দিন-দুপুরে শিবগঞ্জে আলো ছড়াচ্ছে প্রদীপ


তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

অবহেলিত সীমান্তবর্তী শিবগঞ্জ উপজেলায় নিরবেই আলো ছড়াচ্ছে প্রদীপ নামে একটি অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন। প্রদীপ একটি অরাজনৈতিক বিনোদপুরের আলোকিত সন্তানদের সংগঠন। সংগঠনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর হতে পরিচালিত হয়। যার মূল লক্ষই হচ্ছে  এলাকার অসহায় দরিদ্র জনগোষ্টিসহ সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ঘরবন্দী অসহায় ও হতদরিদ্রদের মাঝে প্রায় দুমাস ধরে সবোর্চ্চ সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে প্রদীপ। সহযোগিতার ধারাবাহিকতায়  রোববার দিনব্যপী  একদল যুবক কাঁধে ত্রাণের বস্তা নিয়ে  প্রতিটি গ্রামে ঘুরে   ত্রান পৌঁছে দিয়েছেন হতদরিদ্রের বড়িতে বাড়িতে। বিনোদপুর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ৫০৬ টি অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবারকে (৮ কেজি চাল, ২ কেজি আটা, ২ কেজি আলু, ১ কেজি চিনি, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি লবন, ১ কেজি পেঁয়াজ, ১লিটার তেল ও ১টি সাবানে) ১৭ কেজি ওজনের  একটি করে প্যাকেট করেন।

এর আগেও এপ্রিল মাসে একইভাবে ৫৫০ টি অসহায় ও হত দরিদ্র পরিবারের মাঝে  বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে এ সে¦চ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে যুক্ত যুবকরা। শুধু তাইনয় আগামী ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ত্রাণ দেয়ার জন্য বিনোদপুর ইউনিয়নের ৯ টি ওয়ার্ডে হতদরিদ্রদের তালিকা তৈরীর কাজ চলছে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হবে,তারমধ্যে থাকবে সেমাই, চিনি, লাচ্চা, তেল, আটা, পোলাও চাল, মাংসের জন্য একটি করে মুরগী, লবন,পিয়াঁজ, সাবানসহ আরও অনেক কিছু।

ঈদ উপলক্ষে বিনোদপুর ইউনিয়নের  প্রায় ১হাজার অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে তাদের বাড়িতে এ ত্রাণ পৌঁছে দেয়া  হবে। সংগঠনের সদস্যরা জানান, প্রায় ৮লাখ টাকার ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে এবং সামনে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আরও ৩লাখ টাকার ত্রাণ বিতরন কর হবে।

এছাড়া যারা করোনা ভাইরাসের কারনে চিকিৎসা সেবা নিতে পারছে না।ঈদের পরে  তাদের চিকিৎসার জন্য বিনোদপুর ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে  টেলি মেডিসিন কেন্দ্র চালু করা হবে। ভিডিও কলের মাধ্যমে ১০ জন চিকিৎসক উপস্থিত থেকে চিকিৎসা সেবা দিবেন। তাদের এমন মহত উদোগ জেলা ও জেলার বাইরে আলোচনায় উঠে এসেছে। তারা বলছে প্রদীপ মূলত আলো দেয় রাতে বেলা। কিন্তু বিনোদপুরের প্রদীপ আলো ছড়াচ্ছে দিন-দুপুরে ।

যেভাবে গড়ে উঠে প্রদীপ: করোনা ভাইরাসে মানুষ যখন অসহায়, নিরুপায়,ও ঘরবন্দী,ঠিক তখনি ইউনিয়নের  কয়েকটি উচ্চা বিদ্যালয়ের ১৯৯২ থেকে ২০২০সাল পর্যন্ত এসএসসির ব্যাচের সাবেক ছাত্রদের সমন্বয়ে এ সংগঠনের জন্ম হয়। এখানে পৃষ্ঠপোষক হিসাবে কাজ করছেন সাবেক ছাত্র ও বর্তমানে চাকুরীজিবীরা। সংগঠনটির কমিটির প্রয়োজন নেই, নেই কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, নেই কোন ভেদাভেদ।এ সংগঠনের মাধ্যমে যে সমস্ত সেবা মুলক কাজ হবে কেবল সে গুলি প্রকাশ করা যাবে। যারা জড়িত থেকে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে তাদের নাম প্রকাশ করা যাবে না। কারণ সংগঠনটি নিজেদের প্রচারের জন্য কিছু করছেন না। শুধু সমাজের অসহায় ও হতদরিদ্রদের সেবা করাই হচ্ছে মূল উদ্দেশ্য।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে প্রদীপের সদস্যরা জানান, দীপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সুদূর প্রসারী। প্রদীপের স্বপ্ন হলো প্রথমে বিনোদপুর ইউনিয়নে কোন মানুষ অনাহারে থাকবে। অনাহারী ব্যক্তিদের সংবাদ পাওয়া মাত্রই খাদ্রসামগ্র্যী পৌঁছে দেয়া হবে। বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা যাবে না।রোগীর দোরগড়ায় চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবা পৌঁছে যাবে।

কেউ অশিক্ষিত থাকবে না।সকলের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। যারা শিক্ষা সম্পর্কে অসচেতন তাদেরকে সচেতন করা হবে। কোন ভিক্ষুক থাকবে না।ভিক্ষাবৃত্তির অবসান ঘটিয়ে ভিক্ষকদের জন্য এই সংগঠনের পক্ষ থেকে পূর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। বেকারত্বের অবসান ঘটিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।সকল অনিয়ম ও দূনীর্তির অবসান ঘটিয়ে বিনোদপুরে একটি সুন্দর, স্বচ্ছ ও কর্মময় সমাজ গড়ার প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে। তবে কোন মতে সরকার বিরোধী কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা যাবে ন।


শর্টলিংকঃ