দেড় হাজার শ্রমিকের উপস্থিতিতে মালিকের মেয়ের গায়েহলুদ!


ইউএনভি ডেস্ক:

সেদিনের সকালটি তাঁদের কাছে ছিল ভিন্নতর। মেয়েরা খোঁপায় ফুল গুঁজে হলুদ শাড়ি পরে আর ছেলেরা পাঞ্জাবি পরেছেন। কারখানাটি সেজেছিল অপরূপ সাজে। ছাদে প্যান্ডেল টানিয়ে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। হলুদ গাঁদা দিয়ে সাজানো মঞ্চ। বেজেছে বিয়ের গান। মঞ্চে বসা নববধূর সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে নেচেছেন, গেয়েছেন সবাই।

দেড় হাজার শ্রমিকের উপস্থিতিতে মালিকের মেয়ের গায়েহলুদ!

শহরের নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার ইনডিপেনডেন্ট অ্যাপারেলসের দেড় হাজার শ্রমিক–কর্মচারী গত বৃহস্পতিবার এই অন্য রকম আয়োজনে মাতোয়ারা ছিলেন। কারখানাটি পরিণত হয়েছিল বিয়ের কমিউনিটি সেন্টারে। সুই–সুতা তুলে রেখে সবাই মেতেছিলেন গায়েহলুদ অনুষ্ঠানে। বধূ বেশে যিনি মঞ্চ আলোকিত করেছেন, তিনি পোশাকশ্রমিক নন, তিনি এ কারখানার মালিকের একমাত্র মেয়ে সাইকা তাফান্নুম।

চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব কারখানাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মেয়ের গায়েহলুদের একটি অনুষ্ঠান কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে কারখানাতেই উদ্যাপন করল তাঁর পুরো পরিবার। নেচে–গেয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন, ছবি তুলেছেন, একসঙ্গে খেয়েছেন। একই রকম পাঞ্জাবি পরেছেন আবু তৈয়ব ও তাঁর দুই ছেলে। স্ত্রী পরেছেন নারী শ্রমিকদের মতোই হলুদ শাড়ি। আবু তৈয়ব বিয়ে উপলক্ষে সবাইকে শাড়িুপাঞ্জাবি দিয়েছেন।

পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবু তৈয়ব এ আয়োজনের প্রচার চাননি। তবু এ কান, ও কান হয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে।

  • কারখানাটি সেজেছিল অপরূপ সাজে
  • বধূ পোশাকশ্রমিক নন, মালিকের মেয়ে

জানতে চাইলে আবু তৈয়ব বলেন, ‘আমি প্রচারের জন্য এটা করিনি। আমি আমার শ্রমিকদের আমার পরিবারের সদস্য মনে করি। তাই একমাত্র মেয়ের গায়েহলুদের একটি অনুষ্ঠান কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়ে করেছি। কারণ, তাঁদের আমি পরিবারের সদস্যদের মতো মনে করি।’

আরেকটি গায়েহলুদের আয়োজন ছিল গতকাল চট্টগ্রাম ক্লাবে। কাল রোববার বিয়ে।ইনডিপেনডেন্ট অ্যাপারেলসে সাত মাস আগে কল্যাণ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন রুবি আকতার। তিনি বলেন, ‘আমি অভিভূত। এমন মালিক হয় না। আমাদের পরিবারের সদস্যদের মতো আগলে রাখেন তিনি। সাইকা আপুকে হলুদ লাগিয়েছি সবাই। এ রকম একটি আয়োজন আমাদের মুগ্ধ করেছে।’

লোকমান হোসেন ১২ বছর ধরে এখানে কাজ করেন। তিনি আইয়ুব বাচ্চুর ‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে…’ গানটি গান। শ্রমিক–কর্মচারীরা নাচগান, ফ্যাশন শোসহ নানা আয়োজনে অংশ নেন।চার বছর ধরে কাজ করা শ্রমিক মিনা আকতার বলেন, ‘আমাদের ভাইবোনদের বিয়েশাদি হলে যে রকম আনন্দ করি, সেভাবেই সবকিছু করেছি। নিজ হাতে আপাকে হলুদ লাগিয়েছি। এক টেবিলে খেয়েছি।’

শুধু এই অনুষ্ঠান বলে কথা নয়, শ্রমিকদের বিয়েশাদি, অসুখ–বিসুখেও আবু তৈয়ব সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন বলে শ্রমিকেরা জানান। তাই তাঁরা নিজেদের অভিভাবক মনে করেন তাঁকে। গায়েহলুদে শ্রমিকেরা চাঁদা তুলে নববধূকে একটি সোনার হারও উপহার দেন। আবু তৈয়ব বলেন, তাঁরা ঘামের টাকায় আমার মেয়ের জন্য যে উপহার দিয়েছেন, তা অমূল্য।অনুষ্ঠানে তৈয়বের স্ত্রী, দুই ছেলে, বড় ছেলের স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরাও গানের তালে তালে উৎসাহ দিয়েছেন শ্রমিকদের। জড়িয়ে ধরে শ্রমিকদের সঙ্গে ছবিও তুলেছেন তাঁরা।

  • কারখানার কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর লোকমান হোসেন বলেন, ‘মনেই হয়নি আমরা শ্রমিক। তাঁরা মালিক। সব কারখানায় যদি এমন মালিক–শ্রমিক সম্পর্ক থাকত, তাহলে অনেক সংকট কেটে যেত।’

শর্টলিংকঃ