- ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ - https://universal24news.com -

দ্রুতগতির অ্যান্টিজেন টেস্ট যা পারে, যা পারে না


ইউএনভি ডেস্ক:

কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সবার ওপরে। কিন্তু টেস্ট করার সামর্থ্যের দিক থেকে দেশটি বড়-ছোট অনেক দেশ থেকেই পিছিয়ে আছে। শিগগিরই হয়তো এ অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।

আগস্টের শেষ দিকে ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) করোনাভাইরাস শনাক্তে জরুরি ব্যবহারের জন্য নতুন ক্রেডিট কার্ড সাইজের টেস্টিং ডিভাইস অনুমোদন করেছে, যার মূল্য পড়বে মাত্র ৫ মার্কিন ডলার। যেটি মাত্র ১৫ মিনিটে ফল দিতে পারবে এবং এ প্রক্রিয়ার জন্য কোনো ল্যাবরেটরি কিংবা কোনো বাড়তি মেশিনের প্রয়োজন হবে না। যুক্তরাষ্ট্র হেলথকেয়ার কোম্পানি অ্যাবটের কাছ থেকে এটি নেয়ার জন্য ব্যয় করছে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার।

যারা কিনা অক্টোবর থেকে প্রতি মাসে উৎপাদন ৫০ মিলিয়নে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে। এই টেস্ট নির্দিষ্ট প্রোটিনকে চিহ্নিত করে, যা অ্যান্টিজেন নামে পরিচিত এবং যা সংক্রমণের চরম পর্যায়ে থাকা ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পারে। এটি তখন করে যখন শরীরে ভাইরাসের পরিমাণ উচ্চ পর্যায়ে থাকে। এর উদ্ভাবকরা যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, এটা দারুণভাবে কার্যকর হতে পারে এবং মহামারীর গতিপথ বদলে দিতে পারে।

কারণ এটা বিস্তৃত আকারে উৎপাদন করা যায় এবং তাদের চিহ্নিত করতে পারে, যারা ভাইরাসের ছড়ানোর ক্ষেত্রে উচ্চতর ঝুঁকিসম্পন্ন। এ পদ্ধতি ভারত ও ইতালির মতো দেশেও টেস্টিং কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি।

অ্যান্টিজেন পরীক্ষা টেস্টিংয়ের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত মানদণ্ড ভাইরাল আরএনএ ব্যবহারকারী কৌশল পিসিআরের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুতগতিসম্পন্ন ও সাশ্রয়ী। কিন্তু অ্যান্টিজেন টেস্ট পিসিআর ভার্সনের মতো অত সংবেদনশীল নয়।

এই পার্থক্য বিশেষজ্ঞদের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, তারা উদ্বিগ্ন যে অ্যান্টিজেন টেস্ট কিছু সংক্রামক রোগীদের মিস করে যেতে পারে এবং যেসব দেশ করোনার সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে তাদের মাঝে বড় ধরনের প্রাদুর্ভাবের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আরেকটি দৃষ্টিভঙ্গিতে অবশ্য কম সংবেদনশীলতাকে একটি গুণ হিসেবে দেখা হয়। কারণ কিছু মানুষ যারা পিসিআর টেস্টে পজিটিভ এসেছে, কিন্তু তারা আর ভাইরাস ছড়াতে সক্ষম নয়। ফলে অ্যান্টিজেন টেস্ট সবচেয়ে বেশি সংক্রামক লোকদের চিহ্নিত করার দিকে তাদের মনোযোগ সরাতে পারে।

বর্তমানে অ্যান্টিজেন টেস্ট পরিচালিত হয় প্রশিক্ষিত পেশাদার কর্মী দ্বারা। কিন্তু কিছু কোম্পানি এমন ভার্সনের বিকাশ ঘটাচ্ছে, যা কিনা ঘরে ব্যবহারের জন্য উপযোগী। যেটা অনেকটা গর্ভধারণ অবস্থা পরীক্ষা করার মতো।

বিশেষজ্ঞ কেমিস্ট মার্টিন ব্রুক বলেন, টেস্টকে দ্রুত, সাশ্রয়ী ও সহজসাধ্য করা প্রয়োজন এবং আমি মনে করি, অ্যান্টিজেন টেস্ট সেখানে পৌঁছার একটি উপায়। এটি কোনোভাবেই নিখুঁত সমাধান নয়, এটা কেবল সেদিকে এগোনোর একটি দ্রুততম প্রক্রিয়া

টেস্টের ধরন ও কীভাবে কাজ করে?

কভিড-১৯ টেস্টের জন্য দুটি ক্যাটাগরি আছে: ডায়াগনস্টিক টেস্ট যেমন পিসিআর এবং অ্যান্টিজেন পরীক্ষা, যা সার্স-কোভ-২-এর অংশ শনাক্ত করে। আর অ্যান্টিবডি টেস্ট শনাক্ত করে সেই অণুগুলোকে, যা মানুষ উত্পন্ন করে ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার পর।

সংক্রমণের পর কয়েকদিন লাগে মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি বিকশিত হতে এবং সেরে ওঠার পর এ অ্যান্টিবডি প্রায়ই কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত রক্তে থেকে যেতে পারে। তাই ডায়াগনসিসের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডির ব্যবহার সীমিত।

উচ্চসংবেদনশীল পিসিআর টেস্ট সংক্রমিতদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে প্রায় ১০০ শতাংশ নির্ভুল, যদি তা সঠিকভাবে পরিচালিত করা যায়। কিন্তু এ ধরনের টেস্টের জন্য সাধারণত প্রশিক্ষিত কর্মী প্রয়োজন এবং ফল পাওয়াও তুলনামূলকভাবে সময়সাপেক্ষ। অন্যদিকে অ্যান্টিজেন টেস্টে ৩০ মিনিটের মধ্যেই ফল পাওয়া যেতে পারে। এর জন্য ল্যাবে যাওয়ার প্রয়োজন নেই এবং এ যন্ত্র সহজেই উৎপাদন করা যায়। যদিও এ দ্রুততা নির্ভুলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। একজনের শরীরে ভাইরাসের পরিমাণ কম থাকলে, সেক্ষেত্রে ফলস নেগেটিভ ফল আসতে পারে।

তবে অ্যাবটের অ্যান্টিজেন টেস্ট ৯৫-১০০ শতাংশ নির্ভুলভাবে ভাইরাস শনাক্ত করতে সক্ষম হবে যদি তা উপসর্গ দেখা যাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে করা যায়। কিন্তু এ হার ৭৫ শতাংশে নেমে আসে যদি তা এক সপ্তাহর বেশি সময় পর শনাক্ত করা হয়। এছাড়া অন্যান্য অ্যান্টিজেন টেস্ট যা যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহার করা হয় তা সফলতার হার ৮৪ থেকে ৯৮ শতাংশ, যদি লক্ষণ দেখা যাওয়ার এক সপ্তাহের মাঝে পরীক্ষা করা হয়। অন্যদিকে কোম্পানিগুলো এবং একাডেমিক গবেষণা ল্যাবগুলো পিসিআর পরীক্ষার চেয়ে দ্রুত, সাশ্রয়ী এবং অনেক সহজে ব্যবহার করা যায় এমন টেস্টগুলো করে দেখছে। যদিও তা অ্যান্টিজেন টেস্টের আকারে উৎপাদন করা হচ্ছে না।

কোন পরীড়্গা বলবে কেউ একজন সংক্রামক কিনা?

যদিও পিসিআর পদ্ধতি পরীক্ষা করতে পারে কেউ একজন সংক্রামক কিনা। পাশাপাশি এটি চিহ্নিত করতে পারে কোনো মানুষের ভাইরাস রয়েছে কিন্তু তারা সেটা ছড়াতে সক্ষম নয় তাও।

ভাইরোলজিস্ট ম্যারিওন কোপম্যানস বলেন, বিপরীতভাবে অ্যান্টিজেন টেস্ট কাদের উচ্চমাত্রার ভাইরাস আছে তা দ্রম্নত শনাক্তে সাহায্য করে, যাদের কিনা অন্যদের জন্য সংক্রামক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের সম্প্রদায় থেকে আলাদা করার ব্যাপারটিও আছে। তিনি বলেন, প্রশ্ন হচ্ছে সুরক্ষা সীমা কী? কারণ যখনই ভুল আসবে, তখনই গোটা ধারণাটি ধসে পড়বে।

বিশেষজ্ঞ কোপম্যানস বলেন, এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে কী পরিমাণ ভাইরাস থাকলে কোনো ব্যক্তি আর সংক্রামক থাকে না। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয় হবে যদি সবাই নিজেদের মানদণ্ডে নিজেরা এটি ব্যবহার করে।

কীভাবে দেশগুলো অ্যান্টিজেন টেস্ট ব্যবহারের পরিকল্পনা করতে পারে?

এপ্রিলে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে তখন ভারতের মতো বড় দেশ মাত্র দেড় লাখ মানুষকে পরীক্ষা করে, যা কিনা বিশ্বব্যাপী মাথাপিছু সর্বনিম্ন পরীক্ষা হারের একটি। ২১ আগস্ট দেশটি একদিনেই এক মিলিয়নের বেশি পরীক্ষা সম্পন্ন করে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবহারের অনুমোদন দেয়ার পরই এ মাইলফলক অর্জন করা সম্ভব হয়েছে, যা টেস্টিং সামর্থ্যকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছিল।

এখানে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সংক্রমণের শুরুর দিকে যখন মানুষের শরীরে ভাইরাসের পরিমাণ কম থাকে। ফলে যা করতে হবে তা হলো সপ্তাহপ্রতি একাধিকবার টেস্ট করা। যা কিনা সংক্রমিত মানুষকে সহজেই চিহ্নিত করতে সক্ষম হবে। এমনকি পিসিআর টেস্টের চেয়ে কম সংবেদনশীল হওয়ার পরও। কারণ নাকে ও গলায় যে পরিমাণ ভাইরাস আছে তা সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে।

নেচার থেকে সংক্ষেপে অনূদিত