‘আমার ছোট মামণিকে তো স্কুলে ভর্তি করতে পারছি না’ -দিলীপ অধিকারী


‘আমার বড় মামণি তো আমাদের ছেড়ে চলেই গেল। ওর পড়াশোনার পাট চুকে গেছে। কিন্তু এখন আমার ছোট মামণিকে তো স্কুলে ভর্তি করতে পারছি না। জানুয়ারির অর্ধেক শেষ হয়ে গেল। ছোট মামণি তো সারাক্ষণ মনমরা হয়ে ঘুরে বেড়ায়। আমরা যে কী যন্ত্রণার মধ্যে আছি, তা কাউকে বোঝাতে পারব না।’

কথাগুলো বলছিলেন আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর বাবা দিলীপ অধিকারী। নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী গত বছরের ৩ ডিসেম্বর আত্মহত্যা করে। অরিত্রীর বোন ঐন্দ্রিলা অধিকারী একই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগে স্কুল কর্তৃপক্ষের স্কুল থেকে ছাড়পত্র (টিসি) দিয়ে দেওয়ার হুমকি ও অরিত্রীর বাবার সঙ্গে শিক্ষকদের খারাপ ব্যবহারে অরিত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে শুরু থেকেই অভিযোগ করছেন দিলীপ অধিকারী। এ অভিযোগে তিনি মামলাও করেন। অরিত্রী যখন আত্মহত্যা করে তখন ঐন্দ্রিলার সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। বোনের মৃত্যুর পর ঐন্দ্রিলা পরীক্ষা দেবে না এবং ওই স্কুলে আর পড়বে না বলে জানিয়ে দেয়। ওর মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা পরিবারের পক্ষ থেকেও আর চাপ দেওয়া হয়নি। অরিত্রীর আত্মহত্যার পর সরকারের পক্ষ থেকে গঠিত বিভিন্ন তদন্ত কমিটির সদস্যরাও আশ্বাস দিয়েছিলেন, ঐন্দ্রিলাকে অন্য স্কুলে ভর্তি করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না।

অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী ও মা বিউটি অধিকারী তাঁদের ছোট মেয়ে ঐন্দ্রিলাকে রাজধানীর হলিক্রস উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছিলেন গত বছরের ৯ ডিসেম্বর।

দিলীপ অধিকারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার দুই মেয়েই পড়াশোনায় খুব ভালো ছিল। বোনের আত্মহত্যার পর ছোট মামণি মুষড়ে পড়ে। ওই স্কুলে সে আর যাবে না বলে জানিয়ে দেয়। আমরাও আর চাপ দিইনি। ওর শিক্ষাজীবনের একটি বছর যাতে নষ্ট না হয়, তাই বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর হলিক্রস উচ্চ বিদ্যালয়ে মেয়েকে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তির ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেছিলাম। এত দিন পর আজ বুধবার বোর্ড থেকে মেয়েকে সরকারি স্কুলে ভর্তি করব কি না, তা জানতে চেয়েছে।’

দিলীপ অধিকারী জানান, ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে এখন পর্যন্ত ঐন্দ্রিলার বিষয়ে কোনো শিক্ষক ফোন করেও খোঁজ নেননি।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঐন্দ্রিলাকে যে স্কুলে ওর মা-বাবা ভর্তি করতে চাচ্ছেন ওই স্কুলে ভর্তির বিষয়ে আমাদের হাত নেই। তারা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে। আমরা হলিক্রস কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম। তারা ভর্তি করতে পারবে না বলে জানিয়েছে। সরকারি স্কুলে ভর্তির বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করতে পারব।’

দিলীপ অধিকারী বলেন, ‘দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠানেই তো মেয়েদের ভর্তি করেছিলাম। কী লাভ হলো? বড় মামণিকে তো বাঁচাতে পারলাম না। ছোট মামণিকে আর ভিকারুননিসায় পাঠাতে চাই না। ও ওখানে গিয়ে স্বাভাবিক থাকতে পারবে না। এখন আমার ছোট মামণির জন্য নিরাপদ একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চাই।’


শর্টলিংকঃ