দেশে ভয়াবহ অক্সিজেন সংকটের আশঙ্কা


জিয়াউল গনি সেলিম, বেনাপোল সীমান্ত থেকে ফিরে :
দেশে যে কোনো সময় ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হতে পারে অক্সিজেনের। ভারত থেকেও চাহিদা মতো এখন অক্সিজেন মিলছে না। ফলে করোনা রোগীদের এটি বড় ধরনের অশনি সংকেত। এরইমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে এমন আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েকটি বিকল্প উৎসের সাথেও যোগাযোগ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য বলছে, করোনা পরিস্থিতিতে দেশে বর্তমানে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দেড়শ’ টনে। এরমধ্যে লিন্ডে ৮০ টন ও স্পেক্টা সরবরাহ করছে ৩৮ টন। এরইমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ৩টি নতুন উৎসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এসব উৎস থেকে পাওয়া যাবে মোট ৭৫ টন। তবে দিনে দিনেএই চাহিদা আরও বাড়তে পারে। কারণ, হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, ‘ কোভিড রোগীদের জন্য হাসপাতালে এখন প্রচুর অক্সিজেন লাগছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের যেসব ওয়ার্ডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহের ব্যস্থা নেই, সেগুলোতেও আমরা পোর্ট লাগাচ্ছি। প্রতিদিনই এখন দুবার করে অক্সিজেনের গাড়ি আসছে’।

এমন পরিস্থিতিতে ভারত থেকে আসা অক্সিজেনেও টান পড়েছে। ফলে চাহিদা মতো সরবরাহ পাচ্ছে না আমদানিকারকরাও। বৃহস্পতিবার যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে কথা হয় বেসরকারী অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠিান লিন্ডে বাংলাদেশের কয়েকজন কর্মীর সাথে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, আগে ১২-১৫ গাড়ি অক্সিজেন ভারত থেকে বেনাপোল পোর্টে প্রবেশ করতো। কিন্তু এখন ভারত থেকে আর চাহিদা মতো অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রতিদিন গড়ে ৪-৫গাড়ি আসছে।

এদিকে, মুমূর্ষু রোগীদের জীবনরক্ষাকারী অক্সিজেন বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে খালাস করতে দীর্ঘসময় লাগছে বলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অভিযোগ। এছাড়া লকডাউনের মধ্যে বেনাপোল থেকে ঢাকা যেতে পথে পথে পড়তে হচ্ছে বাধার মুখে।

তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনায় বিশেষ সুবিধা দিয়ে অক্সিজেনের গাড়িগুলো ছাড় করা হচ্ছে বলে জানান বেনাপোল কাস্টম হাউজের উপ-কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন ‘দেশের এই সংকটকালীন সময়ে এনবিআরের বিশেষ নির্দেশনা ছিল ভারত থেকে আসা অক্সিজেনবাহী গাড়ি আনুষ্ঠানিকতা শেষে সরাসরি চলে যাবে লিন্ডের প্লান্টে। কিন্তু গাড়িগুলো ভারতে ফিরে যেতে কয়েকদিন দেরি হচ্ছিল। তাই ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এটা আর করছে না। তবে অক্সিজেন খালাসে কাস্টম, বন্দর, ব্যাংক ও সিএন্ডএফ এজেন্টসহ সংশ্লিষ্ট সবাই সহযোগিতা করছে’।

বেনাপোল কাস্টম হাউজ কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, গেল ফেব্রুয়ারিতে ভারত থেকে অক্সিজেন এসেছে এক হাজার ১৭০ মে.টন, মার্চে এক হাজার ২৪৬ মে.টন ও চলতি মাসে ২১এপ্রিল পর্যন্ত এক হাজার ৪৮ মে.টন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি থেকেই চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু চাহিদা তুলনায় আমদানি কমেছে। চাহিদার অর্ধেক অক্সিজেন আসছে ভারত থেকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, ‘ভারত যদি অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমাদের হাসপাতালগুলোয় অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেবে। সেই ঘটতি পূরণে আমরা তিনটি অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু তাদের তরল অক্সিজেন উৎপাদনের সক্ষমতা অনেক কম, যা দিয়ে ঘটতি পূরণ করা সম্ভব হবে না। সেরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে প্রাপ্ত অক্সিজেনের সুসম বণ্টন নিশ্চিত করা হবে।#

উল্লেখ্য, বিপুল পরিমাণ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে ২২ এপ্রিল থেকে শিল্পজাত অক্সিজেন সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত। এ অবস্থায় ভারত কোভিড রোগীদের রক্ষায় জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অক্সিজেন আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


শর্টলিংকঃ