দুর্গাপুরে ব্যবসায়ী সর্বস্বান্ত, ৪ লাখ টাকার সুদ ২২ লাখ!


দুর্গাপুর প্রতিনিধি:

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চৌপুকুরিয়া গ্রামের আলেপ সরকার ছিলেন পেশায় কীটনাশক ও সার ব্যবসায়ী। আমগাছী বাজারে তার একটি ব্যবসা প্রতিষ্টান ছিল। ব্যবসায়ীক কার্যক্রম চালাতে কিছু টাকার প্রয়োজন হয় তার। প্রতিবেশী মাসুদ রানার কাছ থেকে নিয়েছিলেন চড়া সুদে ৪ লাখ টাকা। বছর না ঘুরতেই সুদে আসলে এই টাকার পরিমাণ গিয়ে ঠেকে প্রায় ২০ লাখে।

পরে এই সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় জমিসহ আলেপ সরকারের নতুন একটি বাড়ি লিখে নিয়েছেন সুদ ব্যবসায়ী মাসুদ রানা। জমি সহ বাড়িটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২২ লাখ টাকা। একই ভাবে সুদ ব্যবসায়ী মাসুদ রানার খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হয়েছেন অনেকেই। অনেকেই সর্বস্বান্ত হলে ও লোক লজ¦ার ভয়ে মুখ খুলছেন না। আবার অনেকেই কারো কাছে এর প্রতিকার চাইতে পারছেন না। ফলে দিনে দিনে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন সুদ ব্যবসায়ী মাসুদ রানা। স্থানীয় লোকজন বলছেন, মাসুদ রানা এখন কত টাকার মালিক তা তিনি নিজেই জানেন না।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পর খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুদ ব্যবসায়ী মাসুদ রানার বাড়ি দুর্গাপুর উপজেলার চৌপুকুরিয়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের নাওশাদ আলীর পুত্র। লেখাপড়ায় বেশিদুর আগাতে না পারলেও সুদ ব্যবসার মাধ্যমে অল্প সময়ের ব্যবধানে হয়েছেন কয়েক কোটি টাকার মালিক। তার কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে কেউ হারিয়েছেন ফসলী জমি। আবার কেউ হারিয়েছেন বাড়ি-গাড়ি। আবার চাকুরি জীবীদের মধ্যে যারা মাসুদ রানার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তাদের অনেকেরই চাকুরি নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গেছে। কেনোনা কমপক্ষে ২ থেকে ৪টি ফাঁকা চেক নিয়ে রেখেছেন মাসুদ রানা। যে হিসাব নাম্বারে চাকুরিজীবীদের বেতন ড্র হয়ে থাকে।

ভুক্তভোগী আলেপ সরকার জানান, প্রায় এক বছর আগে ব্যবসায়ীক দায় বশঃত সুদ ব্যবসায়ী মাসুদ রানার কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা নিয়ে ছিলেন তিনি। ওই টাকায় সুদের পরিমাণ ছিল প্রতি মাসে ১ লাখে ৩০ হাজার টাকা। ওই টাকা নিতে তাকে চেকবইয়ের ২টি ফাঁকা পাতা ও ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে হয়েছিল। এদিকে বছর না ঘুরতেই টাকার পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ২০ লাখে। এক বছর না হতেই কিভাবে টাকার পরিমাণ ২০ লাখে পৌছালো এটা জানতে চাইলে সুদ ব্যবসায়ী মাসুদ রানা আলেপ সরকারকে জানায় আসল ও সুদ মিলে প্রতি মাসে চক্রবৃদ্ধি হয়ে টাকার পরিমাণ বেড়ে গেছে।

সুদ ব্যবসায়ী মাসুদ রানা টাকার জন্য আলেপ সরকারকে চাপ দিতে তাকে। কখনো রাস্তায় চলাচল করতে গেলে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকী দিতে থাকে। নতুবা মামলা করার হুমকী দিতে থাকে। এতোগুলো টাকার কোন সংকুলান করতে না পেরে ৩/৪ মাস আগে জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন আলেপ সরকার। মাস খানেক আগে সুদ ব্যবসায়ী মাসুদ রানা এক ধরনের জোর জবরদস্তি করেই জমিসহ বাড়ি লিখে নেয় নিজের নামে। অন্যদিকে আলেপ সরকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিও বন্ধ হয়ে গেছে। সব হারিয়ে এক সময়ের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী আলেপ সরকার এখন নিঃস্ব। তার মতো অনেকেই সুদ ব্যবসায়ী মাসুদ রানার কাছে জিম্মী হয়ে সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন।

জানা গেছে, সুদ ব্যবসায়ী মাসুদ রানার দাপটে অনেকেই তটস্থ থাকেন। এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বার কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান না। টাকা দিয়ে কয়েজনকে সব সময়ের জন্য দেহরক্ষী হিসেবে নিজের সঙ্গে রাখেন মাসুদ রানা। পাওনা টাকা দিতে কেউ দেরি করলে মাসুদ রানার দেহরক্ষীরা তাকে ধরে আনেন মাসুদ রানার কাছে। টাকা দিতে না পারলে পুণরায় তার কাছ থেকে নেয়া হয় ফাঁকা চেক অথবা ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর। আর বর্তমানে এভাবেই চলছে সুদ ব্যবসায়ী মাসুদ রানার সুদ ব্যবসার কার্যক্রম।

এ ব্যাপারে সুদখোর মাসুদ রানার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলা হলে তিনি প্রথমে সুদ ব্যবসার কথা অস্বীকার করেন। পরে তিনি দাবি করেন, সুদে নয় আলেপ সরকারকে টাকা ধার দেয়া হয়েছিল। তাহলে জমিসহ বাড়ি লিখে নিলেন কেনো? এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ রানা বলেন, তার কাছে জমি ও বাড়ি বিক্রি করা হয়েছে। জোর করে কোন কিছুই করা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খুরশীদা বানু কণা জানান, সুদখোরদের ব্যাপারে ভুক্তোভোগী কোন সাধারণ মানুষ তার কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


শর্টলিংকঃ