Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

দুদকের জালে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে ঠিকাদার চুক্তিবাণিজ্য


নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঠিকাদার চুক্তিবদ্ধকরণ নিয়ে রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরে চলছে ঘুষের কারবার। ভুক্তভোগী একজন ঠিকাদারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে  বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দপ্তরটিতে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেখানে ঘুষ আদায়ের এক নতুন কৌশল দেখতে পান দুদক কর্মকর্তারা।

দুদকের হটলাইন ‘১০৬’ এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজশাহী কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বেনজীর আহমেদের নেতৃত্বে একটি টিম অভিযান চালিয়ে দুর্নীতির এ প্রমাণ পান। দুদক মহাপরিচালক মুনীর চৌধুরীর নির্দেশে অভিযানটি পরিচালিত হয়। অভিযানে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক স্লিপপ্রতি ৩০ হাজার টাকা করে নিয়ে তৈরি ১৭ ঠিকাদারের নাম সম্বলিত তিনটি হলুদ স্লিপ জব্দ করে।

সরেজমিনে দুদক টিম দেখতে পান, নিবন্ধন পেতে আবেদন দাখিল করতে গেলে প্রত্যেক ঠিকাদারকে পরিবহন ঠিকাদার সমিতির অফিস থেকে স্লিপ সংগ্রহ করে জমা দিতে বলা হয়। অন্যথায় তাদের কাগজপত্র জমা নেওয়া হয় না। ঠিকাদারদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ৩০ হাজার টাকা করে নিয়ে তাদের নাম ও সিরিয়াল নম্বর লিখে সিল সম্বলিত স্লিপ দেন সমিতির নেতারা। ওই স্লিপ ঠিকাদাররা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে জমা দিলে তবেই তাদেরকে চুক্তিবদ্ধ করা হয়।

দুদকের উপ-পরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, সরেজমিনে অভিযানকালে এমন ১৭ জন ঠিকাদারের নাম সম্বলিত তিনটি হলুদ স্লিপসহ চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদারদের তালিকা জব্দ করা হয়। ফরম জমা দিতে আসা একাধিক ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেওয়ার সত্যতা মেলে। অভিযান পরিচালনাকালে দপ্তরটির কর্মচারিরা জানান, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মনিরুজ্জামান বগুড়ায় একটি প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ছুটিতে আছেন।

বেনজীর আহমেদ বলেন, রাজশাহী ও রংপুরে ৪১৬ জন পরিবহন ঠিকাদার রয়েছেন। তাদের সবাইকেই আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে খাদ্য পরিবহনের জন্য চুক্তি হতে হবে। এই চুক্তিবদ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত সরকারি ফিয়ের বাইরে মাথাপিঁছু ৩০ হাজার টাকা করে আদায় করা হলে এই অর্থের পরিমাণ হয় ১ কোটি ২৪ লাখ ৮০ হাজার। ইতিমধ্যে ২৬৫ জনের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের অনেকেই টাকা দেয়ার বিষয়টি দুদকের কাছে স্বীকার করেছেন।

বলেছেন, সমিতির ৩০ হাজার টাকা দিয়ে স্লিপ নিয়া আসেন। নাম লিখে দিয়ে সমিতির সম্পাদক শাহ আলম সিল দিয়ে দেন। জমা দিলে কাগজপত্র জমা নেন। এ পর্যন্ত ২৬৫ জনের আবেদন গ্রহণ হয়েছে।

দুদক কর্মকর্তা বেনজীর বলেন, অফিস এক জায়গায়, টাকা আদায় করা হয় আরেক জায়গায়। এটা নতুন কৌশল। হলুদ স্লিপে পরিবহন ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমের স্বাক্ষর দেয়া ছাড়া খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে আবেদন গ্রহণ করা হতো না। কর্মকর্তারা এই শাহ আলমের সঙ্গে যোগসাজোস করেই ঘুষ আদায় করছিলেন। তাই শাহ আলমকে ধরার জন্য আমরা সমিতির কার্যালয়ে অভিযান চালাই। তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে গেলে সেখানেও তাকে পাওয়া যায়নি।

দুর্নীতির কতটুকু প্রমাণ পাওয়া গেছে, এমন প্রশ্নে বেনজীর আহমেদ বলেন, দুর্নীতি তো হতোই। তা না হলে সরকারি দপ্তরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আবেদনের সঙ্গে ঠিকাদার সমিতির হলুদ স্লিপ জমা দেয়ার তো কোনো কারণ নেই। আর কয়েকজন ঠিকাদার আমাদের কাছে বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে আমরা দ্রুতই আইনগত ব্যবস্থা নেব।

জানতে চাইলে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ঠিকাদার সমিতি একটি বেসরকারি সংগঠন। তারা সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে টাকা আদায় করলে আমাদের কিছু করার নেই। আর এই টাকা আদায়ের সঙ্গে আমাদেরও কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

আবেদনের সঙ্গে হলুদ স্লিপ কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুজ্জামান বলেন, ঠিকাদার সমিতি ওই স্লিপের মাধ্যমে ঠিকাদারদের সিরিয়াল করে পাঠায়। সে জন্য সেটি আমাদের অফিসে আসে।

তিনি বলেন, দুদকের অভিযানের পর আমি ঠিকাদার সমিতিতে খোঁজ নিয়েছি। তারা জানিয়েছে, যেহেতু দুই বিভাগের ঠিকাদারদের আবেদন করতে হচ্ছে তাই তারা একটি ‘হেল্প ডেস্ক’ এর মতো কিছু একটা খুলেছে। সেখানে তারা ঠিকাদারদের আবেদন প্রক্রিয়ার কাগজপত্র ঠিকঠাক করে দিচ্ছে। এ জন্য সমিতির তহবিলের জন্য কিছু টাকা নেওয়া হচ্ছে।


Exit mobile version