ্রমিকদের নামের তালিকা, ব্যাংক হিসাব নম্বর ও সিরিয়াল আইডি জমা করেছি। উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন সভাতেও আমরা চেয়ারম্যানরা অতি হতদরিদ্র্য এসব মানুষদের টাকা ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ( পিআইও) তিন গত চার মাসেও শ্রমিকদের টাকা ছাড়েননি।

রাজু আরও বলেন, এখানে বড় গণ্ডগোল আছে। সবকিছু ফোনে খুলে বলা যাবে না। বলতে পারেন অজ্ঞাত কারণে দিনমজুরদের টাকাগুলি আটকে রেখেছে উপজেলা প্রশাসন। দিনমজুরদের এই বঞ্চনার জন্য আমাদেরও কষ্ট হচ্ছে।

আরও পড়তে পারেন  করোনাতেই মৃত্যু হয়েছে বগুড়ার সাবেক এমপি পুতুলের

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিবগঞ্জের একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অতি হতদরিদ্র্যদের এই ২ কোটি ৬৩ লাখ ৬ হাজার টাকার মধ্যে অর্ধেক টাকা প্রকল্প কর্মকর্তারা কেটে রেখে অর্ধেক দিতে চায়। তারা চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে অর্ধেক টাকা অগ্রিম হাতে পেলে পুরো টাকাটা ছাড় করতে চায়। ব্যাংক থেকে উত্তোলনের পর চেয়ারম্যানরা হতদরিদ্র্য শ্রমিকদের কাছ থেকে অর্ধেক টাকা নিয়ে নেবে-এমন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কোন শ্রমিক চেয়ারম্যানদের টাকা না দিলে পরের মাসে তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এর আগেও এভাবেই হতদরিদ্র্যদের অর্ধেক টাকা প্রকল্প অফিসের কর্মকর্তারা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই টাকা বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগাভাগি হয়। এবারও সেই লোভে টাকাগুলি আটকে রাখা হয়েছে।

করোনার মতো মহাদুর্যোগেও কেন দিনমজুররা তাদের মজুরির টাকা পায়নি ও অন্যান্য অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যানরা বিলম্বে দিনমজুরদের তালিকা জমা দিয়েছেন। আর করোনার ত্রাণ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে পড়ায় অতি হতদরিদ্র্য দিনমজুরদের তালিকা ব্যাংকে পাঠানো সম্ভব হয়নি।

ভাগাভাগির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ৪০ দিনের কর্মসূচির শ্রমিকরা অতি হতদরিদ্র্য। ওদের টাকা ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমি কয়েকবারই বলেছি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। কিন্তু কেন তারা দিনমজুরদের টাকা আটকে রেখেছেন সেটা তারাই বলতে পারবেন। তবে ঈদের ছুটির পর এই বিষয়টি তিনি অবশ্যই দেখবেন। অতি গরীব এসব মানুষদের জন্য যা করার তিনি সব পদক্ষেপ নেবেন। হতদরিদ্র্যদের এই কষ্টের জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

দেখতে পারেন 


শর্টলিংকঃ