ধানচাষ ছেড়ে আম বাগানেই লাভ দেখছেন কৃষকরা


নিজস্ব প্রতিবেদক :
ধানচাষ ছেড়ে আম বাগানেই লাভ দেখছেন কৃষকরা। তাই রাজশাহীতে বাণিজ্যিকভাবে আমের বাগান বাড়ছে। ধানচাষে খরচ এখন বেশি।  শ্রমিকও পাওয়া কঠিন। তাই কম খরচে বেশি লাভের আশায় কৃষকরা আমের দিকে ঝুঁকেছেন।  গেল সাত বছরে রাজশাহী অঞ্চলে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে আমবাগান।
ফসলের জমিতে আমবাগান

আম উৎপাদনের জন্য এতদিন খ্যাতি ছিলো রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার। এ তিন জেলা ছাড়াও নাটোর জেলা নিয়ে রাজশাহী কৃষি অঞ্চল গঠিত। লাভজনক হওয়ায় আমবাগান তৈরি করছিলেন কৃষক। তাছাড়া গত এক দশকে এই অঞ্চলের বাইরেও ছড়িয়েছে আমবাগান। ফলে দাম কমেছে রাজশাহীর আমের।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি দফতরের হিসেবে, সর্বশেষ গত ২০১৭-২০১৮ কৃষি বর্ষে এই অঞ্চলে আমবাগান ছিল ৭০ হাজার ৩৪৬ হেক্টর। তা থেকে আম উৎপাদন হয় ৮ লাখ ৬৬ হাজার ৩৬১ টন। এর আগে ২০১১-২০১২ কৃষি বর্ষে রাজশাহী অঞ্চলে আমবাগান ছিল ৪২ হাজার ৪১৭ হেক্টর। সেইবার আম উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩ টন।

এরপর ২০১২-২০১৩ কৃষি বর্ষে ৪৮ হাজার ৬১০ হেক্টর বাগানে উৎপাদন হয় ৬ লাখ ১ হাজার ১৩৪ টন আম। ২০১৩-২০১৪ কৃষি বর্ষে আমবাগান বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজার ৮৯১ হেক্টর। উৎপাদন বেড়ে ওই বছর দাঁড়ায় ৫ লাখ ৩৯ হাজার ২৫৫ টন। ২০১৪-২০১৫ কৃষি বর্ষে ৫৪ হাজার ৭২২ হেক্টর বাগানে আম উৎপাদন হয় ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৯৩৬ টন।

২০১৫-২০১৬ কৃষি বর্ষে ৫৭ হাজার ৮৬৪ হেক্টর বাগানে উৎপাদন হয় ৬ লাখ ৪২ হাজার ১৮৩ টন আম। এছাড়া ২০১৬-২০১৭ কৃষি বর্ষে ৬৬ হাজার ৩০০ হেক্টর আম বাগান থেকে ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৮৪৯ টন আম উৎপাদন হয়।

আমের গাছে গাছে মুকুল

এদিকে মুকুলের ভারে নুয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের আমবাগানগুলো। চারদিকে মধুর ঘ্রাণ। কেবলই ভ্রমরের গুঞ্জন। জানুয়ারির শেষভাগ থেকেই শুরু হয়েছে মুকুল আসা, আসবে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। পরিচর্যায় বাগানে বাগানে আমচাষি ও বাগান মালিকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন জানান, বর্তমানে এ অঞ্চলের প্রায় ৭০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। চলতি ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সব গাছে মুকুল চলে আসবে। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুযোর্গ না এলে এ বছর ভালো ফলনের প্রত্যাশা করছেন তারা।

এই ফল গবেষক আরও বলেন, এখন চাষিরা অনেক বেশি সচেতন। বছরজুড়েই বাগানের পরিচর্যা চলছে। বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষ হচ্ছে আম। এসেছে হাইব্রিডসহ নানান আমের জাত। ফলে এখন আর অনইয়ার বা অফ ইয়ার নেই।

এই মুহূর্তের বাগান পরিচর্যার বিষয়ে তিনি বলেন, মুকুল আসার আগেই প্রতি লিটার পানিতে আধা মিলিলিটার ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের তরল এবং দুই গ্রাম ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। আম গুটি হওয়ার পরও আরেক দফা একই মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া আমের বয়স ৪৫ দিন হলে আগ্রহী চাষিরা আরেক দফা কীটনাশক প্রয়োগের পর ফ্রুট ব্যাগিং করতে পারেন।

    মুকুলের হাতছানিতে বাম্পার ফলনের আশা কৃষকদের

এদিকে দেশে রেকর্ড পরিমাণ আম উৎপাদন হলেও রফতানি তালিকায় নেই বাংলাদেশ। সীমিত হলেও গত কয়েক বছর ধরেই এই অঞ্চল থেকে আম রফতানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। আর এ জন্য রাসায়নিক মুক্ত আম উৎপাদন করছেন চাষিরা। ভালো দাম পাওয়ায় এবারো প্রস্তুত হচ্ছেন তারা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল ইসলাম বলেন, আগে কেবল রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম উৎপাদন হতো। এখন সারা দেশেই ছড়িয়েছে আম চাষ। উৎপাদনও হচ্ছে ব্যাপক। ফলে বাজারে আমের দাম কম পাচ্ছেন বাগান মালিক। তবে এখন সরকারের প্রধান লক্ষ্য আম রফতানি।


শর্টলিংকঃ