দারিদ্র বিমোচনের শীর্ষে বাংলাদেশ


জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক বহুমাত্রিক দারিদ্র্যতা সূচকে (এমপিআই) দেখা গেছে দ্রুত গতিতে দারিদ্র্যতা কমে আসা দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বের যে তিনটি দেশ সবচেয়ে দ্রুত গতিতে সব ধরণের দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-এসডিজিতে যে ১৭টি লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে, তার প্রথমটি হল দারিদ্র্য বিমোচন। ২০৩০ সালের মধ্যে সব জায়গা থেকে ‘বহুমাত্রিক’ দারিদ্র্য দূর করার কথা বলা হয়েছে সেখানে। আর সেই লক্ষ্য অর্জনে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো কতটা এগোতে পারল, তা বোঝার একটি কৌশল এই ‘মাল্টিডাইমেনশনাল পভার্টি ইনডেক্স’ বা এমপিআই।

কেবল মাথাপিছু আয়কে দারিদ্র্যের নির্ণায়ক হিসেবে বিবেচনা না করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবনযাত্রার মোট দশটি মানদণ্ডে দারিদ্র্যকে পরিমাপ করা হয় এই সূচকে। দশটি মানদণ্ডের মধ্যে কোনো পরিবারে যদি এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকে, তাহলে ওই পরিবার বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে বলে ধরা হয়। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে পুষ্টি ও শিশুমৃত্যুর হার, জীবনযাত্রার মানের ক্ষেত্রে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, নিরাপদ পানি, বিদ্যুৎ, সম্পদের মালিকানা ও বিছানা এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলে উপস্থিতি ও প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার হারকে মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয় এই গবেষণায়।

ইউএনডিপি, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ যৌথভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

দশটি মানদণ্ডে পৃথিবীর ১০১ টি দেশের দারিদ্র্যের দশা চিহ্নিত করার পাশাপাশি প্রতি বছর কোন মানদণ্ডে কতটা পরিবর্তন আসছে, তা বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে এবারের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ১০১টি দেশের ১৩০ কোটি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে জর্জরিত। এই সংখ্যা দেশগুলোর মোট জনসংখ্যার ২৩.১ শতাংশ। তাদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ মানুষের বসবাস মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।

বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে থাকা এই ১৩০ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেকের বয়স ১৮ বছরের নিচে, এক তৃতীয়াংশের বয়স ১০ বছরের কম। বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের রূপটি আরও স্পষ্ট বোঝার জন্য ১০টি দেশের তথ্য আলাদা করে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সবগুলো অঞ্চল, সবগুলো অর্থনৈতিক শ্রেণি থেকে বাছাই করা এ দেশগুলোতে ২০০ কোটি মানুষের বসবাস।

দশটি দেশই জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-এসডিজির প্রথম লক্ষ্য পূরণে অগ্রগতি দেখিয়েছে। এর মধ্যে আটটি দেশ বহুমাত্রিক দরিদ্রের সংখ্যা কমিয়ে সূচকে সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে গত এক বছরে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই দশ দেশের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বহুমাত্রিক দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমিয়ে আনতে পারছে ভারত, কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশ।

মাল্টিডাইমেনশনাল পভার্টি ইনডেক্স ২০১৯’ বলছে, বাংলাদেশে এখনও দুই কোটি ৬৭ লাখ মানুষ ‘বহুমাত্রিক’ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে, যা মোট জনসংখ্যার ১৬.৭ শতাংশ। এক বছর আগে এই হার ছিল ১৮ শতাংশের মত। মাল্টিডাইমেনশনাল পভার্টি ইনডেক্স ২০১৯’ বলছে, বাংলাদেশে এখনও দুই কোটি ৬৭ লাখ মানুষ ‘বহুমাত্রিক’ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে, যা মোট জনসংখ্যার ১৬.৭ শতাংশ। এক বছর আগে এই হার ছিল ১৮ শতাংশের মত।

যে দশটি মানদণ্ডে এই সূচক তৈরি হয়েছে তার নয়টিতেই বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি হয়েছে। বহুমাত্রিক দারিদ্র্য কমার গতি গ্রাম ও শহর- দুই ক্ষেত্রেই প্রায় সমান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহুমাত্রিক দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে পারলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অসমতা এখনও ব্যাপক। বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পয়েন্ট সমান- ০.১৯৮। কিন্তু পাকিস্তানে অসমতা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

এমপিআই প্রতিবেদনে বিশ্বের ১০১টি দেশের মারাত্মক বহুমাত্রিক দারিদ্র্যতা বিবেচনা করা হয়। এসব দেশের মধ্যে ৩১টি নিম্ন আয়ের, ৬৮টি মধ্য আয়ের আর দুটি উচ্চ আয়ের দেশ। এসব দেশের প্রায় ১৩০ কোটি মানুষ বহুমাত্রিকভাবে দরিদ্র। এমপিআই প্রতিবেদন দারিদ্র্যতার তুলনা করে আর ১০টি সূচকের মাধ্যমে পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এসব সূচকের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কাজের মান এবং জীবনযাপনের মান।


শর্টলিংকঃ