Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

দেশের ৩৯ প্রজাতির পাখি সংকটাপন্ন


ইউএনভি ডেস্ক: 

দেশে প্রায় ৭১১ প্রজাতির আবাসিক ও পরিযায়ী পাখি রয়েছে। গত পাঁচ বছরে পাখির প্রজাতির সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে সংকটাপন্ন প্রজাতিও। দেশে এখন সংকটাপন্ন প্রজাতির পাখির সংখ্যা ৩৯। এর মধ্যে ২১ প্রজাতির কেবল পরিযায়ী পাখিই রয়েছে।

এছাড়া বৈশ্বিকভাবে বিপন্নপ্রায় ১২টি প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে সংকটাপন্ন অবস্থায় টিকে রয়েছে। সংরক্ষণে যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়া, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে সংকটাপন্ন হয়ে পড়ছে এসব প্রজাতি।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) জরিপ অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ২৯টি সংকটাপন্ন প্রজাতির পাখি ছিল। গত বছরে যার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯-এ। দেশ থেকে এরই মধ্যে প্রায় ১৯ প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এর মধ্যে রাজশকুন, বড় মদনটাক, সারস, ময়ূর, গোলাপি শিরহাঁস ও বাদি হাঁস উল্লেখযোগ্য। তবে সার্বিকভাবে সব প্রজাতির পাখির মধ্যে ৪২৪টি প্রজাতির পাখি কম উদ্বেগজনকের তালিকায় রয়েছে।

বাংলাদেশে ৩৮৮ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দেখা যায়। বিশ্বের আটটি দেশ থেকে পরিযায়ী পাখি বাংলাদেশে আসে। এর মধ্যে রয়েছে মঙ্গোলিয়া, চীন, তিব্বত, ভারত, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান ও রাশিয়া। প্রতিটি পরিযায়ী পাখি গড়ে আট হাজার মাইল ভ্রমণ করে বাংলাদেশে আসে। এরপর ২০০ থেকে ২৩০ দিন এ দেশে অবস্থান করে তারা। হাওর এলাকা এসব পাখির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। হাওরে দেড়-দুই লাখ পরিযায়ী পাখি আসে।

এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় চার-পাঁচ লাখ পাখি, নদী এলাকায় ১০-১৫ হাজার পরিযায়ী পাখি থাকে। পরিযায়ী পাখির মধ্যে হাঁস প্রজাতির ২৪টি, শিকারি পাখি ৩২টি, শীত মৌসুমের পাখি রয়েছে ২০০ প্রজাতি, গ্রীষ্ম মৌসুমের ১১ প্রজাতি, ইতস্তত ভ্রমণকারী পাখি ১৬৫ প্রজাতি ও চলার পথের পাখি (প্যাসেজ) বা চলাচলে বাংলাদেশকে ব্যবহার করে এমন প্রজাতি ১২টি। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, পরিযায়ী পাখিকে সংরক্ষণ ও আবাসস্থলের নিশ্চয়তা দিতে পারলে দেশে পাখির প্রকৃতি ও বাস্তুসংস্থান সমৃদ্ধ হতো।

এ বিষয়ে আইইউসিএনের সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর রাকিবুল আমিন বণিক বার্তাকে বলেন, প্রতি বছর শীত মৌসুমে সুদূর সাইবেরিয়া ও ইউরোপ থেকে বাঁচার তাগিদে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এসে আমাদের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করে। এসব পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও সচেতনতা বাড়াতে হবে।

পাখি গণনা ও চলাচলের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো দরকার। আইইউসিএন এরই মধ্যে কাজটি শুরু করেছে। পরিযায়ী পাখি কোত্থেকে আসছে, কোথায় কতদিন অবস্থান করছে, সে বিষয়ে তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রতিবেশ রক্ষায় অনন্য ভূমিকা পালন করা পাখির আবাসস্থল রক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া হলে বাংলাদেশ পাখি সংরক্ষণের উদাহরণ হতে পারে।

দেশের আবাসিক ও পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণে সরকারের ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকটি উদ্যোগ রয়েছে। এজন্য পাখির প্রজাতির সংখ্যা তুলনামূলক বেড়েছে। ২০১৫ সালে মোট ৫৬৬ প্রজাতির পাখি দেখা গেছে বাংলাদেশে, যা গত বছর এসে দাঁড়িয়েছে ৭১১টিতে। সে হিসেবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে ১৪৫ প্রজাতির পাখি বেশি এসেছে বাংলাদেশে।

এছাড়া পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সোনাদিয়া, নিঝুম দ্বীপ, টাঙ্গুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওর, হাইল হাওর ও গাঙ্গুইরার চর ইস্ট এশিয়ান অস্ট্রেলেশিয়ান ফ্লাইওয়ে সাইট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পরিযায়ী জলচর পাখির পরিযায়ন পথবিষয়ক গবেষণার উদ্দেশ্যে পাখিশুমারি ও পাখির পায়ে রিং পরানো হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এসব পাখির জিপিএস স্যাটেলাইট ট্যাগিং করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে পরিযায়ী পাখির পরিযায়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে। ‘মহাবিপন্ন’ প্রাণী শকুনের জন্য প্রাণঘাতী ওষুধ ডাইক্লোফেনাক উৎপাদন ও বিক্রি সারা দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সুন্দরবন ও সিলেটে দুটি ভালচার সেভ জোন ঘোষণা করা হয়েছে। অসুস্থ ও আহত শকুনদের উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দিনাজপুরের সিংড়ায় একটি শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভায় শকুন রক্ষায় ক্ষতিকর ‘কিটোপ্রোফেন’ ওষুধ উৎপাদন বন্ধের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

গতকাল বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস-২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশে আবাসিক ও পরিযায়ী পাখিসহ প্রায় ৭১০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এর মধ্যে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিলে ৬৫০ প্রজাতির পাখি রক্ষিত প্রাণী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরিযায়ী পাখি শিকার ও হত্যার জন্য সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

দেশব্যাপী অবৈধভাবে পাখি শিকার ও বাণিজ্য বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অপরাধীকে হাতেনাতে ধরা হচ্ছে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড করা হচ্ছে। ফলে বর্তমানে এ-সংক্রান্ত অপরাধ বহুলাংশে কমেছে। পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পথসভা, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে। পাখিসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সরকার পুরস্কার ও প্রণোদনা দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।


Exit mobile version